Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | তাসফিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ

তাসফিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ

31944595_1183359288486453_3894525238473392128_n.jpgii_

নিউজ ডেক্স : রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজের পর আরো তিনটি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। এর মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরেছে তাসফিয়া আমিন নেভালে একা গিয়েছিল নাকি তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তার মৃত্যু কীভাবে হলো তারও তথ্য প্রমাণ ‘পাওয়া গেছে’ বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে মুখ খুলছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউ।

এ প্রসঙ্গে গতকাল সিএমপির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (কর্ণফুলী) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, এতদিন যেহেতু অপেক্ষা করেছেন, আর দুদিন অপেক্ষা করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল জানান, আমাদের কাছে চায়না গ্রীল রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজ ছাড়াও আরো কয়েকটি ফুটেজ এসেছে। তাসফিয়ার বাসার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে সে বাসা থেকে বের হয়েছে। এরপর আর বাসায় ফিরেনি। তাদের বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী লোকমান হোসেনও আমাদের তা–ই জানিয়েছে। চায়না গ্রীলের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে প্রবেশ করে তাসফিয়া ও আদনান। সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে তাদের দুজনকে একসাথে বের হয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। এ সময় আদনানকে বিল দিতেও দেখা যায়। আদনান প্রথম বের হয়। এরপর তাসফিয়া বের হয। আদনান সিএনজি টেক্সি ভাড়া করে। তাসফিয়া সেটিতে উঠে চলে যায়। এরপর অন্য একটি টেক্সিতে আদনান উঠে চলে যায। সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে ও আর নিজাম রোডে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তাসফিয়ার বাসার গলিটির খানিক সামনে সিএনজি টেক্সিটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়িয়েছে। বাসায় যেতে হলে মেডিকেল সেন্টারের গলি দিয়ে ঢোকার কথা। ধারণা করছি, সিএনজি চালককে তাসফিয়া বলছে হয়ত সেদিকে না ঢুকে নেভালে যেতে। কারণ সেই একই সিএনজি টেক্সিতে সে নেভালে গেছে এবং ৮টা ১০ মিনিটে তাকে নেভালে দেখা গেছে। দূরত্ব চিন্তা করলে ও আর নিজাম রোড থেকে নেভালে যেতে এই সময়টুকু যে কারো লাগতে পারে।

তিনি বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী যাদের সাথে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছে সিএনজি টেক্সি থেকে সে একাই নেমেছে। একাকী কিছুক্ষণ বসছে, কিছুক্ষণ আবার পায়চারি করছে। ক্রিমিনাল এক্টিভিটির কোনো সাইন আমরা পাইনি। তার কাছে তো টাকা ছিল না, সিএনজি ভাড়া কীভাবে মেটাল? এ প্রশ্নের উত্তরে উক্ত কর্মকর্তা বলেন, রেস্টুরেন্টের ভিডিও ফুটেজে তাসফিয়ার আঙুলে একটি সোনার আংটি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারের সময় সেটি পাওয়া যায়নি। তাসফিয়া ওই আংটি টেক্সি চালককে দিয়ে ভাড়া মিটিয়েছিলেন হয়ত। মেয়ের বিষয়ে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাসফিয়ার মা নাইমা সিদ্দিকা। তিনি বলেন, আমার মেয়েটারে আমি ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলি সেদিন সন্ধ্যায়। কীভাবে জানব, মেয়ে আমার লাশ হয়ে ফিরবে।

পিতা মোহাম্মদ আমিন ২ মে মর্গে জানিয়েছিলেন, আদনান ও তার সহযোগীরা এসব করেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেছিলেন, আমার ফুটফুটে মেয়েটারে কীভাবে মেরে দিল! আমি আগেই জানতাম ছেলেটা সুবিধার না। তাই শাসন করেছিলাম আমার মেয়ের সাথে না মিশতে। আর আমার মেয়েকে এত নির্যাতিত হয়ে মরতে হলো! না জানি কী ঘটেছিল আমার মেয়ের সাথে। বাবা হিসেবে এখন আমি মনে করি, মেয়েটারে সঠিক বিচার পাইয়ে দিতে হবে।

তাসফিয়ার পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার রাত ১০টায় আদনানকে আটকের পরপরই তাসফিয়াদের বাসায় হাজির হন পুলিশের তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী ‘দুই বড় ভাই’ ফিরোজ ও আকরাম। আদনানকে ছেড়ে দিতে সময় বেঁধে দেন তারা। বুধবার সন্ধ্যায় আদনান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেই দুজনও এখন নিরুদ্দেশ।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে আদনান মির্জাকে ১ নম্বর আসামি করে আরো ৫ জন সোহাইল (১৬), শওকত মিরাজ (১৬), আসিফ মিজান (২৩), ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম (২৪) ও ফিরোজের (৩০) নামে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তাসফিয়ার বাবা। তাদের মধ্যে ফিরোজ নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েক মাস আগে সে অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে শেভরন নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাকাতির মামলাও রয়েছে। আদনান লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইসকান্দর মির্জার ছেলে। মহানগরীর খুলশী থানা এলাকার দক্ষিণ খুলশী মুরগি ফার্ম জালালাবাদ আবাসিকের রয়েল পার্ক বিল্ডিংয়ে আদনানদের বসবাস।

তাসফিয়ার ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আদনান নগরীর সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে পড়ত। একই স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত তাসফিয়া। দুজনের ছিল বেশ জানাশোনা। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আদনানকে তার বাবা ভর্তি করে দেন বাংলাদেশ অ্যালিমেন্টারি স্কুলে। ভিন্ন স্কুলে পড়লেও বন্ধুদের মাধ্যমে তাসফিয়ার ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকে আদনান। এক মাস আগে তাদের সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। বিষয়টি জেনে যায় তাসফিয়ার মা–বাবা। আদনান–তাসফিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ভালোভাবে নেয়নি তাসফিয়ার পরিবার। তাই আদনানকে ডেকে শাসায় তারা। আর এটাকে ভালোভাবে নেয়নি আদনান। শাসানোর ‘প্রতিশোধ’ নিতেই তাসফিয়াকে নিজের সংগঠন ‘রিটজ কিডস গ্রুপ’ এর হাতে তুলে দিয়েছে। তাসফিয়ার মামলায় অভিযুক্ত বাকি আসামিরাও এই গ্যাংয়ের সদস্য।

তাসফিয়ার চাচা নুরুল আমিনের দাবি, আদনান, কথিত বড় ভাই ও তার তৈরি করা ‘রিটজ কিডস’ গ্যাংয়ের সদস্যরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এটি ফেসবুকভিত্তিক একটি গ্রুপ। আর এই গ্রুপের প্রধান আদনান মির্জা। এই গ্রুপে আরো রয়েছে নগরের ইংলিশ মিডিয়ামে অধ্যয়নরত কোটিপতি বাবার সন্তানরা। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় তারা হত্যা করে লাশটি সমুদ্র উপকূলে ফেলেছে, যাতে তাদেরকে কেউ ধরতে না পারে।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাসফিয়ার ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তে অংশ নেন চমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুমন মুর্শিদীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম। এক ঘণ্টা সময় নিয়ে তারা ময়নাতদন্ত শেষ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসি কর্ণফুলী জাহেদুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বেশ কিছু তথ্য আছে, যা এখন জানালে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর জানাতে পারব।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!