Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | তাসফিয়ার বাবা-চাচা ইয়াবার গডফাদার

তাসফিয়ার বাবা-চাচা ইয়াবার গডফাদার

yaba_C-620x330

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামে রহস্যজনক মৃত্যু হওয়া স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের (১৬) পুরো পরিবার জড়িত ইয়াবা ব্যবসায়। তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন এবং চাচা নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কালো তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি। ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-৬-এর এক স্মারকপত্রের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) প্রণব কুমার নিয়োগী স্বাক্ষরিত তালিকায় ৭৬৪ জন মাদক কারবারি নাম প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় রয়েছে মোহাম্মদ আমিন ও তার ছোট ভাই নুরুল আমিনের নাম। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক আইনেসহ নয়টি মামলা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন ও চাচা নুরুল আমিন। বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারা। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাসফিয়ার হাতে ছিল একটি আইফোন। হাতে সোনার আংটিও ছিল। তাসফিয়া পড়ত ইংরেজিমাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাসফিয়ার বাবা আমিন নিজেকে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ পুলিশের কাছে মেলেনি। তিনি মূলত ইয়াবা কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত। তাদের গাড়ি-বাড়ির হিসেব নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুরির ঘটনায় ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত একটি মামলার আসামি মোহাম্মদ আমিন। এরপর ইয়াবা ব্যবসায় জড়ায় আমিন। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার স্টেশন রোড়ের প্যারামাউন্ট সিটির সামনে থেকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন মোহাম্মদ আমিন। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে যান তিনি। এরপর জামিনে বেরিয়ে ফের ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মোহাম্মদ আমিন। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা একটি মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয় আমিনকে। অবশ্য ২০১৫ সালে গ্রেফতার হওয়ার অনেক আগে থেকে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে আমিনের জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রেকর্ড করা একটি মামলায় মোহাম্মদ আমিনের নাম রয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ থানায়ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়েরকৃত একটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি মোহাম্মদ আমিন।

এদিকে মোহাম্মদ আমিনের ছোট ভাই নুরুল আমিনও ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য মিলেছে। স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত চারটি মামলা। সবকটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানাধীন কাজীর দেউড়ী এলাকা থেকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন নুরুল আমিন। এর আগে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ টেকনাফে পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলার আসামি হন নুরুল আমিন। ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল টেকনাফ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায়ও নুরুল আমিনকে আসামি করা হয়েছিল।

মাদক কেনাবেচা ও এ সব মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তাসফিয়ার চাচা নুরুল আমিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এখন বলার কিছু নেই। মানসিক অবস্থা তেমন ভালো নেই। পরে যোগাযোগ করেন। এটা ভালো হবে।’ তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিনের ফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই এখন চট্টগ্রামে। নম্বর এই মুহূর্তে নেই।’

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ঠিক ওপারেই মিয়ানমারে ইয়াবার হাট। সেই টেকনাফের ডেইলপাড়ায় বাড়ি তাসফিয়াদের। ওই এলাকার ইয়াবা সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য তার বাবা মোহাম্মদ আমিন ও চাচা নুরুল আমিন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসেবে দেশে বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার ইয়াবা ব্যবসার মূল জোগান হয় টেকনাফ থেকেই। টেকনাফের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই ছিলেন দিনমজুর, জেলে, রিকশাচালক কিংবা লবণচাষি। এই পেশাগুলোই ছিল তাদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই শ্রমজীবীরাই ইয়াবার বদৌলতে বনে গেছেন কোটিপতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অনুসন্ধান বলছে, শুধুমাত্র টেকনাফ ও ঢাকার এমন ১৮ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর ২৬ কোটি টাকা লেনদেনের হদিস পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, তাসফিয়া আমিন চট্টগ্রাম নগরের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। নগরীর ওআর নিজাম রোডে তাদের বাসা। গত বুধবার নগরীর কর্ণফুলীর তীরে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির কাছে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় চোখ, নাক-মুখ থ্যাতলানো অবস্থায় তাসফিয়ার মরদেহ পায় পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার তার ছেলেবন্ধু আদনান মির্জাসহ ছয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ মৃত্যু রহস্য নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ। তবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা তাসফিয়ার মৃত্যুরহস্য নিয়ে কাজ করছি। তদন্তে অগ্রগতি আছে। আশা করছি দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।’

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!