নিউজ ডেক্স : আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সম্মেলন এগিয়ে আসায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা যুক্ত হচ্ছেন আর কারা বাদ পড়ছেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পদ প্রত্যাশীদের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে আলোচনায় আছেন সাত নেতা। কে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন, নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে কে কে যুক্ত হচ্ছেন এই আলোচনা রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম-সর্বত্র। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন ৪জন। এছাড়া আছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। তিনি আবারও প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে থাকবেন বলে জানা গেছে।
বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
দলীয় একটি সূত্র বলছে, তাঁরা প্রত্যেকেই বর্তমান কমিটিতে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী কমিটিতে তাঁরা যে থাকছেন সেটা অনেকটা নিশ্চিত। সাংগঠনিক কর্মদক্ষতার গুণে আগামী কমিটিতে আরো ভালো পদে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এদের পাশাপাশি এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জ্যেষ্ঠপুত্র আইটি বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান রুহেলও ভালো পদে আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে মাঈনুদ্দিন হাসানের নাম দক্ষিণ জেলার নতুন কমিটিতেও শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় অথবা দক্ষিণ জেলার কমিটিতে তাঁকে এবার গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রধান চমক থাকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। প্রতিটি সম্মেলনেই এটা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। দলের সব স্তরের নেতাকর্মীর দৃষ্টি এখন এই পদের দিকে। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে নানামুখী আলোচনা, বিশ্লেষণ।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্যদের তালিকায় ৮ জন নেতার নাম আসছে বারবার। এতে চট্টগ্রামের এক শীর্ষ নেতার নামও রয়েছে। দলের ভেতরে এই নেতাদের সমর্থকরা যেমন আলোচনা করছেন, পাশাপাশি দলের বাইরেও রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। সম্মেলনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই মানুষের জানার আগ্রহ বাড়ছে, আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন? বর্তমানে যিনি আছেন তিনি বহাল থাকছেন, নাকি এই পদে পরিবর্তন আসছে?
এখন পর্যন্ত যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তাঁদের মধ্যে এগিয়ে আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে সাধারণ সম্পাদকের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সিদ্ধান্তের ওপরই সবকিছু নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। কাদের ছাড়াও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামও আলোচনায় রয়েছে।
চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতির সোনালি অর্জন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই তিন নেতা দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন। তিনজনই ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এদের মধ্যে বাবু ও মহিউদ্দিন মারা গেছেন। এখনো নেতৃত্বে আছেন মোশাররফ। বাবু ও মহিউদ্দিন মৃত্যুর আগে নিজেদের জ্যেষ্ঠ সন্তানদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান বাবুর মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠ সন্তান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে এমপির মনোনয়ন দিয়ে প্রথমে ভূমি প্রতিমন্ত্রী, পরে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়। গত কমিটিতে করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
অপরদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকাকালীন তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তিনি মারা যাওয়ার পর কোতোয়ালী আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে করা হয়েছে শিক্ষা উপমন্ত্রী। একইভাবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও চান, তিনি জীবিত থাকাকালীন তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তানকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবার দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে পারেন। একইভাবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, রূপালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আবু সুফিয়ান ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলন হবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাউন্সিল অধিবেশনে পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। সাধারণত দেখা যায়, কাউন্সিলে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের পর কাউন্সিলররা পুরো নির্বাচনের দায়িত্ব দেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র : দৈনিক আজাদী