ওমর ফারুক : ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় জীবনে প্রথম টাই পরা মানুষ দেখেছিলাম। আমাদের এলাকায়; পাগলা ডাক্তারকে। ডাক্তারের উপরের টাইটা ঠিকঠাক থাকলেও শার্টের দুই-তিনটা বোতাম নিয়মিত খোলা থাকতো। কখনো-সখনো প্যান্টের জিপারও খোলা থাকতো।
কুতুবদিয়ার মানুষ হলেও ডাক্তার মাঝেমাঝে আমাদের টৈটং এ রোগী দেখতে আসতেন। সকালের দিকে মানুষকে বেশ ভালো চিকিৎসা দিতেন বলে একটা প্রচার ছিলো। আস্তে আস্তে বেলা গড়ালে তাঁর সবকিছু নাকি তালগোল পাকিয়ে যেতো। আমাদের জাকের স্যার বলতেন, পাগলা ডাক্তার আমার এলাকার লোক। ছোটবেলা থেকে মানুষটা খুব জ্ঞানী ছিলো। স্ট্যান্ড করেই ডাক্তারি পড়তে গেছিল। পরে ক্যামনে ক্যামনে মাথাটা আউট হয়ে গেছে।
সেই থেকে টাই পরা মানুষ দেখলে তাদের আমার জ্ঞানী মনে হতো। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগতো। জ্ঞানী হয়ে যাওয়ার ভয়ে নিজে কখনো টাই পরতে সাহস করি নাই। সবসময় মনে হতো টাই পরলে যদি আবার জ্ঞানী হয়ে যাই! মাথা আউলাইয়া যায়।
এলএলবিতে চান্স পেয়েছিলাম কিন্ত টাই পরে জজের সামনে যেতে হবে ভয়ে ভর্তি হইনি। টাই পরে নিয়মিত প্রেজেন্টেশন দিতে হয় শুনে কখনো বিবিএ এর কথা চিন্তা করি নাই।
এমনকি আমার কখনো ডেসটিনি করা হয়নি। ভার্সিটির বন্ধুরা যখন দলে দলে, শ’য়ে শ’য়ে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাচ্ছিলো তখন আমি নিজেকে কোয়ারেন্টাইন করে রেখেছিলাম। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভও আমাকে টাই পরাতে পারেনি। পাছে যদি জ্ঞানী হয়ে যাই, মাথা আউলাইয়া যায়।
এখনও কোথাও টাই পরে যেতে হবে শুনলে আমি লজ্জাবতী গাছের মতো চুপসে যাই। নানা অজুহাত দেখাই, লুজ মোশনের অভিনয় করি। অনেক সামাজিক প্রোগামে টাই ছাড়া গেলে বেখাপ্পা লাগে, মনে হয় জাতি আমাকে মেনে নিবে না। তারপরও লুকিয়ে লুকিয়ে যাই এবং কাজ শেষে টুক করে পালিয়ে আসি।
সেই আমি জীবনে একবারই টাই পরেছিলাম। ২০১২ সালে সমাবর্তনের দিনে। ফাঁসির দড়ির মতো সেই টাই গলায় ঝুলিয়ে প্রথম এবং শেষবারের মতো ঘুরে বেড়িয়েছিলাম কার্জন হল থেকে টিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ থেকে সিনেট ভবন।
ভাভা গো ভাভা। এসব ভাবা যায় এখন! লেখক : সহকারী শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।