নিউজ ডেক্স : এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বহিনী বৈধ অস্ত্র জমা নেবে না কিন্তু এ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার (১২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। তবে প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা কিছুটা শিথিল থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া চিঠির ভিত্তিতে আজ বা কালকের মধ্যে সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবেন।’
এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে এ বৈঠক।
নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে একটি নির্দেশনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এসেছে। সেখানে আছে কেউ বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও ক্যারি (বহন) করতে পারবে না। প্রাইভেট সিকিউরিটি সংস্থা তাদের অস্ত্র রেখেই কাজ করবে। আর যাদের ব্যক্তিগত অস্ত্র আছে সেগুলো তারা দেখাতে পারবে না, কাউকে শো করতে পারবে না, সঙ্গে নিয়ে চলাচল করতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে আলাপ করেছি, এটার সঙ্গে যুক্ত করতে চাচ্ছি যে, যে ক্যান্ডিডেট তার যদি পারসোনাল আর্মস থাকে সেটার প্রতি আমরা ঠিক এ রকম কড়াকড়ি করব না।’
তিনি বলেন, ‘আত্মরক্ষার জন্য প্রার্থীর যে অস্ত্র রয়েছে সেটা সে সঙ্গে রাখতে পারবেন কিন্তু প্রদর্শন করতে পারবেন না।’
‘কোনো লাইসেন্স হোল্ডার অস্ত্র ক্যারি করতে পারবে না, প্রদর্শন করতে পারবে না, কিছুই করতে পারবে না। ক্ষেত্রমতে যদি প্রয়োজন হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি প্রয়োজন মনে করে তবে এগুলো থানায় নিয়ে জমাও রাখতে পারেন।’
কখন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুরু হয়ে গেছে, কালকে থেকেই হতে পারে। এটা নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’
নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক নিয়মিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। বর্ডার পয়েন্টে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। এজন্য প্রায়শই বিজিবির কাছে অস্ত্র ধরা পড়ছে। নির্বাচনের আগে এগুলো হয়ে থাকে।’
নির্বাচন উপলক্ষে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের উপর আমরা কোথাও অ্যাটেনশন দেই, প্রেসার দেই। এই মুহূর্তে ভারত থেকে এখানে এসে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো ইনফরমেশন নেই। এ ছাড়া আমাদের বিজিবি ও কোস্টগার্ড তো রয়েছেই। তারা অবৈধ অস্ত্র যেমন আসতে দেবে না, কোনো অনুপ্রবেশকারীকেও ঢুকতে দেবে না।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘এটা নিয়মিত প্রোগ্রাম। আমরা ১৫ দিন পর পর বসি। এটা স্পেশাল কোনো কিছুর জন্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাচ্ছে তাতে কোনো ঘাটতি আছে কিনা, আমাদের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা- সেটা মিটিংয়ে দেখলাম।’
নির্বাচনী প্রচারণা শুরুতেই সহিংসতায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উপমহাদেশের সব দেশেই নির্বাচনকালে অস্থিরতা হয়ই। বিগত নির্বাচনের সময়েও সহিংসতা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনো দিনই সহিংসতায় বিশ্বাস করে না। হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হবে আমরা এটা চিন্তাই করি না। যারা সন্ত্রাস দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় এটা তাদেরই চক্রান্ত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর রয়েছেন, তারা সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করবেন। আমরা এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে চাচ্ছেন কিংবা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, নাশকতার মাধ্যমে যদি নির্বাচন বানচালের কোনো প্রচেষ্টা থাকে- তবে সেগুলোও সফল হবে না।’