ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য : প্রধানমন্ত্রী

রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য : প্রধানমন্ত্রী

image-114296

নিউজ ডেক্স : সামাজিক সচেতনতার সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়ে তোলার ওপর সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় কেউ যাতে মাদকাসক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সচেষ্ট থাকতে হবে।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ সব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়। কাজেই মানুষের সমস্যা জানার এবং সমাধানের চেষ্টা করি। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এটাই আমার কর্তব্য বলে মনে করি। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতা ভোগ করার বিষয় নয়, জনসেবার বিষয়। সেজন্যই বাংলাদেশের মানুষের কিভাবে কল্যাণ করতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

সরকারের মাদক বিরোধী অভিযানের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, সরকার যাদেরকে আত্মসমর্পন করাচ্ছে (মাদক ব্যবসায়ী), তাদের চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা অন্য কোন ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে ভালভাবে চলতে পারে। এভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে মাদক চোলাচালান হয়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান বন্ধে সরকার পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী মাদক পরিবহণ ও চোরাচালানের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) বিধান রাখা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারি দলের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মাদক নিয়ন্ত্রণে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, সমাজকে মাদকমুক্ত করার জন্য একটি বাস্তবমুখী পরিকল্পনার আওতায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে মাদকের পরিমাণ ভেদে সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহ দ্রুত ও যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও পুলিশের চলমান অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

ঢাকায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা চালু : জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বিআরটিসিসহ গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ বিআরটিসি লাভজনক নয়। আমরা ক্ষমতায় এসে আবার বিআরটিসিকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেই। অনেকগুলো বিআরটিসি বাস ক্রয় করি। কিন্তু আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত তিন থেকে চারশ’ বিআরটিসির বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে মেট্টোরেল, ফ্লাইওভার সবই গণপরিবহণের আওতায় করা হচ্ছে। যানজট নিরসনে বিআরটিসিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্বের সব দেশেই ট্রাফিক সমস্যা আছে। লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় দেশেরও এ সমস্যা রয়েছে। কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে, মানুষের আর্থীক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি বলেন, ঢাকার যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা ও ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে। এটা চালু হলে যানজট নিরসন আরও কার্যকর হবে। সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা : জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দেশের সকল গ্রামকে শহরের সুযোগ সুবিধা দিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকান্ড বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অকৃষি খাতের অবদান বেড়ে চলেছে। তিনি জানান, স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লব, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

ঢাকার শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ : সরকারি দলের সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীরে যানজট সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে গত ১০ বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হলে খুব শীঘ্রই ঢাকা মহানগরীর যানজট মুক্ত করা হবে আশা করা যায়। আগামী দিনের পরিকল্পনার মধ্যে ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে।

যানজট নিরসন : রাজধানীর যানজট নিরসনে পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও পাশ্ববর্তী মহানগরীর সঙ্গে দ্রুত গতির আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থা হিসেবে কমলাপুর হতে নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণ, গাবতলী হতে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ঢাকা শহরের চারিদিকে দুইটি রিং রোড (ইনার ও মিডল) নির্মাণ, পিপিপি ভিত্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, যান্ত্রিক কার পার্কিং সিস্টেম চালুকরণ, পথচারী বান্ধব সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়ন, আমিনবাজার হতে গাবতলী-রাসেল স্কয়ার-নিউমার্কেট হয়ে পলাশী/আজিমপুর পর্যন্ত মিরপুর রোডে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর মাধ্যমে এলিভেটেড বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে।

জঙ্গিবাদ নির্মূলেও জিরো টলারেন্স নীতি : সরকারি দলের সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জঙ্গীবাদ নির্মূল সংক্রান্ত বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জঙ্গীবাদ দমনে পুলিশের অপারেশনাল ও লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্পেশালাইজড নতুন ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) গঠন, বাহিনীর সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, জঙ্গী সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করতে হ্যালো সিটি, রিপোর্ট টু র‌্যাব প্রভৃতি অনলাইন এ্যাপস চালু করা হয়েছে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত ও আটক জঙ্গীদের নিবিড় নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জঙ্গীবাদ দমনে সফলতা বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

চারটি স্যাটেলাইট সিটি : সরকার দলীয় সদস্য বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য ইতোপূর্বে রাজধানীর পাশ্ববর্তী এলাকায় চারটি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের লক্ষ্যে পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই চারটি স্যাটেলাইট সিটি হচ্ছে- বংশী-ধামরাই স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ধলেশ্বরী-সিংগাইর স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ইছামতি- সিরাজদিখান স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন এবং সাভার স্যাটেলাইট টাউনে হাইরাইজ এপার্টমেন্ট প্রকল্প। প্রকল্পগুলো পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রাজধানী পাশ্ববর্তী এলাকায় ৪টি স্যাটেলাইট সিটি বিশেষ করে ঢাকা উত্তরে ও দক্ষিণে রাজউক কর্তৃক দু’টি এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পশ্চিমে ও দক্ষিণে আরো দু’টি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!