Home | সাহিত্য পাতা | মেঘের আড়াল থেকে (পর্ব- ২)

মেঘের আড়াল থেকে (পর্ব- ২)

418

শীলা ঘটক : রাতে বিছানায় বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো সেই কথাগুলো। কে হতে  পারে এই মেঘবতী!  মনের  মধ্যে তোলপাড় করতে লাগলো। সুরমা? কিন্তু সুরমা তো এখানকার এক কলেজের বাংলার প্রফেসর। সেইদিনের সেই ঘটনার পর সরে এসেছিল আকাশ চিরদিনের জন্য। আর কোনদিন ওদের সাথে দেখাও করেনি।  তবে কে এই মেঘবতী?  কলেজের আড্ডাটা অনেক সময় গঙ্গার ধারে, লেকের ধারেও হত। সুরমা, অরুণিমা, কাজরী, স্নেহা, রুদ্র, স্নিগ্ধা, শ্রেয়া, তিতির, রঙ্গন, কৌশিক, পল্লব…… সবার কথা মনে পড়ছে। সবাই কে কেমন আছে আজ আর জানে না আকাশ। আজ আর কারোর সাথে তার কথা হয়না, জানতে ইচ্ছেও হয়না। সেদিনের সেই ঘটনার পরে কিছুটা অভিমান থেকেই সরে এসেছিল সে।

জানতেই হবে কে এই মেয়েটি। মেয়ে বলেই তো মনে হচ্ছে, নাহলে মেঘবতী নাম দেবে কেন। তবে নামটা যে ছদ্মনাম সেটা ভালই বোঝা যাচ্ছে। কারণ এমন নাম সচরাচর শোনা যায় না। আকাশ মনে মনে ঠিক করে রাখলো আজ ওর সাথে কথা বলতে হবে। দেখি কখন গ্রীন আলোটা জ্বলে ওঠে, বার বার ইনবক্সের দিকে ছুটে যায় আকাশের মন, না এখনো অন হয়নি। ঘুমিয়ে পড়ে সে। গভীর ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে ভেসে ওঠে এক একজনের মুখ, আবার ঘুম ভেঙে যায়…… এতদিন তাদের ভুলে থাকতেই তো চেয়েছিল সে, তাহলে আজ কেন তবে নতুন করে মনের দরজায় উঁকি দেয় সেইসব হারিয়ে যাওয়া মুখগুলো! হয়তো এই পৃথিবীতে কিছুই হারায় না!  ঘরের আলো জ্বালিয়ে জল খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে বালিশটা টেনে নিয়ে। ঘুম আসেনা…… কাল আবার বের হতে হবে।

আকাশের মা,বাবা কে নিয়েই আকাশের সংসার। অনেক বয়স হয়েছে ওনাদের। ব্যবসাটা নিজে নিজে খেটে অনেক বড় করেছে। উত্তর কোলকাতার টালির বাড়িটা এখন দোতলা করেছে। আকাশের দুই বোন, রিয়া, দিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে অনেকদিন হোল। বাবা, মা বার বার অনুরোধ করেন ওকে বিয়ে করার জন্য, কিন্তু আকাশ কিছুতেই রাজি হয়না। বললেই বলে পরে হবে এখনো সময় হয়নি, হতাশ হয়ে মা বাবা তাকিয়ে থাকেন ওর দিকে! ‘আর কবে সময় হবে তোর সোনা?’  অভিমান ভরা চোখে প্রশ্ন করেন আকাশের মা।

অফিসে বের হবার সময় হয়ে গেল। মোবাইল খুলে দেখতে গিয়ে দেখলো সে অন আছে, আকাশ মনে মনে ভাবলো আজ একটু দেরি করে বের হবে, কথা তাকে বলতেই হবে আজ।

‘গুড মর্নিং
কেমন আছেন? আপনার নামটা যদি জানান তো ভালো হয়। আমার জানাশোনা  এমন কেউ নেই যে জেনেভা তে থাকে। আপনার পরিচয় দিলে ভালো হয়’।
দুটো গ্রীন টিক পড়তেই আকাশ বুঝলো সে দেখেছে। কি যেন লিখছে সে, দেখা যাক কি লেখে।

‘গুড মর্নিং
হা হা হা হা
তুই কবে থেকে এতো ভদ্রলোক হয়ে গেলি রে যে আপনি আপনি করে কথা বলছিস? আগে বল কেমন আছিস? কি করছিস? বিয়ে করেছিস?’
‘আপনি যদি নিজের পরিচয় না দেন তাহলে একটা কথারও আমি উত্তর দেবনা। আমার ব্যক্তিগত জীবনের কথা শুনে আপনার কি লাভ? আর আমি বলবোই বা কেন?’

‘লাভ? লাভ বা লোকসানের তো কিছু নেই। তুই কেমন আছিস এটা জানার ইচ্ছে আজ থেকে নয় সেইদিন থেকে’।
আকাশ খুব আগ্রহভরে জানার চেষ্টা করছে কে হতে পারে।
‘তুই সুরমা, আমি ঠিক বলছি তো?’
‘হা হা হা হা চিনতে পারিসনি, ভাব ভাব, ভাবা প্রাকটিস কর’।

আকাশের বুঝতে বাকি রইল না কে এই মেঘবতী।
‘কেমন আছিস তুই বল’  আকাশ প্রশ্ন করে।
‘আগে বল আমি কে?’
‘কে আবার তুই তিতির’।

আর কোন উত্তর লেখেনা সে। আকাশ অপেক্ষা করতেই থাকে।
‘কি হোল, মোবাইল অফ করছি আমাকে বেরতে হবে’।
সাথে সাথে ওদিক থেকে লেখা ফুটে উঠলো।

সেই দিন থেকে অপেক্ষা করছি,  যেদিন তুই আমার বাবার কথাগুলো শুনে মাথা নিচু করে চলে গেলি, একটা প্রতিবাদও করলি না। বোবার মতো সব কথা শুধু শুনে গেছিলি। অনেক কেঁদেছি তোকে ওইভাবে অপমান করার জন্য। বিশ্বাস কর’।

‘তুই জেনেভাতে গেলি কি করে? কতদিন গেছিস ওখানে?’ আকাশ খুব ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করে।

‘বলবো বলবো সব বলবো, তোর ফোনে কতবার ফোন করেছি, বার বার বলে সুইচড অফ। বুঝেছিলাম নম্বর পাল্টে ফেলেছিস। কোন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ রাখিস না। সবার কাছে তোর খোঁজ করেছি। কেউ বলতে পারেনি। আমি এতদূরে  থেকেও সবার সাথে যোগাযোগ রাখি, শুধু তোকে, শুধু তোকে…… অনেক খুঁজেও পাইনি! হতাশায় ডুবে গেছি, তবুও চেষ্টা করতে ছাড়িনি, তোকে খুঁজে পেতে। আমি জানতাম একদিন ঠিক পাবো তোকে। একসময় আকাশ নামটা দেখে সার্চ করতে  করতে পেয়ে গেলাম তোকে। যদিও তোকে আমরা আকাশ নামে কেউ ডাকতাম না। তোর সেই চির পরিচিত নামেই খুঁজতে গিয়ে পাইনি তোকে। পরে রুদ্র বলল, আকাশ সেন, এইনামে দেখতে পারিস। রুদ্রকে বলেছিলাম তোরা কেউ ওর সাথে  যোগাযোগ রাখিসনা কেন? শুনে রুদ্র বলেছিল, ও নিজে রাখতে চায়না। আর যে নিজে রাখতে চায়না,জোর করে কি রাখা যায় বল?’ ক্রমশঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!