এওজ

359

কামরুননাহার : মনু বেপারীর বয়স বেশি না।ঊনপঞ্চাশ,পঞ্চাশ হবে হয়তো।শক্ত সুঠাম শরীর।এ বয়সে অপয়া বউটা মরে গেল চার মেয়ে এক ছেলে রেখে।তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে একটা বাকী। আর ছেলে সবে একুশ পেরিয়ে বাইশে পড়লো। মনের দুঃখে ব্যাপারী ভাবে মরলি যখন তখন দশ/ পাচটা বছর আগে মরলেই পারতি।আমার একটা গতি হইতো।

গতি করবার চেষ্টায় তিনি ত্রুটি করেননি।বাধ সেধেছে বড় মেয়ে আমেনা।যেদিন তিনি বিয়ে করবার জন্য সকলের অমতে রওনা হন।ঘরের আড়ার সাথে ফাস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে তিন সন্তানের মা আমেনা।আধমরা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে।তার এক কথা আব্বা বিয়া করতে পারবো না। সিয়ানা পোলা আছে হেরে বিয়া দেউক।হেই বউ ঘর সংসার দেখবো।কি আর করা ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে থাকেন।

অবশেষে বাইশ বছেরর তুফানের বিয়ে দেন পঞ্চম শ্রেণী পাশ আঠারো বছরের সাবিনার সাথে।ভালো ছাত্রী ছিল সাবিনা।কিন্তু গ্রামে হাই স্কুপ না থাকায় লেখাপড়া হয়নি।তবে সে খুব গল্পের বই সহ যা পেত তাই পড়তো।পড়তে খুব ভালো বাসতো সাবিনা।সংসার সমলাতে বড়সড় মেয়ে দরকার।তাছাড়া মেয়েটা দেখতেও মন্দ না। রিষ্ট পুষ্ট শরীর।

সংসারের ভার নেয় সাবিনা। তুফানের একটা দোকান আছে গন্জে। সপ্তাহে দু,রাত সে বাড়ী থাকে বাকী সময় দোকানের প্রয়োজনে গন্জে।আজকাল কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। বিয়ের দিন সাবিনাকে নিয়ে এসে বড় ননদ আমেনা বলেছিল” আব্বার জন্য আনছি তোমারে হের যেন কোন অসুবিধা না হয়।” কথাটা মনে ধরেছিল বেপারীর।

সাবিনাও সাধ্যমত শ্বশুরের সেবা করে। ঘুমোবার আগে পানিও দিয়ে আসে শ্বশুরের ঘরে। তুফান না থাকলে ননদের সাথে ঘুমায় সাবিনা।বিয়ের দু,মাস হয়ে গেছে।ইদানীং সাবিনা লক্ষ্য করছে শ্বশুর তার সাথে অশ্লীল তামাশা করবার চেষ্টা করেন। যেমন সকালে জিগ্যেস করেন ও বৌ একা বিছানে ঘুম আসে তোমার? না তুফানরে এইহানে রাইখা আমি যামু গন্জে?লজ্জায় লাল সাবিনা বলে ” কি যে কন আব্বা? ” বেপারী হাসে। তারা গোসল করতে গেলে বিনা কারনে শ্বশুর পুকুরপাড়ে ঘোরাঘুরি করেন।

একদিন শ্বশুরকে পানি দিতে গেলে আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরে বেপারী। বলে অনেক কিছু দিমু তোমারে। কেউ জানবো না কিছু। বিশ্বাস রাখো।ঠেলে ফেলে দেয় শ্বশুরকে সাবিনা।দৌড়ে গিয়ে ওঠে চাচি শ্বাশুরীর ঘরে। খবর পেয়ে আসে তুফান। আসে মেয়েরাও।আমেনা বলে “ঐ তুফান তুই আমাগো একমাত্র আশা।তর বউ এগুলা কি কয়? ওর তরে নিয়া আলাদা হওনের ইচ্ছা। তাই আব্বারে শরম দিতেছে।এর বিচার কর।এদিকে বেপারী একটা দড়ি নিয়ে ঘুরছে এ লজ্জা কই রাখবে সে? গলায় দড়ি দেবে সে।বাবাকে জড়িয়ে ধরে মরা কান্না কাঁদছে মেয়েরা।তুফান যায় চাচীর ঘরে বলে” তুই আমার ঘরের থন বাইরাইছস আর আমার ঘরে ঢুকতে পারবি না।তরে আমি তালাক দিলাম।এক তালাক, দুই তালাক,তিন তালাক। অচেতন সাবিনাকে নিয়ে আসে তার পরিবার।
কাবিনের টাকা চুকিয়ে তালাক করিয়ে দেন বেপারী।

তিনমাস পর আজ আবার বর সেজেছে তুফান।বেপারী এবার আর লেখাপড়া জানা মেয়ে আনবে না।ছোট মেয়ে আনবে। হালিমার বয়স পনের লেখাপড়া করেনি তাই আঠারো লিখতে অসুবিধে হয়নি।

সকালে উঠে গোসল সেরে কাপড় মেলছে হালিমা। জানলার ফাক দিয়ে তাকিয়ে বেপারী। চোখ চক চক করছে তার।সাবিনার মত সুন্দর না হইলেও খারাপ না। মনেমনে সাবিনাকে গালও দেন,” মাগী যে বিপদে ফালাইছিল।”এবার মন জয় করে কাজ করবেন।

।পোলারে জমি দিছি,দোকান কইরা দিছি। আর আমি একটু…..চাইছি। অন্যায় কি কইছি এওজ বদল হয় না দুনিয়ায়? লোভী চোখ অন্য দিকে চাইতে ওপারছে না।

আজ আবার তুফানের গন্জে যাবার দিন।

লেখক : শিক্ষিকা ও সাহিত্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!