Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বৃষ্টিহীন অস্বাভাবিক তপ্ত বর্ষা

বৃষ্টিহীন অস্বাভাবিক তপ্ত বর্ষা

নিউজ ডেক্স : ভর বর্ষা মৌসুমেও দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল বৃষ্টিহীন। যেখানে বৃষ্টি হচ্ছে তাও খুবই সামান্য। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দুটিই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি আষাঢ় ও শ্রাবণে।

গ্রামাঞ্চলে যেখানে বর্ষার পানিতে ক্ষেত, বিল পানিতে থই থই করার কথা সেখানে পানি চিকচিক করছে। কোথাও খড়খড়ে শুকনো প্রান্তর।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার বৃষ্টিহীন ব্যতিক্রমী এক বর্ষা মৌসুম চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন অস্বাভাবিক বর্ষাকাল আর দেখা যায়নি। ভর বর্ষাকালে এমন দীর্ঘসময় ধরে বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক।

বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ বর্ষাকাল। শনিবার বর্ষার দ্বিতীয় মাস শ্রাবণের ১ তারিখ। কিছুদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ। বর্ষার ভর যৌবন যখন, তখন ভ্যাপসা গরমে কষ্ট পাচ্ছে প্রায় সারাদেশের মানুষ।

শুক্রবার টাঙ্গাইল, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বইছিল মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এবার কিছুটা আগে গত ৩১ মে (জৈষ্ঠ্য মাসের ১৭ তারিখ) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূলে এসে পৌঁছে। এরপর কিছুটা বৃষ্টি ঝরালেও মধ্য আষাঢ়ের পর মৌসুমি বায়ুর অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আষাঢ় ও শ্রাবণ মিলে জুলাই মাস। এসময়ে বৃষ্টিপাতের ব্যাপকতা থাকে। টানা বৃষ্টি হয় তাও নয়। দু-একদিন ব্রেকও হয়। এক-দুদিন বিরতির পর আবার বৃষ্টি হয়। এভাবে চলতে থাকে। গত ৫ জুলাই থেকে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছে এটি, চলমান রয়েছে। গত ১২ দিন ধরে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি থাকছে। এমন টানা তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি বর্ষা মৌসুমে থাকে না বললেই চলে।’

তিনি বলেন, ‘থাকে শুধু এপ্রিল-মে মাসে, যখন বৃষ্টিপাতের ঘনঘটা কম থাকে। তাপপ্রবাহ দিয়েই যদি বর্ষাকে বিবেচনা করি, তবে এটি একটি ভিন্ন প্রকৃতির আবহাওয়া পরিস্থিতি অর্থাৎ এটি একটি রেয়ার (ব্যতিক্রম) ঘটনা। তবে ইতিহাস ঘাটলে এমন ঘটনা যে পাওয়া যাবে না তা নয়, হয়তো সংখ্যায় কম। হয়তো ১০ বছরে একবার বা ২০ বছরে একবার এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই মুহূর্তে একটি ব্যতিক্রমধর্মী বর্ষা মৌসুম দেখছি।’

আব্দুল মান্নান আরও বলেন, ‘২০১৪ সাল আমাদের জন্য একটি গরমতম বছর ছিল। গত বছরও (২০২১ সাল) তাপপ্রবাহপ্রবণ বছর ছিল। এ বছরও (২০২২) মার্চ মাসে অনেক তাপপ্রবাহ হয়েছে। আমরা গত তিন বছরের জুলাই মাসের অবস্থা যদি হিসাব করি, ২০১৪ সালে জুলাই মাসের ছোট আকারে দুই থেকে তিনদিন তাপপ্রবাহ ছিল। গত বছরের এপ্রিলেও তাপপ্রবাহ ছিল, তবে এর ছোট আকারে। চলতি বছরের জুলাই মাসের তাপপ্রবাহ এপ্রিল মে মাসের তাপপ্রবাহকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’

‘এবারের বর্ষা মৌসুমটাকে আমরা একটি রেয়ার সিজন হিসেবে মনে করছি। এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এটা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকার কথা। অন্যদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত বেশি আছে।’

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা উচ্চ তাপমাত্রায় অবস্থান করছি। বাকি ৪ ঘণ্টা নিম্ন তাপমাত্রায় অবস্থান করছি। অর্থাৎ স্বস্তিদায়ক অবস্থা বা প্রশান্তিদায়ক আবহাওয়া আমরা পাচ্ছি না। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা আবার ঘেমে উঠছি। এটি ব্যাপকভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এর কারণ হচ্ছে বাতাসে প্রচুর জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি। এটি তাপমাত্রাকে নিচে নামতে সহায়তা করছে না।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আজ (শনিবার) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। অর্থাৎ এখন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দুটোই বেশি। আমাদের সামনে একটি দুর্বল বর্ষাকাল উপস্থিত। বিস্তৃত পরিসরে যে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, সেটা হচ্ছে না। স্যাটেলাইটে মেঘের ইমেজে আমরা দানার মতো আকৃতি দেখি, কিন্তু বিস্কুট আকৃতির হওয়ার কথা। এতে বুঝা যাচ্ছে, দেশের বেশিরভাগ এলাকা মেঘমুক্ত। তাই ওইসব এলাকা সূর্যকিরণ বেশি পাচ্ছে।’

আব্দুল মান্নান আরও বলেন, ‘এখন দেশের সব জলাধারেই পানি আছে। সেই পানি পর্যাপ্ত পরিমাণের জলীয়বাষ্পের যোগান দিচ্ছে। এতে আমাদের ঘাম শুকাচ্ছে না, বাতাস এ ঘাম শুষে নিতে পারছে না। বাতাস তো নিজেই আর্দ্র হয়ে আছে। এতে ঘাম শরীরেই থাকছে, যা অস্বস্তি তৈরি করছে।’

এবার কেন দুর্বল বর্ষা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্ষার উৎপত্তি হয় সাগরে, সাগরে পর্যাপ্ত হিট এনার্জি থাকলে সেখান থেকে মেঘের সৃষ্টি হয়। এখন স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে ব্যাপক মেঘের উপস্থিতি নেই। ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের মেঘালয়, আসাম, অরুণাচলে যেখানে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ার কথা সেখানে মৌসুমি বায়ু দুর্বল।’

তিনি বলেন, ‘বর্ষাকালের উপস্থিতি, বর্ষার ফ্লো, বর্ষার আচরণ, এলনিনো, লানিনা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয়- দুর্বল বর্ষার জন্য দায়ী। কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণকে বৃষ্টিহীনতার জন্য দায়ী করা যাবে না। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে একটু সাবধানে থাকতে হবে। ঘনঘন পানি পান করতে হবে। কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে, যতটা পারা যায় রোদে ঘোরাঘুরি না করাই উচিত।’

এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘তবে বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির শুধু অবনতিই হতো না, বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখাও দিতো। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা নিয়ে আপাতত নতুন কোনো শঙ্কা নেই।’

জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে ভারি বৃষ্টিতে বন্যার পূর্বাভাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক, শেষের দিকে হয়তো বৃষ্টি বাড়তে পারে। তবে সময় তো এখনো রয়ে গেছে। তবে এ মাসে বৃষ্টি কম হবে, সেটা থেকেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।’

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আপাতত আমরা বলছি, আগামী দুদিন এ তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। ২০ তারিখের পর হয়তো বর্ষা সক্রিয় হতে পারে।’ -জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!