Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | শনিবার শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহুল প্রত্যাশার মেগা প্রকল্পের কাজ

শনিবার শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহুল প্রত্যাশার মেগা প্রকল্পের কাজ

1514567751_36

নিউজ ডেক্স : আগামী শনিবার শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহুল প্রত্যাশার মেগা প্রকল্পের কাজ। গতকাল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের যৌথ বৈঠকে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে নগরীর ষোলটি খাল পরিষ্কার এবং মাটি খননের কাজ শুরু হবে। একই সাথে চলবে ড্রেন পরিষ্কারের কাজ। দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে। লোকবল বা টিমের অভাবে যাতে কোথাও কাজে সংকট তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আসন্ন বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতা কবলিত এলাকাগুলোর অবস্থা যাতে খারাপ না হয়ে পড়ে সেজন্য সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতায় নাকাল চট্টগ্রাম মহানগরীর লাখো মানুষ। নগরীর বিস্তৃত এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঘন্টা কয়েকের ভারী বর্ষণে নগরী তলিয়ে যায়। শুধু বৃষ্টির পানি নয়, জোয়ারের পানিতেও যখন তখন ডুবে যায় নগরী। জোয়ার ভাটা হিসেব কষে নগরবাসীকে পথ চলতে হয়। কোটি কোটি টাকার সম্পদহানি হয় ফি বছর। নগরীর বিস্তৃত এলাকার নিচতলার বাসিন্দাদের জীবন প্রতি বর্ষায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নানাভাবে চেষ্টা করেও চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ভয়াল এই দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে নেয়া হয়েছে বহুল আলোচিত এ মেগা প্রকল্প।

বৃহৎ এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে ইতোমধ্যে ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমঝোতা স্মারক স্বা রিত হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রকল্পটির কাজ করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস–কেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বৈঠক করে কর্মপন্থা ঠিকঠাক করে নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দেশের দুইটি শীর্ষস্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্প্রেক্ট্রা লিমিটেড এবং করিম গ্রশুপকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কথা রয়েছে। তবে শুরুতে এই দুইটি প্রতিষ্ঠান এবং এদের অধীনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করা হচ্ছে। আগামী শনিবার বহুল প্রত্যাশার এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করছে সেনাবাহিনী।

প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩৬টি খাল পরিস্কার করে ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ এবং ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি খনন করা হবে। খরচ হবে ৫৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। খালের দুপাশে ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ব্যয় হবে ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। খালের ওপর ৪৮টি সেতু ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৩৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ৪২টি বালির ফাঁদ (সিল্ট ট্র্যাপ) করা হবে ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। এছাড়া বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য তিনটি জলাধার ও খালের পাড়ে রাস্তা নির্মাণ হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হবে।

তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটিতে মোট ৩৬টি খাল থাকলেও শনিবার এক যোগে ১৬টি খালে কাজ শুরু হবে। খালগুলো হচ্ছে চাক্তাই খাল, বির্জা খাল, রাজাখালী খাল–১, রাজাখালী খাল–২, রাজাখালী খাল–৩, মির্জা খাল, মরিয়মবিবি খাল, হিজরা খাল, মহেশখাল, কলাবাগিচা খাল, ডোমখাল, বামুনশাহী খাল (কোদালাকাটা খাল, কাটা খাল, সানাইয়া খাল, মধুছড়া খালও বামুনশাহী খালের অন্তর্ভুক্ত), চাক্তাই ডাইভারসন খাল (বাকলিয়া খাল নামেও পরিচিত), নোয়া খাল (বাইজ্জা খাল ও বালু খাল নামেও পরিচিত), খন্দকিয়া খাল ও নাছির খাল। এই খালগুলোর কাদা পরিস্কারের পাশাপাশি খালের সাথে সংযুক্ত নালাগুলোও পরিস্কার করা হবে। এতে নগরীর চান্দগাঁও, বৃহত্তর বাকলিয়া, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বকশির হাট, দেওয়ান বাজার, চকবাজার, পাঁচলাইশ, হালিশহর, আগ্রবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা প্রভৃতি এলাকার উপর দিয়ে যেসব খাল প্রবাহিত হয়েছে সবগুলো পরিস্কার এবং খনন করা হবে।

গতকাল সকালে সিডিএ কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৈঠক হয়েছে। সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্প্রেক্ট্রা লিমিটেড এবং করিম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শনিবার থেকে কাজ শুরুর কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়। একই সাথে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত খালগুলোতে কাজ শুরু করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মানুষের ভোগান্তি যাতে কম হয় সেদিকে সজাগ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ একটি পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!