Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম 

কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম 

নিউজ ডেক্স : সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে চালের। এর মধ্যে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা, আর চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত।

বন্যার প্রভাব ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির পর এবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যবাসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিলাররা চাল মজুত করে সংকট সৃষ্টি করছেন। আর তাতেই বাড়ছে চালের দাম। চালের আগেই দাম বেড়েছে সয়াবিন তেল, ডিম ও সবজির। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষ।  

বাড্ডা এলাকায় ৫ বছর ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন কিশোরগঞ্জের নাইম মিয়া। তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। কয়েকদিন আগেও ৫২ টাকা কেজি চাল কিনেছি। আজ গিয়ে দেখি সেই চাল ৫৮ টাকা কেজি। আমাকে বাড়তি টাকা কে দেবে? সব কিছুর দাম বাড়তি, কীভাবে চলব?  

শনিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে। আর মাঝারি মানের মোটা পাইজাম কিংবা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগের দিনও এ দুই ধরনের চাল বিক্রি হয়েছে ৪৬ টাকা ও ৫২ টাকা কেজিতে।  

বিআর ২৮ ও ২৯ জাতীয় চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৪ এবং নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অথচ এক সপ্তাহ আগেও বিআর ২৮ জাতীয় চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিল ৬৮ থেকে ৭২ এবং নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এসব চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা করে। এ ছাড়া সব ধরনের পোলাও চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা।  

বাজারে চাল কিনতে আসা অজিজুল হক বলেন, দাম তো বাড়ছেই। যত দিন পারি কিনব, খেয়ে তো থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা তো চাইলেই কিছু করতে পারি না, আমাদের কিছু করার নেই।

কারওয়ান বাজারে নওশীন আজিজ নামে একজন ক্রেতা বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আর কয়দিন যে আমরা চলতে পারব বলতে পারছি না। 

মহাখালীর ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের চাল ব্যবসায়ী সুমন পাটোয়ারী বলেন, চালের দাম বস্তায় বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। মোটা পাইজাম চাল আগে কেনা ছিল ২৪০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি ওজন)। সেই বস্তা আজ কেনা পড়েছে ২৬৫০ টাকা। যাতায়াত খরচসহ আমার কেনা পড়ছে ৫৫ টাকার বেশি। তাই বিক্রি করছি ৫৭-৫৮ টাকা। এভাবেই সবধরনের চালের দাম বেড়েছে।

গুলশানের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, রশিদের মিনিকেটের বস্তা ছিল ৩৩৫০ টাকা। সেই বস্তা আজ আমাকে কিনতে হয়েছে ৩৫৫০ টাকায়। খরচসহ ৭৩ টাকা কেজি কেনাই পড়েছে। বিক্রি করতে হবে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা কেজিতে। অথচ এই চাল এক সপ্তাহ আগে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এছাড়া ৩৫০০ টাকার নাজিরশাইল চালের বস্তা ৩৮শ টাকায় কেনা পড়ছে। খরচসহ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।    

কারওয়ান বাজারের চাটখিল রাইস এজেন্সির কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, লোডশেডিং ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে চাল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি যাতায়াত ভাড়া বেড়েছে। এ কারণে এখন চালের দাম বাড়ছে। মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চালের দাম প্রতিদিনই দুই-এক টাকা করে বাড়ছে। আড়ৎদাররা বলেন, তেলের দাম বেড়েছে তাই চালের দাম বাড়ছে।

চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নাজমুস সাকিব বলেন, বন্যার কারণে এ বছর চালের উৎপাদন কম হয়েছে। এরপর সরকার চাল আমাদানির উদ্যোগ নিলেও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে চাল আনা হয়নি। এখন নতুন করে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ ও যাতায়াত খরচ বেড়েছে। ফলে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। 

একই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মন্ডল হোসেন বলেন, মিলাররা চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। তারা দাম বাড়িয়েছেন, আস্তে আস্তে চাল ছাড়বেন। এ কারণে চালের দাম বাড়ছে।   

সরকার কী করছে
দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে, শুল্ক কমিয়েছে, বাজারে অভিযানসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে তাতে খুব বেশি সুফল মেলেনি। সরকার ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমতি দিলেও আমদানি হয়েছে খুবই কম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য মতে, এ পর্যন্ত মাত্র ১৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে বেসরকারিভাবে।

সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, যারা অবৈধ মজুত করে চালের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিলাররা ধান ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুত করে রাখতে পারবে না। যারা অবৈধভাবে মজু করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত উৎপাদন আছে, সরবরাহ আছে অথচ চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধানের যদি ঘাটতি থাকত, তাহলে আমদানি করে তা পুষিয়ে নেওয়া হতো। কিন্তু আমদানির লাইসেন্স দেওয়ার পরও তো আমদানি করেননি। ১৭ লাখ মেট্রিক টনের আমদানির অনুমতির জায়গায় মাত্র ৩ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করেছেন। তার মানে পর্যাপ্ত চাল আছে। তাহলে দাম বাড়ছে কেন? ব্যবসায় মুনাফা করতে হয়। তার মানে এই নয় যে,মানুষের গলা কেটে মুনাফা করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়ানো কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না। -ঢাকা পোস্ট 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!