ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | করোনাভাইরাসে লাশের মিছিল, বিলাসী ঈদ উদযাপনে লকডাউন শিথিল!

করোনাভাইরাসে লাশের মিছিল, বিলাসী ঈদ উদযাপনে লকডাউন শিথিল!

ফিরোজা সামাদ : লাগামহীন ছুটন্ত পাগলা ঘোড়ার পিঠে ছুটঁছে করোনাভাইরাস। সারি সারি লাশের মিছিল। সেই মিছিলে শরিক হয়েছে আমাদের অনুন্নত অশিক্ষিত বাংলাদেশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ জানেই না করোনা কী জিনিস? জানতে চায় সেটা দেখতে কেমন? ইত্যাদি…

বর্তমানে সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করছে। উন্নত দেশগুলি কিছুতেই কিছু করতে পারছে না। বলতে গেলে সারা পৃথিবী লকডাউন অবস্থায় বিরাজ করছে। আমাদের বাংলাদেশও যুদ্ধ করছে, কিন্তু ; অপরিকল্পিত ও এলোপাথাড়ি সে যুদ্ধ । কখনো লকডাউন দিচ্ছে তে আবার সাময়িক উঠিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে জনগণ সচেতন হচ্ছে না। তারা অদেখা একটি ভাইরাসকে মানতে পারছে না। আর যারা এই লকডাউন করা আর তুলে নেয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন তারা কিন্তু ; ঠিকই নিজ নিজ গৃহে বন্দী জীবনযাপন করেই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ করোনা ভাইরাসের রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আমরা হারাচ্ছি দেশের বীর সূর্য সন্তানদের!

শুনলাম শর্তসাপেক্ষে ঈদ পর্যন্ত লকডাউন দৈনিক ৭/৮ ঘন্টা শিথিল করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন এখানে কার সাথে শর্ত করা হলো? করোনা ভাইরাসের সাথে ? জনজীবনের সাথে? ব্যবসায়ীদের সাথে? না-কি এই দুর্যোগে না খেয়ে থাকা প্রান্তিক পর্যায়ের হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ ও কৃষকের সাথে? আমি জানি না কে এই বিষেশ সময়ে ঈদের কেনা টাকা করতে মার্কেটে যাবে? সেখানে কি করোনা ভাইরাসকে তালাবদ্ধ করে রাখা হবে? শুধু ব্যবসায়ীদের আয়ের কথা ভাবলেই কি একটি দেশের উন্নয়ন সম্ভব? দিনমজুর, চাষী এদের দিয়ে কি দেশের কোনোই উন্নতি হচ্ছে না ? আজ এবং আগামীতে অর্থনৈতিক মন্দায়ন শুরু হবে সারা বিশ্বজুড়ে। এটা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ভাবনা।

আমার মনে হয় এখন আমাদের নজর দেয়া উচিৎ কৃষকের প্রতি। তারা যাতে কৃষি উৎপাদনে ভালো কারিশমা দেখাতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া। দেশের কৃষকের ফলন বাম্পার হলে অন্ততঃ মানুষের পেটে ভাত তো পড়বে ! এককালে আমরা শুধু মাছভাত ও মোটা কাপড়ের বাঙালি ছিলাম। আবার না হয় আর একবার দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধ করবো! জেগে উঠুক বাঙালি করোনা ও দুর্ভিক্ষকে জয় করতে। আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিৎ এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে একখণ্ড জমিও যেনো পতিত পড়ে না থাকে সেদিকে নজর দেয়া। জমিনে ফলন চাই সব ধরনের। চাই সেই পুকুর ভরা মাছ,গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর তাঁতে বোনা মোটা কাপড়। আমরা পশ্চিমা পোষাক চাইনা। আমরা পেটে ভাত আর কাপড় চাই, চিকিৎসা চাই, সীমিত জীবনের দিনগুলোতে নিশ্চিত সুস্থতা চাই, আরো চাই চিকিৎসা সেবা । বিলাসী জীবনের কোনো প্রত্যাশা নেই ! নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে সেকেন্ড হোম করার বাসনা আমাদের নেই। দেশের সন্তান দেশের মাটি আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই!

করোনাভাইরাসে দেশ আক্রান্ত হওয়ার পরপরই স্থিতিশীল লকডাউন না দেয়ার ফলশ্রুতিতে আমরা হারিয়েছি দেশের বীর চিকিৎসক সৈনিকদের, হারিয়েছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতো নির্ভীক প্রাণ, বাঁচাতে পারছি না মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ আজ করোনার ছোবলে জর্জরিত। ভাইরাসের সেবা দিতে দিতে মারা যাচ্ছে নার্স স্বাস্থ্যকর্মী। তারা ফিরতে পারছেনা সন্তানের কাছে। সন্তান জানেনা তাদের বাবা ও মায়ের করবটি কোথায়? মারা যাচ্ছে গবেষক, লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক। ঘর থেকে বেড় হবার সময় আপনজনদের হাত ছুঁয়ে কেউ বলতে পারছেনা, আবার দেখা হবে!

সেখানে কার জন্য এই লকডাউন শিথিল করা? গার্মেন্টস মালিকদের বিলাসি জীবনের মূল্য দিতে গিয়ে আমাদের সূর্য সন্তানদের জীবন কিছুতেই আমরা বিসর্জন দিতে পারিনা। আমাদের শ্রমিক ভাই বোন দের করোনার হাতে তুলে দেয়া ঠিক নয়। একটু ধৈর্য কি আমরা ধরতে পারি না? কঠোরভাবে যদি পুরো মে মাস টি লকডাউন থাকে তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও লাশের মিছিল ছোট হতে হতে একদম ছোট হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

আসুন! আমরা প্রতিঞ্জাবদ্ধ হই! ভুলেও আমরা ঈদের কোনো কেনাকাটা করবো না। ঈদ উৎসব প্রনোদনার জন্য সমূদয় অর্থ কৃষকের চাষের জন্য আমরা সাহায্য করতে পারি। এজন্য আমাদের এলাকায় যেতে হবেনা। গ্রামে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো স্বজ্জন ব্যক্তি রয়েছেন, তাদের নেতৃত্বে এলাকা ভিত্তিক একটি করে সংগঠন তৈরি করে কৃষকদের উৎসাহিত করা সহ ভালো বীজ, সার ও কৃষি সহায়ক সরঞ্জামাদি দিয়ে সহায়তা করা। এতে তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবী তদারকির জন্য পদক্ষেপ নিতে আমরা অনুরোধ করতে পারি দেশের স্বার্থে ।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক শুরু করে দিয়েছি। ভাইয়ের তিন ছেলে লকডাউনে অফিস কলেজ ছেড়ে বাড়ি বসে আছে। আমি জমি বর্গা ছাড়িয়ে ওদের আদর্শ কৃষক হতে উৎসাহিত করতেছি। মাশাআল্লাহ্! ওরাও লক্ষ্মী ছেলের মতো কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইরি ধান চাষের প্রক্রিয়া চলছে। পাওয়ার টিলার দিয়ে জমির চাষ শুরু হয়েছে। গ্রামের মানুষের জীবনে আজ সত্যি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আমরা শহরে বসে কিছুই জানতে বুঝতে পারছি না। একজনের দেখাদেখি নিশ্চয়ই অন্যজন অনুপ্রাণীত হবে এবং হচ্ছেও।

এই মুহুর্তে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে স্ব স্ব উপজেলার কৃষকদের উন্নতমানের বীজ দিয়ে তদারকীর দায়িত্ব পালনের জন্য উপরমহল থেকে নির্দেশ দিলে কৃষকেরা উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস। মহান আল্লাহ্ যেনো আমাদেন সহায় থাকেন, এই প্রার্থনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!