Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | লাইব্রেরিয়ান মায়ের সামনেই আলমিরা পড়ে শিশুপুত্রের মৃত্যু

লাইব্রেরিয়ান মায়ের সামনেই আলমিরা পড়ে শিশুপুত্রের মৃত্যু

ctg-school-student-dead-01-395x525

নিউজ ডেক্স : দুই পাশে দুই ছেলেকে নিয়ে ভোরে স্কুলে যাওয়া প্রতিদিনের কাজ মিন্টু সরকারের। ছেলেদের স্কুলই তার কর্মস্থল। এগারো বছরের জয়দিব আর আট বছরের অভিজিৎ মায়ের নিত্যসঙ্গী। দুই দিন পর পরীক্ষা তাই গতকাল ক্লাশ ছিল না। বাসায় কেউ না থাকায় প্রতিদিনের মতো ছেলেকে সাথে নিয়েই গিয়েছিলেন মিন্টু। কথা ছিল দুপুরে স্কুল ছুটি হবার পর ছোট ভাইকে নিয়ে মায়ের হাত ধরেই বাসায় চলে যাবে। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। এরমধ্যেই মিন্টু সরকারের জীবন চলার সব হিসাব নিকাশ ওলট–পালট হয়ে গেলো। চোখের সামনে ছেলেটি আলমিরার নীচে চাপা পড়ে মারা যেতে দেখেও কিছুই করতে পারেনিন হতভাগী এই মা। দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি যেতে পারলেন না। কখনোই আর লাগানো যাবে না সন্তানদের জোড়ার বাঁধন।

নগরীর পাথরঘাটা সেন্ট প্লাসিডস স্কুল এন্ড কলেজের লাইব্রিয়ান মিন্টু সরকারের বাড়ি আনোয়ারা পরৈকোড়া গ্রামে। স্বামী দেবাশীষ দত্ত আনোয়ারা মরিয়ম হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সাথে ফিরিঙ্গীবাজার হাজী কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন মিন্টু। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় কাঠের বেঞ্চে সহকর্মীদের কাঁধে মাথা ফেলে চোখ বন্ধ করে আছেন মিন্টু। কিছুক্ষণ পর পর শিশুর মতো চিৎকার করে কান্না করছিলেন। মিন্টুর অঝোর কান্নায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না সহকর্মীরা। ভারী হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ। একপর্যায়ে জ্ঞান হারালে সহকর্মীরা মিন্টুকে চিকিৎসকের কক্ষে নিয়ে যান।

হাসপাতালের একপাশে চুপচাপ বসে আছেন ছোটভাই অভিজিৎ। মা আর আতœীয় স্বজনদের কান্না দেখে আট বছরের অভিজিৎ বুঝেই নিয়েছে জয়দিব আর কখনো তার হাত ধরে স্কুলে যাবে না। বললো, মায়ের সাথে লাইব্রেরিতেই ছিল জয়দিব। দুইদিন পর পরীক্ষা। তাই আজ ওর ক্লাশ ছিল না। আমি ক্লাশে ছিলাম।

নিজের অজান্তে অবুঝ মনে রক্তক্ষরণ হলেও কিভাবে কি হয়েছে তা হয়তো পুরোপুরি বুঝতে পারছে না অভিজিৎ।

সহকর্মীরা জানান, মিন্টু সরকার সেন্ট প্লাসিডস স্কুলে লাইব্রিয়ান পদে চাকুরি করেন। বড় ছেলে জয়দিব একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে আর ছোট ছেলে অভিজিৎ তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। গতকাল জয়দিবের ক্লাশ ছিল না। বাবা কর্মস্থল আনোয়ারায় চলে গেছেন। মা আর ছোট ভাইটিও স্কুলে যাবে। অগত্য আর কি করা। মায়ের সাথে স্কুলের নীচের তলায় লাইব্রেরিতেই ছিল জয়দিব। চেয়ারে বসে কাজ করছিলেন মা মিন্টু সরকার। জয়দিব আলমিরায় রাখা বই দেখছিলো কৌতূহল বশে। হঠাৎ বিকট শব্দে পড়া দুই তিনটি আলমিরার নীচে চাপা পড়ে জয়দিব। ছেলের মারা যাবার দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও কিছুই করার ছিল না তাঁর। স্কুলের সহকর্মী আর কর্মচারীরা আলমিরার নীচ থেকে জয়দিবকে উদ্ধার করে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যান। মৃত্যুর সংবাদ শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন মিন্টুর স্কুলের সহকর্মীরা।

সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল রিনকো কস্টা জানান, মিন্টু সরকার লাইব্রিয়ান কাম শিক্ষক হিসাবে চাকুরি করেন। নীচের তলায় স্কুলের লাইব্রেরি অবস্থিত। ঘটনার সময় মিন্টু নিজেই লাইব্রেরিতে ছিলেন। আলমিরা কিভাবে পড়েছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। মিন্টুই বলতে পারবে কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে।

নাতির মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিকেল পাঁচটায় আনোয়ারা থেকে ছুটে আসেন জয়দিবের দাদা তারাপদ দত্ত। জরুরি বিভাগের সামনে আসতেই বসে পড়েন মেঝেতে। বিলাপ করতে করতে বললেন, কয়দিন পর পূজার ছুটিতে বউ আর নাতি বাড়িতে যাবার কথা ছিল। বলি দিতে ছাগলও নিয়েছি। আমার ছেলে আর বউকে কিভাবে বাঁচবে। ঈশ্বর এত বড় শাস্তি কেনো দিল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম জানান, আহত শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

-পূর্বকোণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!