ফারুক মাহমুদ : ইসলামী চিন্তক ও কবি জালাল উদ্দিন রুমি বলেছেন’ গতকাল আমি চতুর ছিলাম তাই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম; কিন্তু আজ জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই’।
ক’দিন আগেও আমরা নদী ভরাট করে ঘর বানিয়েছি, পাহাড় কেটে রাস্তা করেছি, তক্ষক মেরে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়েছি। প্রকৃতি কী চায় সেটা নয়; প্রকৃতিকে ক্ষতবিক্ষত করে ভেঙ্গেচুরে আমরা নিজেদের মতো পৃথিবী গড়েছি।
করোনা এসে আমাদের চাওয়ার প্রচলিত সেই সিলেবাসকে পরিমার্জন করতে বাধ্য করেছে। এখন আমরা কী চায় সেটা নয় বরং প্রকৃতি কী চায় তার উপর আমাদের চলতে হচ্ছে। এক সময়ের পাগলা ঘোড়া, নিয়ম না মানা মাস্টার আমরাই এখন নিয়ম মানছি। নিয়ম করে হাত ধুই, ডেটল স্প্রে করি, মাস্ক পরি।
অন্যদের কথা বাদই দিলাম বরং আমার কথায় বলি। করোনা আসার আগের বত্রিশ বছরের জীবনে কখনো মুখে রুমাল পরিনি। মাস্ক তো দূরের কথা। যতই ধুলাবালি হোক, যতই দুর্গন্ধময় রাস্তা হোক আমি নাকে হাত পর্যন্ত দিতাম না। নাকে হাত দিলে দম বন্ধ হয়ে আসতো। কাউকে রুমাল কিংবা মাস্ক পরতে দেখলে হাসাহাসি করতাম। সেই নিয়ম না মাস্টার আমি আজ নিয়মিত মাস্ক পরি। এখন নতুন জামার গন্ধে নয়, নিত্য নতুন মাস্ক কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গন্ধে অভ্যস্ত হচ্ছি।
করোনা আরও অনেক দিন থাকবে। আরও অনেকে আক্রান্ত হবে। আমিও হবো হয়তো। করোনার এই প্রতিকূল দিনগুলিতে, দমবন্ধ করা প্রতিবেশে আমাকে মানিয়ে নিতে হবে। আমি এখন কিছুই বদলে দিতে চাই না; নিজেকে বদলে ফেলে এবং অভিযোজিত করে এই যাত্রায় টিকে যেতে চাই।
ক’দিন পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। গতবছরও দোকানে দোকান ঘুরে পাঞ্জাবির ট্রায়াল দিয়েছি, জুতার সাইজ মিলিয়ে পরে দেখেছি। সময় পাল্টে গেছে। বেঁচে থাকাটাই এখন জরুরী, টিকে যাওয়াটাই এখন মিরাকল।
সমাজ পাল্টে ফায়দা নেই, পৃথিবী বদলে লাভ নেই। বেঁচে থাকলেই তো সমাজ কিংবা পৃথিবী, না থাকলে সব শূন্য। সারাদিন মাথা ঘামিয়ে সরল অংকের শূন্য উত্তর মেলানোর মতো।
নিজে বাঁচতে হলে, বয়স্ক বাপ-মাকে বাঁচাতে হলে অভ্যাস পাল্টাতে হবে প্রতিদিন গোসল শেষে লুঙ্গি পাল্টানোর মতো। কিছু অভ্যাস, কিছু জ্ঞান, কিছু সচেতনতা দিনশেষে আমাদের বাঁচিয়ে দিতে পারে।
সমাজ পাল্টানোর চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের বাঁচানোর ধান্দা করি। নিজে বাঁচলেই না হয় সমাজ কিংবা পৃথিবীর নাম।