Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চকরিয়ায় গুপ্তধনের লোভে শিশুকে হত্যা!

চকরিয়ায় গুপ্তধনের লোভে শিশুকে হত্যা!

নিউজ ডেক্স : ফজরের আজানের পর নামাজ পড়তে মসজিদমুখী ছিল মানুষ। কুয়াশাভেজা ভোরের আলোও ফুটে উঠছিল তখন। সেই আলো-আঁধারিতেই মসজিদমুখী মানুষ দেখতে পান মাতামুহুরী নদীতে ফুটফুটে একটি শিশু ভাসছে। এই অবস্থায় স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় ভাসতে থাকা শিশুটির নিথর মরদেহ উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয়।

স্থানীয়দের ধারণা, শিশুটিকে রহস্যজনক কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর লাশটি মাতামুহুরী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় রাতের আঁধারে। যাতে নদীতে ভাসতে ভাসতে শিশুটি ভাটির দিকে চলে যায়।

রহস্যজনক ও চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যার এই ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে। গতকাল বুধবার ভোরে সুরাজপুর-কাকারা মাঝেরফাঁড়ি স্টেশনস্থ মাতামুহুরী নদী থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয়রা খবর দেয় পুলিশে। এর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে শিশুটির লাশ হেফাজতে নেয়। এর পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

মাত্র দুই মাস ১৬ দিন বয়সী ফুটফুটে এই শিশুটি নদীতে কীভাবে এলো? শিশুটিকে কী পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে? কী উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড বা কারা জড়িত রয়েছে? এমন সব প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। ঘটনার শিকার শিশুটির নাম মোহাম্মদ আনাস (বয়স ২ মাস ১৬ দিন)। সে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম সুরাজপুর গ্রামের ফার্নিচার মিস্ত্রি হোসাইন আলীর পুত্র।

পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুটির বাবা হোসাইন আলী (২৮), মা শাকিলা বেগম (২৫), ফুফু খাদিজা বেগম (৩৫) ও খালা আঁখি রহমানকে (১৪) আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে শিশু হত্যার ঘটনার বিষয়ে তাদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, শিশু আনাসের মা শাকিলা বেগমের আপন ছোট বোন ১৪ বছর বয়সের আঁখি রহমান কয়েক বছর ধরে বৈদ্যালীর কাজ করে আসছে এলাকায়। সে বিপন্ন রোগীদের তাবিজ-কবচ দেওয়া ছাড়াও ঝাঁড়-ফুঁকও করে আসছে। এলাকায় প্রচার হয়েছে- গুপ্তধন পাওয়ার লোভে সেই আঁখিই স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে শিশুটিকে বলী (হত্যা) দিয়েছে। সেই ঘটনা শিশুর বাবা, মা, ফুফুও জানেন। এর পর সেই শিশুর মরদেহ মাতামুহুরী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে মা, বাবা, ফুফু ও খালাকে আটক করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম। তিনি জানান, শিশু আনাসের মামার বাড়ির বিএমচর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ছৈনাম্মারঘোনা এলাকায়। সম্প্রতি শিশু আনাসের দাদী অসুস্থ হলে তাকে বাড়িতে দেখতে আসেন স্বজনেরা। তখন শিশুর খালা বৈদ্য আঁখি রহমান, ফুফু খাদিজা বেগমও বাড়িতে আসেন। ফুফুর বাড়ি সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিপুর গ্রামে। গত মঙ্গলবার রাতেও তারা একই বাড়িতে ছিলেন। তাই হত্যার রহস্য উদঘাটনে তাদেরকে আটক করা হয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘আড়াই মাসের শিশুটির ওপর এমন বর্বরতার পেছনে রহস্য লুকায়িত রয়েছে। আশা করছি পুলিশ সেই রহস্য ভেদ করে আসল সত্যটি বের করে আনতে পারবে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘এই শিশু হত্যার ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর এবং রহস্যজনক। তাই আসল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তবে গুপ্তধন বা কুসংস্কারের ওপর ভর করে শিশুটিকে হত্যা করার বিষয়টি লোকেমুখে শুনলেও এখনো সেই তথ্য স্বীকার করেনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃতরা। তাই এই বিষয়ে পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক। -দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!