নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামে ৪০৫ ইটভাটার মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন রয়েছে মাত্র ৫০ টির। দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চলছে ৩৫৫ টি ভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে এই তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত্র আইনের ৪ নং ধারায় লাইসেন্স ব্যতীত ইট তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার প্রতিটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ইটভাটা চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও হাটহাজারী উপজেলায় আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র ইটভাটা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ইটভাটা চলে আসলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইটভাটার মালিকেরা জানায়, ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন ও লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে পরিবেশ দূষণরোধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ইটভাটার মালিকদের বশে আনা যাচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘লাইসেন্সের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের এখতিয়ার। তারপরও লাইসেন্স নবায়ন না করে অবৈধভাবে ইটভাটা চালানো হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ অবৈধভাবে ইটভাটা চললে তাকে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।
অতিসম্প্রতি ঢাকার পরিবেশ দূষণরোধে ঢাকা ও ঢাকায় আশপাশের ইটভাটা স্থানান্তরের নিদের্শনা দিয়েছে উচ্চ আদালত।
চট্টগ্রামে আইনের তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ইটভাটা চলে আসলেও নীবর ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে, ‘ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করিতে পারিবেন না। লাইসেন্স ছাড়া ইট উৎপাদন করলে অনধিক এক বছরের কারাদ- বা এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।’
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ৪০৫ ইটভাটার মধ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাত্রপত্র রয়েছে ২৬২টি ইটভাটার। ৩৫৫টি ইটভাটার পরিবেশ সংক্রান্ত লাইসেন্স হালনাগাদ করেনি। এবং ১৪৩টি ইটভাটার লাইসেন্সই নেই। পরিবেশ আইন অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তি জিগজ্যাগ চিমনি রয়েছে ১১৯টি ইটভাটার। উন্নতমানের অত্যাধুনিক হাইব্রিড হফম্যান কিলনধারী ভাটা রয়েছে মাত্র একটি ও অটো টানেল কিলন ভাটা রয়েছে দুটি। পরিবেশ আইনের ৪ উপধারায় এসব ইটভাটাকে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৩০ জুনের পর থেকে ৮০-১২০ ফুট উচ্চতার চিমনিধারী ইটভাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই হিসাবে ইটভাটা রয়েছে ২৮৩টি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এ বলা হয়েছে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ কিলন, হাইব্রিড হফম্যান কিলন, ভার্টিক্যাল শ্যাফট ব্রিকস কিলন, টানেল কিলন বা অনুরূপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।
কিন্তু দেখা যায়, অধিকাংশ ইটভাটাই আধুনিকপ্রযুক্তি সম্মত নয়। আবাসিক-জনবসতি এলাকা, ফসলি জমি, বনভূমি ও নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বহু ইটভাটা।