ব্রেকিং নিউজ
Home | সাহিত্য পাতা | কার জন্য???

কার জন্য???

329

কামরুননাহার : সকালে শারমীনের মা শারমীন কে ঘরে না দেখে ভেবেছিল বুঝি কোন বান্ধবীর কাছে গিয়েছে। সময় খানিকটা গড়াতে ছোট ছেলে সাইফুলকে বলে ” দেখতো তর বইনে কোন বাড়ী গেছে। ডাইকা আন।

ফিরে আসে সাইফুল আপারে কোনখানে পাই নাই। বুকে কাঁপুনি ওঠে মায়ের, ” তর বাপেরে মাঠের থন ডাইকা আন।”

ছোট সাইফুল আবার ছোটে। আসেন বাড়ীতে মমতাজ মিয়া। কি হইছে? জিগ্যেস করেন।শারমীনের মা চুপিচুপি বলেন মাইয়ারে পাইতেছি না। কেঁদে ওঠেন মমতাজ মিয়া। বলেন এ ফজলুর কাম।ঔ শুয়ার মনে হয় আমাগোর মাইয়ারে মাইরা ফালাইছে।

ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। চার দিকে খোজ শুরু।ধরে আনা হয় ফজলুকে। ফজলু বলে সে কিছুই জানেনা।কাইল চাচার লগে বেয়াদবি করছি তাই চাচা আমারে ফাঁসাইছে।

কাঁদছে ফজলু।অবস্থা বিবেচনা করে সকলে বোঝে ফজলু নির্দোষ। ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।রাত হয়ে গেল মেয়ের কোন খোজ নাই। এত ভালো মেয়ে আশেপাশে কারও সাথে প্রেমও নাই। কোথায় গেল????

মমতাজ মিয়া আগামীকাল পুলিশের কাছে যাবে।ধান বিক্রির বারো হাজার টাকা দিতে বলে বউকে। আল্লা টাকা নাই চেচিয়ে ওঠে শারমীনের মা। স্বামী স্ত্রী বুঝে নেয় কেউ নিয়ে জায়নি শারমীনকে। সে ইচ্ছে করে গিয়েছে।

শারমীন বাবা, মার খুব আদরের মেয়ে।ছোট বেলায় তার পায়ে সমস্যা ছিল। স্বচ্ছল কৃষক বাবা অনেক চিকিৎসা করিয়ে ভালো করে ছিলেন।তার চেয়ে তার ভাই আট বছরের ছোট। তাই স্নেহ আদরের কমতি ছিল না।

একটু বড় হয়ে স্কুলে গেলেও লেখা পড়ায় ছিলো ভীষণ ভালো। ক্লাস এইটে বৃত্তি পেয়ে নাইনে পড়ছে সে। সাইন্স পড়ছে মেয়ে। বাবা তাকে ডাক্তার বানাবে।বৃত্তি পাওয়ার খুশিতে তাকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিল মমতাজ মিয়া।কোথায় গেল তার আদরের দুলালী।

কোন খোজ নাই। ঢাকা থেকে ফোন আসে। তার বড় ভায়রার ছেলে ফোন করেছে। ঢাকায় পড়ে সে।” খালু খালাম্মারে নিয়া আজই ঢাকায় আসেন কাজ আছে।

স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন তিনি। থানার এক কোনায় বসে বিলাপ করছে মা। আর পুলিশ দেখছে বডি পুরাটা পাওয়া গিয়েছে কিনা? চুপ করে বসে মমতাজ মিয়া।আরো দুজন আছে রহমান সাহেব আর তার ছেলে মোহন।

পুরা বডি পাওয়া গেছে স্যার।ডুকরে কেঁদে ওঠে মমতাজ মিয়া।জিগ্যেস করে কি হইছিল আমার মাইয়া ডারে মারলো ক্যান। এ পোলারে তো আমি চিনিনা।

থানার ইনচার্জ রুহুল আমীন বলেন, বসেন ভাই। আপনার মেয়ে এটা? মমতাজ মিয়া বলেন জি।আপনার মেয়ে এ ছেলের সাথে পালিয়ে এসেছিল ঢাকা।বিয়ে করবে তাই। শেষে ঔ হারামজাদা বিয়ে না করে মেরে টুকরো টুকরো করে জানলা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।সবটা ফেলতে পারেনি তাই ধরা পড়ে গেছে।

মমতাজ মিয়া বলেন আমিতো এরে চিনিনা। এতো আমাগে আশেপাশের গেরামেরও না।এরে মাইয়া পাইলো কই?

আরে ভাই পাইলো ফেসবুকে। পাচ মাস ধরে তারা প্রেম করে।প্রতি রাতে ভিডিও কলে কথা বলে জানেন না আপনি? চেয়ে আছে মমতাজ চোখে ভাসছে বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে মেয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল” আব্বা বৃত্তি পাইলে আমারে একটা ফোন কিনে দিবা।মেয়ে কে সাথে করে নিয়ে কিনেছিল সে।গ্রামে এখন অনেকের ফোন আছে।আগের গ্রাম এখন আর নাই। কিন্তু একি?

ভাইরে ছেলে, মেয়ে চোখে চোখে রাখতে হয়।তা না হলে এ অবস্থা হয়। বাপ, মার জন্য ছেলে মেয়ের আজ এ অবস্থা। কোথায় যেন গেলেন রুহুল আমীন সাহেব।

শারমীনের মা কাঁদছে। তার পাশে তার বোনের ছেলে।ভাবছে মমতাজ সব দোষ আমাগো? মাইয়ারে ভালো বাইসা শখের জিনিষ দিছি। আমার দোষ।লেহাপড়া জানিনা বুজি নাই সে কি করে, এও আমার দোষ।সন্তানেরে বিশ্বাস করছি এও দোষ। মনে মনে বিলাপ করে সে আল্লারে সব দোষ কি আমার।

আর একজন বসে আছে যার মনের কথা বা সহানুভূতি জানাবার কেউ নাই তিনি রহমান সাহেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!