ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কর্ণফুলী টানেলের কর্মযজ্ঞ চলছে

কর্ণফুলী টানেলের কর্মযজ্ঞ চলছে

P-1-5333333

নিউজ ডেক্স : বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি লেইন টানেল নির্মাণকে ঘিরে বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দেশি–বিদেশি ব্যক্তিরা এ কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছেন। টানেল বোরিং মেশিন বা টিবিএম নামে যে বৃহদাকার যন্ত্রটি দিয়ে সাগরের তলদেশে সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হবে, সেটা চীন থেকে সাগরপথে শীঘ্রই বাংলাদেশে আসবে। আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানেল খননের মূল কাজ উদ্বোধন করার কথা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে কর্ণফুলী নদীর ওপার এলাকার দ্রুত যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেতু পরিবহন কর্তৃপক্ষ ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর ২ কিলোমিটার ভাটিতে টানেল নির্মাণ কাজের এলাইনমেন্ট করা আছে। টানেলটি দুই লেন বিশিষ্ট এবং লম্বায় হবে ৩ হাজার ৩১৫ মিটার। এর সাথে ফ্লাইওভার থাকবে ৬৩৭ মিটার এবং সংযোগ সড়ক থাকবে ৫,৯৫০ মিটার। সরকার ও চীনের দি এক্সপোর্ট–ইমমোর্ট ব্যাংক অব চায়না এতে অর্থায়ন করছে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে হাতে নেওয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালে জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছর ৬ নভেম্বর প্রকল্পের ঋণচুক্তি হয়েছে। চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ টানেল নির্মাণ কাজ করছে। এছাড়া নির্মাণ কৌশলে শিল্ড ড্রাইভেন মেথড এবং ডিজাইন রিভিউ ও নির্মাণ তদারকি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকছে এসএমইসি–সিওডব্লিউআই জেভি অ্যান্ড এসোসিয়েটস।

এ ব্যাপারে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ আজাদীকে বলেন, যত শীঘ্রই সম্ভব আমরা খনন কাজ শুরু করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। টিবিএম মেশিন প্রস্তুতের পর চীনের সাংহাই বন্দর থেকে বাংলাদেশের পথে রওনা হচ্ছে। টিবিএম পৌঁছার পর সেপ্টেম্বরের শেষ কিংবা অক্টোবরের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী টানেলের খনন কাজ উদ্বোধন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক প্রকৌশলী বলেন, ইতিমধ্যে টানেলের খনন কাজ শুরুর জন্য প্রিলিমিনারি যে সমস্ত অবকাঠামো করার দরকার সেগুলো ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অক্সিলারি স্ট্রাকচার কাজের মধ্যে নদীর তলদেশে খননের জন্য ভূ–পৃষ্ঠ থেকে ২৫ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ওয়ার্কিং শেফটের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। এ ওয়ার্কিং শেফটেই বোরিং মেশিন বসিয়ে খনন কাজ করা হবে। এছাড়া ভূ–গর্ভস্থ স্ট্রাকচারাল উপাদানগুলোকে ধরে রাখার স্থায়ী পদ্ধটি ১২ দশমিক ২ মিটার ডায়াফ্রাম ওয়ালের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজও চলছে। উভয় পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি জেটি। সবগুলো কাজই মোটামুটি শেষ পর্যায়ে আছে। এ কাজে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আড়াইশ কনসালটেন্টসহ ১ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, চীনে প্রস্তুতের পর ইতিমধ্যে বোরিং মেশিনটি নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের পথে রওনা হওয়ার অপে ায় আছে। চীনের সাংহাই বন্দর থেকে জাহাজের মাধ্যমে এটি দেশে পৌঁছার কথা। এ জন্য প্যাকেজিং থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৮ জুলাই এটি চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা।

টিবিএম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিবিএম মেশিনটি চারতলা ভবনের সমান একটি মেশিন। মেশিনটি পশ্চিম প্রান্তের সুড়ঙ্গে প্রবেশ করানো হবে। সেখান থেকে মেশিনটির মাধ্যমে সুড়ঙ্গের কাজ করতে করতে আনোয়ারা অংশ পর্যন্ত যাবে।

প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন কয়েশ মিটার এলাকা জুড়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন অংশে মাটি, পাথর, ইট ও লোহার স্তূপ। পাশেই অবস্থিত বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প কার্যালয় ও সাইট অফিস।

প্রকল্প এলাকায় বহুতল ভবন সমান সুউচ্চ লং ভেহিক্যাল ক্রেনের পাশাপাশি ছোট ক্রেনগুলো পৃথকভাবে বিভিন্ন অংশের মাটি খননের কাজ চালাচ্ছে। এসব মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে ডজনখানেক হেভি লোডেড ট্রাক। শ্রমিকদের অন্য একটি দল সড়ক নির্মাণের জন্য বালি ও ইট বিছানোর কাজ চালাচ্ছে। সেখানেও অর্ধশত শ্রমিক কাজে নিয়োজিত।

এদিকে পতেঙ্গা অংশে মাটির নিচ থেকে টানেল খনন কাজ শুরুর জন্য যে মূল অবকাঠামো বা ওয়ার্কিং শেফট ব্যবস্থা নির্মাণ করা প্রয়োজন সেটার নির্মাণ কাজও প্রায় শেষের পথে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের একটি দল ওয়ার্কিং শেফট এলাকায় ভূ–পৃষ্ঠের নিচের অংশে ইট–সিমেন্টের ওয়াল, অবকাঠামো ও পিলার স্থাপনের পাশাপাশি উপরিভাগের অংশে কয়েক মিটার এলাকা জুড়ে লোহার বেষ্টনী তৈরি করছে। এসবের মূল ভিত্তির অধিকাংশ কাজই প্রায় শেষ।

ওয়ার্কিং শেফট নির্মাণ কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, নিচে ১২০ ফুট পর্যন্ত গভীর করা হয়েছে। ওই গভীরতার মধ্যেও কয়েকজন শ্রমিককে কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। এছাড়া ছোট আকারের কয়েকটি ক্রেন নিচে নেমে মাটি সরানোর কাজ করছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, ওয়ার্কিং শেফট নির্মাণ কাজ শেষ হলে এখান থেকে বোরিং মেশিনের মাধ্যমে মাটির তলদেশে খনন কাজ শুরু হবে। যন্ত্রটি মাটির তলদেশে থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টানেল নির্মাণ করবে। এ সময় খনন কাজে যেসব মাটি বেরুবে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে চলে আসবে। এভাবে বোরিং মেশিনটি পানির নিচ দিয়ে সাড়ে ৩ কিলোমিটার খনন করবে। সুড়ঙ্গটির অভ্যন্তরীণ ব্যাস থাকবে ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

জানা গেছে, প্রকল্পের পূর্ব প্রান্তে আনোয়ারা অংশে সাইট ক্যাম্প ও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ কাজের পাশাপাশি মাটি ভরাটের কাজও একই সময় চলছে। এর আগে চীনে নির্মাণাধীন খনন যন্ত্রটি প্রস্তুতের পর গত মে মাসে দেশে পৌঁছার কথা ছিল।

বাংলাদেশ সেতু পরিবহন কর্তৃপক্ষ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে বলেছে, সদ্যসমাপ্ত ২০১৭–১৮ অর্থবছরে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটির ভৌত নির্মাণ কাজ ১৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া টানেল নির্মাণের জন্য ৩৭৪ দশমিক ৭৭ একর ভূমির মধ্যে ২৯৬ দশমিক ২৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরে কর্ণফুলী টানেলের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

কর্মকর্তারা জানান, ওয়ান সিটি টু টাউন মডেল হবে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের। চীনের সাংহাই শহরের ন্যায় এটি গড়ে উঠছে। প্রস্তাবিত সোনাদিয়া/মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, চীনা বিশেষায়িত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাব ও এলএনজি টার্মিনালের সাথে সরাসরি এই টানেল যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এ অঞ্চলটিতে ব্যবসা–বাণিজ্য ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!