ব্রেকিং নিউজ
Home | শিক্ষাঙ্গন | পড়াশোনায় কখন প্রীতি আসে?

পড়াশোনায় কখন প্রীতি আসে?

35

ওমর ফারুক : প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমান এর বিখ্যাত ছোট গল্প ‘সৌদামিনী মালো’ ইন্টারে আমাদের পাঠ্যসূচি ছিল। সেই সময় চট্টগ্রাম কলেজে আমাদের বাংলা পড়াতেন শ্রদ্ধেয় আইয়ুব ভুঁইয়া স্যার। তো যেদিন ‘সৌদামিনী মালো’ পড়াবেন সেদিন স্যার শ্রেণিকক্ষে যথারীতি প্রবেশ করলেন। স্যারকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আমরা দাঁড়ালাম এবং বসে গেলাম। স্যার ডায়াসের পাশের গিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং আচানক বলে উঠলেন, দাঁড়াও!

ঘটনার নাটকীয়তায় আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। অবাক হয়ে স্যার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা দাঁড়ালে কেন?

আমাদের একজন বলল, দাঁড়াতে বললেন যে স্যার।

আরে তোমাদের দাঁড়াতে বলি নাই, আজকে যেই গল্প পড়াব সেটার শুরু হচ্ছে। গল্পের প্রথম লাইন, দাঁড়াও। স্যার বললেন।

আমরা বই খুলে দেখলাম আরে তাইতো! গল্পের প্রথম লাইন তো দাঁড়াও। একটা টানটান কৌতূহল নিয়ে সেদিন গল্পটা পড়েছিলাম। এর পর থেকে গল্প পড়ার প্রতি একটা ভীষণ আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

এক ছিল রাজা। রাজার ছিল তিন মেয়ে। আমাদের ছাত্র জীবনে সবচেয়ে বেশি শোনা গল্প। একই গল্প যখন বারবার শোনা হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে অনাগ্রহ চলে আসে। তারা পাঠে মনোযোগিতা হারিয়ে ফেলে। যদি গল্পটার মূল ঠিক রেখে এভাবে বলা হয়- এক ছিল জমিদার। তার ছিল তিন মেয়ে। অথবা বলা হয়- এক ছিল বাবা। তার ছিল তিন মেয়ে। অথবা যদি শুরু করা হয়- এক ছিল মন্ত্রী। তার ছিল তিন মেয়ে। তাহলে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে তাদের পাঠে মনোযোগী হবে। পড়াশোনার প্রতি তাদের প্রীতি বাড়বে।

ছোটবেলা থেকে বড়রা আমাদের মস্তিষ্কে ভয় ঢুকিয়ে দেন। যেমন পরীক্ষার দিন সকালে ডিম খাওয়া যাবে না, খেলে পরীক্ষায় গোল্লা পাবে। মাছের মাথা খাওয়া যাবে না, খেলে বাবা মারা যাবে। অথবা মুরগির পা খাওয়া যাবে না, খেলে হাতের লেখা বিশ্রী হয়ে যাবে। এভাবে শৈশবে ইঞ্চি ইঞ্চি করে আমাদের মস্তিস্কে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, সেই ভয় থেকে চাইলে আমরা এখনো বের হতে পারিনা। তেমনি ছোটবেলায় আমাদের বলা হত ইংরেজি খুব কঠিন বিষয়। সব বিষয়ে পাশ করা গেলেও ইংরেজিতে পাশ করা সম্ভব না। অথবা গণিতে জ্যামিতি বুঝার কিচ্ছু নাই। শুধু মুখস্থ করে যেতে হবে এবং পরীক্ষার দিন লিখে দিয়ে আসলে হবে। গণিত ও ইংরেজিকে আমরা জুজুর মত ভয় পেতাম। সেই জুজু ভীতি নিয়ে পরীক্ষার হলে যেতাম। হয়ত পাশ করেছি, কিন্তু পড়াটা টেকসই হয়নি।

গতকাল একটা বিদ্যালয়ে গণিত ক্লাস পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখি শিক্ষক জ্যামিতি পড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের বৃত্ত বুঝাতে তিনি নিজের চুড়ি দেখাচ্ছেন আর বলছেন বৃত্ত ঠিক এমন। আরো বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বৃত্ত বুঝানোর চেষ্টা করে গেল শিক্ষক। পরে এক শিক্ষার্থী বলল,

ম্যাডাম, ফ্যান ঘুরলে যে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয় সেটাও তো তাহলে বৃত্ত।

আরেক ক্ষুদে শিক্ষার্থী বলল, ম্যাডাম গাড়ির চাকাও তো বৃত্ত।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বৃত্তকে বুঝা- বুঝানোর যে প্রয়াস সেটা দেখে ভালো লাগল। আর মনে মনে ভাবছিলাম এভাবে যদি জ্যামিতিটা পড়তে পারতাম, হয়ত আমার জীবনের গল্প অন্যরকম হত।

এভাবে ছোট ছোট বাস্তব উপকরণ, গল্প কিংবা গল্প বলায় নাটকীয়তা এনে আমরা পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি। শিক্ষার্থীর কাছে পড়াশোনা হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়। শিক্ষার্থী যদি বিদ্যালয়ে ভীতির বদলে আনন্দের কিছু পায়, তাহলে পড়াশোনাটা প্রীতির হয়ে যায়। পড়াশোনাটা টেকসই হয়।

লেখক : সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!