Home | উন্মুক্ত পাতা | কুয়াকাটা : সাগর কন্যার মোহনীয় হাতছানি

কুয়াকাটা : সাগর কন্যার মোহনীয় হাতছানি

16935760_1194788190635325_2010584321_o

____এম.হোছাইন মেহেদী____

প্রথম পর্ব

এক
ইদানিং ভ্রমণের প্রতি প্রচন্ড দূর্বল হয়ে পড়ছি। তাই অনেক দূরের যাত্রা জেনেও কুয়াকাটা ভ্রমণের সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। ২২ ফেব্রুয়ারি দুপর ২ টায় শুরু হলো যাত্রা। প্রায় রাত ২ টায় পৌঁছলাম মাওয়া ফেরিঘাটে। প্রায় তিন ঘন্টা পর অনেক ঝক্কি-ঝামেলা সহ্য করে পদ্মা নদী ফেরি দিয়ে পার হলাম।
বুঝতে পারলাম পদ্মা সেতু নির্মাণ এই অঞ্চলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে ৩/৪ ঘন্টার পথ খুব অল্প সময়ে নিমিষেই পাড়ি দেয়া সম্ভব পদ্মা নদী।
মাঝখানে আবার পায়রা বন্দরের লেবুখালি ফেরি। ফেরি দিয়ে পার হওয়া কত ঝামেলা সেটা আগে জানা ছিলো না। গাড়ির লাইন লম্বা হলে তো আর কোন কথাই নেই। দ্বিগুণ সময় নষ্ট হবেই, বাড়বে বিরক্তিও।
বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঝালকাঠি আংশিক, গোপালগঞ্জ আংশিক, বরগুনা ও পটুয়াখালীসহ সাতটি জেলার বুক চিরে পরদিন দুপুর ১২ টায় সর্বমোট একটানা বাইশ ঘন্টা বাসে চড়ে পৌঁছলাম গন্তব্যস্থান কুয়াকাটায়।

দুই
ফরিদপুর, মাদরীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনার জেলার ষ্টেশনগুলো দেখে খুব মায়া হলো। যদিও আমার জানা নেই এগুলো সংশ্লিষ্ট জেলার প্রধান ষ্টেশন কিনা?
মানের দিক দিয়ে ষ্টেশনগুলো বটতলী সদর ষ্টেশনের কাছাকাছি মনে হলো। অবশ্য আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। রাস্তার দু’পাশের খুব একটা বাড়ি-ঘর নেই। যেগুলো আছে তা দেখে সহজেই যে কেউ অনুমান করতে পারে এদের জীবন যাত্রার মান কেমন? মনটাও হাহাকার করে উঠলো। নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসলো আলহামদুলিল্লাহ আমরা বেশ ভালোই আছি। আমরা বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কথাই বলছিলাম। তাদের ঘর-বাড়িগুলো দেখে মুহুর্তেই উবে যেতে পারে নিজেদদের বাড়ি-ঘর করতে না পারার দুঃখ। রাস্তার পাশের দোকান-পাটগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও জিডিপি বৃদ্ধির গল্পের সাথে এদের জীবন যাত্রার মান সম্পূর্ণ বিপরীত মনে হলো। মধ্য আয় ও উন্নত দেশ হওয়ার গল্প এদের কাছে যেন আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। খুব ইচ্ছে করছিল দোকান-পাট আর ঘর-বাড়িগুলোর কয়েকটি স্থিরচিত্র নিই। মুঠোফোন চার্জশূণ্য ও ক্যামেরা হাতের কাছে না থাকায় সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

তিন
পথে পথে কলা গাছ, তাল গাছ, খেঁজুর গাছ ও নাম নাজানা নানান প্রজাতির সবুজাভ গাছের সারি। দেখে মনে হলো প্রকৃতির নানা রং আর সাজ-সজ্জা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে পর্যটন এলাকা কুয়াকাটায়। রাস্তার দু’পাশে দোকান-পাট আর ঘর-বাড়ির পাশাপাশি নয়ন জুড়ানো সবুজ মাঠ ভরা নানান ফসল। কেন এদেশকে কৃষি প্রধান দেশ বলা হয় তা এই এলাকাগুলোতে আসলে সহজেই যেকেউ বুঝতে পারবে। সবুজ ফসলের মাঠে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে তাল গাছ ও খেজুর গাছ। ধান, তরমুজ, করলা, ভূট্টা, তাল, সুপারি ও নারকেল এলাকার প্রধান ফসল বলে এক কৃষক জানান। শুটকিও পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে।
কুয়াকাটা সদরে বাঙ্গালিদের পাশাপাশি রাখাইন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে সংরক্ষিত বাণিজ্যিক মার্কেট। এলাকার মসজিদগুলোতে মুসল্লির উপস্থিতিও বেশ। মাথায় টুপি ও শুশ্রূষামন্ডিত মুরুব্বিদের দেখতে-শুনতে বেশ দেখাচ্ছিল। স্থানীয় মহিলারা কঠোরভাবে পর্দা অনুসরণ করতে দেখা যায়।

চার
বিকেলে বের হলাম ভ্রমণে। প্রথমে গেলাম কুয়াকাটা সি-বিচে। দেখে মনে হলো এ যেন প্রকৃতির নিপুণ ছোঁয়ায় সৃষ্ট কক্সবাজারের কার্বন কপি। পর্যটকদের আনাগোনাও মন্দ নয়। কিছুক্ষণ বিচের হিমেল হাওয়ায় সিক্ত হওয়ার পর এলাকার লোকাল বাহন অটো-রিক্সায় ( ব্যাটারি চালিত ভ্যান গাড়ি) চেপে রওয়ানা দিলাম তাহেপুরের দিকে। যেখানে অবস্থিত এক কুয়া ও প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির। সাথে ছিলেন আরো দু’জন। অটোরিক্সা চালক স্থানীয় ছিদ্দিক মুসল্লির সাথে দরদাম হলো তিনশ টাকায় তাহেরপুর যাওয়া-আসা। দশ-বার মাইলের পথ। পথিমধ্যে তিনিও আমাদের সাথে গল্প-গুজবে যোগ দিলেন। জানতে পারলাম এ এলাকার এম,পি মাহবুব হাওলাদার। ৫ ই জানুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনের কথা ছিদ্দিক মুসল্লি নিজ থেকেই বলে উঠলেন। আক্ষেপ ও হতাশা ঝরে পড়লো তার কন্ঠে। কারণ জানালেন, কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই নাকি ভোট গ্রহণ শেষ!

চলবে=========

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*