নিউজ ডেক্স : এক কোটির বেশি নাগরিকের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড প্রিন্ট হচ্ছে না। তথ্যের ঘাটতি থাকায় তাদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করা ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে ইসি সচিব, এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, এনআইডি অণুবিভাগের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ভোটারদের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ কার্ড তথ্যগত সমস্যার কারণে প্রিন্ট হয়নি, যা ‘নট ফাউন্ড ডাটা’ নামে পরিচিত। এসব ভোটারের স্মার্ট এনআইডি কার্ড এখন পর্যন্ত প্রিন্ট করা সম্ভব হয়নি। আবার ২০১৯ সালের ভোটারদের সরাসরি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ফলে কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে ভোটারদের মাঝে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে যেখানে, অনেকে ভাবছেন আগে ভোটার হয়েও তারা স্মার্ট কার্ড পাচ্ছেন না। আবার পরে ভোটার হয়ে তারা স্মার্ট কার্ড পাচ্ছে।
২০০৮ সালে ভোটার ছিল ৯ কোটির মতো। এক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোটারের তথ্য খুঁজে না পাওয়া মানে হচ্ছে এক কোটির বেশি নাগরিক স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না।
কর্মকর্তারা বলছেন, এই তথ্য না পাওয়ার অর্থ কিন্তু তথ্য মুছে গেছে বা নেই, তা নয়। স্মার্টকার্ড প্রিন্ট হয় স্বয়ংক্রিয় মেশিনে। এক্ষেত্রে কোনো ভোটারের ১৮ ধরনের তথ্য না থাকলে সেটাকে মেশিন বা সিস্টেম ‘নট ফাউন্ড ডাটা’ দেখায়। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভোটারের কার্ডটিও প্রিন্ট করা থেকে বিরত থাকে।
এ বিষয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের স্মার্টকার্ড প্রকল্পের অপারেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়ড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান বলেন, যেহেতু নির্দিষ্ট সংখ্যক তথ্য না থাকলে কার্ড প্রিন্ট হয় না, সেহেতু তথ্য পূরণ করে দিলেই হবে। এজন্য যার যার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে ফরম পাওয়া যাবে। সেখানে পূরণ করে জমা দিলে সাতদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কার্ড প্রিন্ট হয়ে যাবে। একমাসের মধ্যেই সেটা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, এবং তথ্যপূরণকারী তা পেয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, কোনো কারণে হয়তো অনেকে নিজ উপজেলা বা অন্য তথ্য ভোটার হওয়ার সময় পূরণ করেননি, সেক্ষেত্রে এই সমস্যাটা হচ্ছে।
আইডিইএ (স্মার্টকার্ড) প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল কাদের জানিয়েছেন, ৬ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬ কোটি ৩৩ লাখ কার্ড উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আর বিতরণ হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ স্মার্টকার্ড। স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণ চলমান।
তিনি বলেন, স্মার্টকার্ড উৎপাদনকারী ফরাসি কোম্পানি ওবার্থারের কাছ থেকে ৯ কোটি কার্ড পাওয়ার কথা থাকলেও আমরা ৭ কোটির কিছু বেশি কার্ড পেয়েছিলাম। আরও দুই কোটি কার্ড আমাদের হাতে নেই। ২০২৫ সালের মধ্যে নিবন্ধিত সব নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার জন্য আমরা সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।
বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন ভোটারের তথ্য আছে। ২০২৫ সাল নাগাদ আরও প্রায় চারকোটির মতো ভোটার যুক্ত হবে। সেই সঙ্গে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদেরও স্মার্টকার্ড দেবে ইসি। সেই হিসেবে এ সময়ের মধ্যে আরও প্রায় ১০ কোটির মতো স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণ করতে হবে। বাংলানিউজ