ওমর ফারুক : উত্তরমুখী পরীক্ষা কক্ষে সবাই পূর্ব পাশের হাত দিয়ে লিখছে। কিন্তু ছেলেটি লিখছে পশ্চিম পাশের হাত দিয়ে। ব্যতিক্রম একশজনের মধ্যেও নজর কাটে। চোখে পড়ে। দূরে ছিলাম। বামহাতে লিখছে দেখে কাছে গেলাম। দেখি বামহাতে আঙ্গুল তিনটা। তিন আঙ্গুলেও দ্রুতগতিতে সে লিখে চলছে। কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করলাম, বাবা, বামহাতে লিখছ কেন? কোন জবাব না দিয়ে ডানহাতটা সামনে এগিয়ে ধরল। দেখি ডানহাতে দুই আঙ্গুল। প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম।
এতক্ষণ প্রান্ত চক্রবর্তীর কথা বলছিলাম। সে কলাউজান নিজতালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বয়স ১০। পিতা নারায়ণ চক্রবর্তী ও মাতা স্মৃতি চক্রবর্তী। বাবা পল্লী চিকিৎসক আর মা কেয়াজুপাড়ার একটা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ান। সে ঠোঁটকাটা রোগেও আক্রান্ত। আজকে পরিদর্শনে গিয়ে ১ম সাময়িক পরীক্ষা দেওয়া প্রান্তের সাথে আমার দেখা। তার পরীক্ষা শেষে আমাদের কথোপকথন।
– লিখতে কষ্ট হয়েছিল।
– অভ্যাস হয়ে গেছে।
– হাতের এই অবস্থা কখন থেকে?
– ছোটবেলা থেকে।
– তোমার দুই হাতে তো আঙ্গুল কম। ডান হাত দিয়ে লিখ না কেন?
– বাম হাতে আঙ্গুল একটা বেশি তো, তাই লিখতে সুবিধা হয়।
-পড়াশোনা করে কি হবা?
– বড় ডাক্তার হব। আমার মায়ের এত দূরে গিয়ে পড়াতে কষ্ট হয়। আমি ডাক্তার হলে মাকে আর চাকরি করতে দিব না।
নিজের আর্দ্র চোখ সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, পড়াশোনার পাশাপাশি আর কি কর?
– ক্রিকেট খেলি
– এই হাত দিয়ে!
– হুম, আমার তো দুই পায়েও তো সমস্যা।
– কি বল?
দেখলাম পা দুইটাও বাঁকা। অথচ আত্মবিশ্বাসী সুরে সে বলে যাচ্ছিল সব। শিক্ষকরা বলল, প্রান্তের ক্লাস রোল দুই। সে পারতপক্ষে কোন দিন অনুপস্থিত থাকে না। তবে এই বছর এক হতে না পারায় তার মন খারাপ। আসার সময় সে বলল, স্যার দোয়া করবেন আগামী বছর যেন আবার এক হতে পারি। বুকে জড়িয়ে বললাম, শুধু ক্লাসে না, তুমি জীবনেও তুমি এক হতে পারবে।
লেখক : সহকারী শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।