নিউজ ডেক্স : বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রবেশ ও বহির্গমন পথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বলছে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের ডান পাশের পাখায় লেগে রানওয়েতে বিচরণ করতে থাকা দুটি গরুর মৃত্যু হয়।
বিমানটি সফলভাবেই ঢাকায় এসে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে গরু দুটি কিভাবে নির্বিঘ্নে রানওয়েতে পৌঁছালো। নিয়মিত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে যাতায়াত করেন এমন একজন যাত্রী বলছেন রানওয়েতে গরুর সাথে বিমানের সংঘর্ষের খবর তাকে অবাক ও বিচলিত করেছে। যদিও তিনি তার নাম প্রকাশ করতে রাজী হননি।
তিনি বলেন, গরু কিভাবে এয়ারপোর্টে গেলো সেটা হলো প্রথম কথা। ”শুধু গরু মারা গেছে তাই নয়, যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো বা বিমানটি দুর্ঘটনা কবলিত হতে পারতো বা মারাও যেতে পারতো। ”রানওয়ে কিন্তু অনেক দূরে। এত দূর গরু কিভাবে গেলো? কেউ দেখলোনা টেক অফের সময়,” তিনি বলেন। তবে এ প্রশ্নের জবাব এখনো মেলেনি কারও কাছ থেকে। কর্তৃপক্ষ দায়িত্বে থাকা চার আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করেছে আজ বুধবার।
পর্যটক আর আন্তর্জাতিক সংস্থা
আরও কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মোহাম্মদ নাঈমুল হক বলছেন কিভাবে গরু সেখানে গেলো সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে সংস্কার কাজের সুযোগে এটি ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
তিনি বলেন, “বিমানবন্দরের রানওয়ে বাড়ানো হচ্ছে। যে কারণে এয়ারপোর্টের সীমানার কিছু অংশে কাজ চলছে যা পুরোপুরি শেষ হয়নি। ওখানে আনসারদের একটা পোস্ট আছে। সম্ভবত আলো কম ছিলো। দুটো গরু ভেতরে ঢোকে পড়ে। ওই কারণে ঘটনাটি ঘটেছে”।
সমুদ্র সৈকত থাকায় কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক দেশী বিদেশী পর্যটক ছাড়াও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন অনেক দেশী বিদেশী সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা নিয়মিত এই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেন।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মিলে মোট আটটি বিমানবন্দর আছে। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাজ শুরু হয়েছে।
আবার যুক্তরাষ্ট্রের নাইন ইলেভেনে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর সারা বিশ্বেই বিমানবন্দর ও বিমান চলাচলে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সব বিমানবন্দরেই প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিখুঁত করতে সব ধরণের চেষ্টা চলছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দটির রানওয়েতে গরু যাওয়ার ঘটনাকে বিস্ময়কর বলছেন এভিয়েশন বিষয়ক বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম।
নিরাপত্তা ঘাটতি
“বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্স যাচ্ছে, বিদেশী গুলোও আসছে। কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিক ও এভিয়েশন হাব করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যখন আন্তর্জাতিক করা হচ্ছে, রানওয়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে সেসময় এটা সত্যিকারভাবেই একটা সেটব্যাক। এটা অমার্জনীয়। ভবিষ্যতে যাতে না হয় আর সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত”।
মিস্টার আলম বলেন দেশের বেশ কয়েকটি ছোট বিমানবন্দরেই নানা ধারণে নিরাপত্তা ঘাটতি আছে যেগুলো নিয়ে কর্তৃপক্ষের এখনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
তবে সিভিল এভিয়েশনের অপারেশন্স ও প্ল্যানিংয়ের দায়িত্বে থাকা সদস্য এয়ার কমোডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী বলছেন নিরাপত্তা নিয়ে সব বিমানবন্দরেই যথাযথ ব্যবস্থা আছে। তবে এর মধ্যেও কক্সবাজারের ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তারা এখন তা নিয়ে তদন্ত করছেন যে কিভাবে রানওয়েতে গরু পৌছালো।
” যে গরু ঢুকছিলো সেটা হয়তো সীমানা প্রাচীর দিয়ে চলে এসেছিলো। সাধারণ সবসময় সিকিউরিটি থাকে ও সবসময় প্যাট্রোল চলে। এক্সিডেন্টালি কিভাবে গরু গেলো তা নিয়ে তদন্ত চলছে। আমরা সবসময় শিক্ষা নেই যে এ ধরণের ঘটনা যেন না ঘটে”।
কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরুর চলে আসার ঘটনা দেশের বিমানবন্দরগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার যে সংকট সেটিকেই উন্মোচন করে দিয়েছে। -বিবিসি বাংলা