আন্তর্জাতিক ডেক্স : ইসলাম ধর্মের নবী ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে গত ৪ দিন ধরে সহিংস ঘটনা চলছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় বিজেপির যুব নেতা হর্ষিত শ্রীবাস্তবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (৮ জুন) উত্তর প্রদেশের কানপুর পুলিশের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বলেন, “মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করায় হর্ষিত শ্রীবাস্তবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি কানপুরে সহিংসতার পর অন্তত ৫০ জনকে পুলিশে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।”
তবে এ ব্যাপারে হর্ষিত শ্রীবাস্তবের আইনজীবী এখনও কোনো মন্তব্য করেননি। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে মুহাম্মদ (সা.) ও তার স্ত্রী হযরত আয়েশাকে নিয়ে “অবমাননাকর” মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে বিজেপির দিল্লি শাখার গণমাধ্যমপ্রধান নবীন কুমার জিন্দাল মহানবীকে নিয়ে একই ধরনের একটি টুইট করেন। এই টুইটের জেরে পরিস্থিতি উত্তাপ্ত হলে তিনি টুইটটি মুছে দেন। অপরদিকে নূপুর শর্মাও তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন।
বিজেপির এই দুই নেতার মন্তব্যের জেরে গত শুক্রবার (৩ জুন) জুমার নামাজের পর উত্তর প্রদেশের কানপুরে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। ভারতে বিজেপির এই নারী মুখপাত্রকে গ্রেপ্তারেরও দাবি ওঠে।
পরবর্তীতে বিজেপি জানায়, মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে রবিবার নুপুর শর্মা এবং দলের দিল্লি ইউনিটের মিডিয়া প্রধান নাভিন জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে, মহানবীকে নিয়ে দুই বিজেপি নেতার অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে আরব বিশ্ব। ওমান, কাতার, কুয়েত, ইরান ও সৌদি আরব, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এ বিষয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। দেশগুলো সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করে এবং ভারত সরকারকে এ ঘটনায় প্রকাশ্যে নিন্দা প্রস্তাবের আহ্বান জানায়। এছাড়া মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)।
কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইরান এবং আফগানিস্তানের মতো ইসলামিক দেশগুলির নেতারা ভারত সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। এবং ইসলাম বিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদে কূটনীতিকদের তলব করার পরে দেশীয় ক্ষোভ নতুন গতি লাভ করে।
ওআইসি এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতে ইসলামের প্রতি ঘৃণার ক্রমবর্ধমান তীব্র পরিবেশ এবং মুসলমানদের পদ্ধতিগত হয়রানির প্রেক্ষাপটে এ অবমাননা করা হয়েছে।
মহানবীকে নিয়ে দুই নেতার অবমাননাকর মন্তব্যের কারণে মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়েছে বিজেপি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নরেন্দ্র মোদির সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে বেশ নড়েচড়ে বসেছে বিজেপি।
সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসলাম বিরোধী আক্রমণাত্মক টুইট এবং মন্তব্য কোনোভাবেই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলন করে না।
এছাড়া, এখন থেকে শুধুমাত্র বিজেপির অনুমোদিত মুখপাত্র ও প্যানেলিস্টরা টিভি বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে পাবলিক প্ল্যাটফর্ম বা অন্য কোথাও বক্তব্য দেওয়ার সময় কোনো ধর্ম, তার প্রতীক বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের সমালোচনা করার বিরুদ্ধে তাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। -রয়টার্স