Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মোটরসাইকেল চুরিতে ‘অদ্ভুত সিস্টেম’

মোটরসাইকেল চুরিতে ‘অদ্ভুত সিস্টেম’

নিউজ ডেক্স : নগরীতে মোটরসাইকেল চোর চক্রের অন্তত ৯টি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল বিক্রির পাশাপাশি সীমান্ত ডিঙিয়ে পার্শ্ববর্তী ভারত ও মিয়ানমারে পাচার করে দিচ্ছে। বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ভারত থেকে আসছে সেই দেশে চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল ও ফেনসিডিল।

সামপ্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্যরা চাঞ্চল্যকর এই তথ্য জানায়। পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, চুরি ঠেকাতে বিশেষ অভিযান চলার ফাঁকেও প্রতিদিন নগরীতে তিন-চারটি মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, চক্রের সদস্যরা সুশৃক্সখল। প্রত্যেকের কাজ ভাগ করা আছে। মোটরসাইকেল চুরি করা থেকে বিক্রি করা পর্যন্ত পাঁচ ভাগে ভাগ হয়ে তারা এ কাজ করে।

চোর চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে গঠিত বিশেষ অভিযান টিমের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য উঠে এসেছে। অভিনব সব কৌশলে দিনে-রাতে যেকোনো সময় চুরি যাচ্ছে মোটরসাইকেল। চোর চক্রগুলোকে ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে, ধরা পড়ছে এক বা একাধিক চোর। কিন্তু চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধারের সংখ্যা হাতেগোনা। আবার যে ক’টি উদ্ধার করা হয়, তার ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর পরিবর্তন করায় মূল নম্বরটি শনাক্ত করা যায় না, তেমনি পাওয়া যায় না মোটরসাইকেলের বৈধ মালিককেও।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান চোরাই মোটরসাইকেল গ্রুপ ধরতে ভূমিকা রেখে চলেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, চুরি করা মোটরসাইকেল বিক্রি হয় অনলাইনে। কখনো আবার চোরাই পথে চলে যায় সীমান্তের ওপারে। বিনিময়ে সেখান থেকে আসে চোরাই মোটরসাইকেল।

মোটরসাইকেল চুরি করা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া আছে সদস্যদের। পৃথক একটি গ্রুপ রাখা হয়েছে যারা মোটরসাইকেল চুরিতে জড়িত নয়। তবে ভারত থেকে চোরাই পথে মোটরসাইকেল এনে বিক্রি করে থাকে। তাদের প্রত্যেকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বন্ধুদের মধ্যে আছে নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের হয়ে কাজ করা এজেন্ট। ফেসবুকে নির্দিষ্ট মোটরসাইকেলের ছবি দেয়। কারো পছন্দ হলে যোগাযোগ করে। তবে এখানেও তারা একটি সিস্টেম মানে, যাতে ধরা না পড়ে। মোটরসাইকেল যে এলাকা থেকে চুরি হয়েছে ক্রেতা যেন কোনোভাবেই সেই এলাকা বা তার আশেপাশের কোনো এলাকার না হয়, সেটা লক্ষ্য রাখে তারা। লোভনীয় দাম পেলেও যদি এলাকা পছন্দ না হয় তবে তারা মোটরসাইকেল বিক্রি করে না।

তিনি বলেন, ভারত থেকে আনা মোটরসাইকেল হলে তাদের সংকেত ‘দুই চাবি’। আর এখানে চুরি করা মোটরসাইকেলের সংকেত ‘এক চাবি’। ফোনে একজন আরেকজনের সাথে আলাপচারিতায় এ সংকেত ব্যবহার করলে মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত কোনো কথা হচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারে না। এসব মোটরসাইকেল তারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কখনো এক লাখ, কখনো বা ৭০/৮০ হাজার টাকা কম মূল্যে বিক্রি করে।

নগরীতে সক্রিয় ৯টি গ্রুপ এখন মোটরসাইকেল চুরি করছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এর মধ্যে বাবরের গ্রুপটি পাহাড়তলী, হালিশহর ও ডবলমুরিং এলাকায় অপরাধ করে। এখানে অপরাধ করা সহজ। কারণ অলংকার, সরাইপাড়াসহ বেশ কিছু জায়গায় ভাসমান বেশ কিছু লোক বাস করে। তাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থেকে অপরাধ করায় তারা সহজে ধরা পড়ে না।

এছাড়া ইউছুফ গ্রুপ বেশিরভাগ মোটরসাইকেল কোতোয়ালী, বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে চুরি করে। মাজহার ও ফরহাদ মুরাদপুর কেন্দ্রিক একটি গ্রুপ পরিচালনা করে। এ গ্রুপের চুরি করা মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া হয় ফরহাদের ফটিকছড়ির বাড়িতে। সেখান থেকে বিক্রির জন্য নেয়া হয় হাটহাজারী, খাগড়াছড়ি বা রাঙামাটিতে। আবার অলঙ্কার কেন্দ্রিক একটি গ্রুপ আছে। এ গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় সন্দ্বীপের কবীর।

গ্রেপ্তারকৃত চোরদের তথ্য মতে, মোটরসাইকেল চুরি করতে তারা মোটরসাইকেলে নগরীতে ঘুরে বেড়ায় এবং বিভিন্ন মোটরসাইকেল আরোহীকে অনুসরণ করে। মোটরসাইকেল থেকে নামার পর তাদের একজন ওই আরোহীর পিছু নেয়। অপরজন রাস্তায় বা পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেলে উপর বসে পেপার পড়ার ভান করে তাদের কাছে থাকা বিশেষ চাবি দিয়ে সেটির লক খোলার চেষ্টা করে। লক খোলা সম্ভব হলে সেটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর অপর সহযোগী এসে তার মোটরসাইকেল চড়ে পালিয়ে যায়। চোরেরা মোটরসাইকেলগুলোর নম্বর প্ল্লেটের নম্বরগুলো রং দিয়ে ঢেকে ‘অন টেস্ট’ ‘প্রেস’ বা ‘সাংবাদিক’ স্টিকার লাগিয়ে দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চুরির আগে তারা সুযোগমতো ওই মোটরসাইকেলটির লক পরখ করে দেখে।

চোরের দল চুরিতে সবসময় নতুনগুলোকে প্রাধান্য দেয়। বিক্রির সময় তারা জানায়, ভারত থেকে চোরাপথে এনেছে বলে দাম কম। কাগজপত্র নিজেদের করে নিতে হবে। পার্টি মোটরসাইকেলটি চোরাই বলে লাভের লোভে গোপনে কিনে নেয়। মোটরসাইকেল চুরির পর তারা দ্রুত নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যায়। এ কাজে ছুটির দিনটি বেশি ব্যবহৃত হয়। কারণ ওই মানুষের আনাগোনা কম থাকে। -আজাদী প্রতিবেদন 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!