এলনিউজ২৪ডটকম : প্রত্যন্ত এক গ্রাম। পাকা রাস্তার পর মাটির পথ পেরিয়ে এক বসতঘরের সামনে। তখনও বসতঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসছিল কান্নার আওয়াজ। ঘরের ভেতর মা-বাবা ও সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে সান্তনা দিচ্ছেন কয়েকজন। তবুও থামছে না কান্না। মা নুর জাহান আর্তনাদ করে বলছিলেন, আমার ছেলেকে এসিড মেরে জ্বালিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই। আমাদের জায়গা-জমি, ধন-সম্পত্তি কিছুই নেই। অন্যরা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছে। আমাদের সংসারে টাকা-পয়সার অভাব, তাই ছেলেকে ছোটকাল থেকে চাকুরিতে দিয়ে দিয়েছি।
বুধবার (৬ জুলাই) বিকেলে লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সড়াইয়া বলির জুম এলাকায় এসিডে দগ্ধ হয়ে নিহত মো. সাদেকের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হয়।
নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ৪ ভাই ও ২ বোন। চলতি সনের ৭ মার্চ বিয়ে করেন নিহত সাদেক (২০)। কনে নাছিমা আক্তার (১৮)। সে একই উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের কালোয়ার পাড়ার মোহাম্মদ মিয়ার কন্যা। বিয়ের ৪ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই স্বামীহারা হয়েছেন স্ত্রী নাছিমা আক্তার। স্বামীকে হারিয়ে শুধু বিলাপ করছেন স্ত্রী। অন্যদিকে ছেলে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সাদেকের মা-বাবা। প্রতি সপ্তাহ বা দশদিন পর বাড়িতে আসতেন সাদেক। ঘটনার প্রায় ১২ দিন পূর্বে কর্মস্থল থেকে বাড়িতে এসেছিলেন ভোটার হওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দিতে।
নিহত সাদেকের পিতা বজলুর রহমান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে সাদেক প্রায় সময় মোবাইলে ফোন করে খোঁজখবর নিত। আমার ছেলে খুব ভালো ছেলে ছিল। ছোটবেলা থেকে চাকুরির আয় দিয়ে নিজে চলত, আমাদেরও চালাত। আমার ছেলে আজ নাই। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। দুনিয়ার সবকিছু দিলেও আমার এই ক্ষতি পূরণ হবে না।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের মালেক মেম্বারের ইটভাটা এলাকায় দুর্বৃত্তের ছোড়া এসিডে দগ্ধ হয় মো. সাদেক। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গত ৫ জুলাই নিহতের ভাই মো. শাহাজাহান (২৭) বাদী হয়ে মো. নেজাম উদ্দিন (৩২) ও মো. পারভেজ (২৩) নামে দুইজনকে আসামী করে সাতকানিয়া থানায় মামলা রুজু করেছেন।