Home | ব্রেকিং নিউজ | লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অভিমত

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অভিমত

10

এলনিউজ২৪ডটকম : নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কোন প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে এলাকার উন্নয়ন হবে তা নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। শুধু উন্নয়ন না, প্রার্থীদের পূর্বের কর্মকান্ড নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। গ্রামের চায়ের দোকানগুলো যেন টকশোস্থল। দিন-রাত সমানতালে এক এক জন এক এক প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে নিয়ে নানা কথাবর্তা বলছেন।

আগামী ২৪ মার্চ ৩য় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বড়হাতিয়ার ভোটার আবদুল মাজেদ বলেন, এলাকার উন্নয়নে কাজ করবে যারা করবে তাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব। তবে অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার কোন খোঁজ খবর রাখেন না। এমন প্রার্থী যাতে নির্বাচনে জয়লাভ করতে না পারেন এমন কামনা করেন তিনি।

আমিরাবাদের ভোটার সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ভোট আসলে অনেক জনপ্রতিনিধি ও জনদরদীকে এলাকায় দেখা যায়। কিন্তু ভোট শেষে কেউ কারো খবর রাখে না। আশা করি এমন প্রতিনিধিকে এলাকাবাসী ভোটের মাধ্যমে প্রতিহত করবে।

পদুয়ার ভোটার নজির আহমদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও ভোটারদের মাঝে তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। অন্য উপজেলা নির্বাচন দেখে তা মনে হচ্ছে। তবে লোহাগাড়ায় ভোটের দিন ভোটারদের কেমন আগ্রহ তা প্রত্যক্ষ করা যাবে।

চরম্বার ভোটার খানে আলম বলেন, মাদক, দুর্নীতি, অন্যায় ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যারা কঠোর অবস্থান নিবেন তাদেরকে ভোট দেব। তবে প্রার্থীরা ভোটের আগে যেভাবে এলাকার খবর রাখেন, ভোটের পরেও তেমনভাবে খবর রাখেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে এমন প্রত্যাশা থাকবে।

কলাউজানের ভোটার হায়দার আলী বলেন, এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। তাই ভোটাররা দল ও প্রতীকের দিকে না তাকিয়ে, প্রার্থীদের অতীত কর্মকান্ড যোগ-বিয়োগ করে, সততা, ব্যক্তিগত ইমেজ ও প্রয়োজনে সুখে-দুঃখে যাঁকে কাছে-পাশে পাব তাঁকেই ভোট দেবেন বলে অভিমত প্রকাশ করছে।

পুটিবিলার ভোটার বজলুর রহমান বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলেনি এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সবদল অংশগ্রহণ না করায় প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়ালেও ভোটারদের নিরুত্তাপ আচরণে হতাশ তারা।

লোহাগাড়া সদরের ভোটার আফজাল হোসেন চৌধুরী বলেন, অনেক প্রার্থী তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে ভোটারদের বাড়ি থেকে নিজ যাতায়াত খরছে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যান। ভোট না দেয়ার আগ পর্যন্ত ভোটারদের কদরের শেষ নেই। তবে ভোট দেয়ার পর তাদের সকল কদর পুরিয়ে যায়। পরবর্তী ৫ বছরে কেউ কারো খোঁজ রাখেন না।

আধুনগরের ভোটার সাইফুল ইসলাম রবি বলেন, মানুষ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে আগামী দিনে আরও সুখ-শান্তিতে থাকতে চায়। গ্রামের মানুষ তো ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে প্রস্তুত। গ্রাম-বাংলার মানুষ সারাদিন খেটে যে আয় রোজগার করে তাতে সংসার চালিয়ে দু’মুঠো ভাত খেয়ে মাথার ওপর বিদ্যুতের পাখা চালিয়ে ঘুমায় আর স্বস্তিÍ বোধ করে। নির্বাচনের দিন যাতে কোন সহিংস ঘটনা না ঘটে তার দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরী।

চুনতির ভোটার মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে একটি শ্লোগান সবার মুখে শোনা যেত “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব”। এখন কিন্তু সে শ্লোগানটি পরিবর্তন হয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে “আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি নেব”। এক সময় স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে গ্রামের ভোটার থেকে শিশুরা পর্যন্ত আনন্দ উৎসবে মেতে উঠত। এখন কিন্তু সেই উৎসব ও আনন্দ আর নেই। চায়ের দোকানগুলোতে জমজমাট বেঁচা-বিক্রি ও আড্ডা চোখে পড়ে না। সকলেই শংকিত থাকে সংঘাত ও সংঘর্ষ নিয়ে। নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি আবেদন, নির্বাচনের নামে তামাশা করে লাভ কি? টেন্ডার প্রকিয়ার মাধ্যমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা করলে আমজনতা অনেক ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে। তারপরও লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমনটি অভিমত রেখেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যথাক্রমে খোরশেদ আলম চৌধুরী (নৌকা), জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল (আনারস), এস এম ছলিম উদ্দিন চৌধুরী খোকন (দোয়াত কলম), মাহমুদুল হক পেয়ারু (মোটরসাইকেল), ভাইস চেয়ারম্যান পদে যথাক্রমে এম ইব্রাহিম কবির (টিউবওয়েল), মিজানুর রহমান (মাইক), এম এস মামুন (চশমা) ও আরমান বাবু রোমেল (তালা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যথাক্রমে কলাউজানের জেসমিন আক্তার (ফুটবল), লোহাগাড়ার জেসমিন আক্তার (কলসী), পারভিন আক্তার (প্রজাপতি) ও শাহিন আক্তার সানা (হাঁস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লোহাগাড়ায় ৯ ইউনিয়নে সর্বমোট মোট ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!