Home | লোহাগাড়ার সংবাদ | লোহাগাড়ায় যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি

লোহাগাড়ায় যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি

45

এলনিউজ২৪ডটকম : যৌতুক প্রথা সমাজের এক মারাত্মক অভিশাপ। এ অভিশাপ অকল্যাণ বয়ে আনছে অনেক সংসারে। যৌতুকলোভী স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুরীর বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ আবশ্যক। তবে এ ব্যাপারে কঠোর আইন বলবৎ থাকলেও সংশ্লিষ্টরা এ আইন প্রয়োগে সম্পূর্ণ উদাসীন। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সমাজ সচেতন ব্যক্তি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, উপজেলা প্রশাসন, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ সৎ ও আদর্শবান জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা দাবি করেছেন। একই সাথে বিবাহের ঘটক নামধারী টাউট-বাটপারদের কালো তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ও দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় সংক্রামক ব্যাধির বিষ বাষ্পের মতো পুরো সমাজকে কলুষিত করে মানবতাকে কবর দেবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ। গ্রামের সিংহভাগ মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। তারা সহজ-সরল ও খেটে খাওয়া মানুষ। এরপর রয়েছে একশ্রেণীর মানুষ যাদের জীবন-যাপন দারিদ্রতার নিুপর্যায়ে। অন্ন-বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান সংকটে তারা দিশেহারা। অনেক দিন মজুর দিনে আনে, দিনে খায়। তাদের কোন ভোগ বিলাস নেই। রসনা বিলাসে সুস্বাদু খাদ্য তাদের জন্য দুর্লভ সামগ্রী। দুঃখ-দৈন্যতাই তাদের জীবন। সংসার সমরাঙ্গনে তারা ক্লান্ত। অনাদর, অবহেলায় তাদের জীবন তরী ভাসছে কালের প্রহরে। আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতায় কন্যা বিয়ে দানে তারা চোখে দেখে সরিষার ফুল। যৌতুক প্রথার অভিশাপে এ শ্রেণীর অনেক মা- বাপ তাদের কন্য বিয়ে দিতে পারছেনা। পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্নীয়-স্বজনের আর্থিক সহযোগিতায় যৌতুক সামগ্রী ও নগদ টাকা দিয়ে কন্যা বিয়ে দিলেও পরবর্তীতে কন্যার স্বামীর সংসার হয় জ্বালা-যন্ত্রনাময়। অবশেষে, অনাদর ও অবহেলার পাত্রী হয়ে অকালে বিদায় নেয় হত্যা বা আত্মহত্যার মাধ্যমে। অনেক সময় নাছোর বান্দা যৌতুক লোভী স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরীর মানসিক ও দৈহিক জ্বালা-যন্ত্রনার শিকারে মা-বাবাকে দায়মুক্ত করতে অনেক কন্যা আত্মহত্যা করে বিদায় নিচ্ছে সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে। অপরদিকে, এমন লোভী মা-বাবা আছে যারা কন্যার পক্ষ হতে যৌতুক লাভের অন্ধমোহে পুত্রকে বিয়ে করায়।

অনেক কন্যার মা-বাপ ধার, কর্জ করে নতূবা গ্রাম্য সুদী মহাজনদের কাছ থেকে সুদী কর্জ টাকা নিয়ে কন্যার বিয়ে কোন মতে সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে ঐ টাকা পরিশোধ করতে সর্ব-স্বান্ত হয়ে যায়। তবে এ ধরণের অনেক বিয়ে অসামঞ্জস্য হয়। ফলে দিন যেতে না যেতেই স্বামী-স্ত্রীর সংসারে দেখা দেয় মিলের পরিবর্তে গরমিল। এ ধরণের বিয়ের জন্য অন্যতম দায়ী গ্রামের কতিপয় ঘটক নামধারী টাউট-বাটপার। এ সব ঘটকরা উভয় পক্ষ থেকে নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য সাত-পাঁচ-চৌদ্দ করে জোড়া-তালি দিয়ে যৌতুক আদায়-প্রদানের মাধ্যমে বিয়ে পর্ব সম্পন্ন করায়। বিয়ের পর যখনই উভয় পক্ষের ছলনাময়ী কথা-বার্তার গরমিল ভেসে উঠে, তখনই কোন না কোন পক্ষ হতে সুন্দর সংসারে বিষবাষ্প ছড়াতে থাকে। এ গরমিলের হিসেব-নিকাশ মেলাতে শুরু হয় প্রথমে যোগ-বিয়োগের পাতানো খেলা। এরপর ঐ সংসার অনলকুন্ডে পরিণত হয়ে জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে মর্মবেদনায় স্ত্রী বা স্বামীর অথবা কোন না কোন পক্ষের জীবনে সর্বনাশ ঘটে। আর যাচাই-বাছাই করা যৌতুকবিহীন বিয়েতে তেমন গরমিল পরিলক্ষিত হয়না। বিয়ের কথা-বার্তা নিষ্পত্তি হয় উভয়পক্ষের অভিভাবক ও পাড়া-প্রতিবেশী মুরব্বীদের নিয়ে। লোভ-লালসাবিহীন এ’বিয়ে হয় ধর্মীয় অনুভূতি ও সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী। তা’ই ঐ বিয়ে হয় সুন্দর এবং স্বামী-স্ত্রীর সংসার হয় সুখের।

তাই যৌতুক প্রথা নিরসনে দেশের প্রচলিত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করার জন্য লোহাগাড়ার জনগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!