Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : বিদ্যুতায়িত হয়ে শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

চট্টগ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : বিদ্যুতায়িত হয়ে শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

chittagong-rain-2-20180611145134

নিউজ ডেক্স : দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম প্রবল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। রাতভর বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকায় পানি জমে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে এক শিশুসহ তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাতসহ চলতি বর্ষায় বেশ কয়েকবার জলাবদ্ধতার ভোগান্তির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা। বার বার জলাবদ্ধতা হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন পানি জমে যাওয়া এলাকার লোকজন।

তারা বলছেন, বৃষ্টিতে বার বার জলাবদ্ধতা হলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না।

সাগরে মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে নগরীতে শুক্রবার (৮ জুন) বিকেল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। আজ সোমবার সকালেও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা সোমবার ভোরের দিকেই তলিয়ে যায়।

এদিকে নগরীতে বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে নগরের বাকলিয়ায় ফাতেমা আক্তার মিম (৮) নামের এক শিশু, নিউমার্কেটের বিআরটিসি এলাকায় কলেজ ছাত্র শহীদুল আলম (১৯) ও নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (১০ জুন) রাতে পৃথকভাবে এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।

শিশু ফাতেমা আকতার কুমিল্লার মুরাদনগরের শাহ আলমের মেয়ে এবং শহীদুল আলম বাঁশখালী উপজেলার কদমরসুল শেখপাড়ার মো. হোসেনের ছেলে। সে নগরের দেওয়ানহাট সিটি কর্পোরেশন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘বাকলিয়ার মরিচের মিল এলাকায় বৃষ্টির পানিতে ঘরের দরজায় বিদ্যুতায়িত হয়ে এক শিশু গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

এছাড়া বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে নগরের বিআরটিসি এলাকায় এক কলেজ ছাত্র গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া অজ্ঞাত এক যুবক বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন বলে জানান আলাউদ্দিন তালুকদার।

এদিকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

chittagong-rain-6-20180611145027

পতেঙ্গা আবওহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শ্রীকান্ত ও মিলি রহমান জানান, যেখানে বর্ষা মৌসুমে সাধারণত গড়ে ৪০-৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি চলতি বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ, চান্দগাঁও, জিইসি মোড়, বাকলিয়া চকবাজার, বাদুরতলা, হালিশহর, কাতালগঞ্জ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু পানি জমে গেছে।

জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেইট এলাকার পানি দুপুর ১২টার পরে অনেকটা নামলেও আগ্রাবাদ, বাদুরতলা, চকবাজারসহ নিচু এলাকায় পানি থেকে যায়। পানিতে বিভিন্ন সড়ক, গলিসহ পাড়া মহল্লার বিভিন্ন ভবনের নিচতলার বাসা ডুবে গেছে।

এতে করে চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়ে। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল কমে যায়। কোথাও কোথাও সড়কে জমে থাকা পানিতে বাস-অটোরিকশাসহ যানবাহন আটকে গিয়ে ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করে।

আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকার বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে নিচতলা ডুবে গেছে। কয়েকদিন আগেও বৃষ্টিতে পানিবন্দী ছিলাম। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’

একই এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাহার এগ্রোর সহকারী ব্যবস্থাপক মো. সারওয়ার জানান, প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। দোকান খোলা যাচ্ছে না।

পানি জমে ভোগান্তিতে পড়া আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারি পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তাদের এলাকায় অতি বৃষ্টিতে পানি জমলে তা সরে না।

স্থানীয় আনোয়ার জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি ওঠা এবং কয়েকদিন ধরে জমে থাকা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব নিয়ে আপনারা লিখে, টেলিভিশনে দিয়ে কী করবেন? যাদের কাজ তারা তো কিছুই করছে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!