ফিরোজা সামাদ : শ্রাবণ দিনের রিমঝিম বৃষ্টি চলছে সেই সকাল থেকেই। পানি থৈ থৈ রাস্তাঘাট। অাজ স্কুলে যেতে পারেনি অানান। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝরোঝরো ধারায় বৃষ্টি পড়া দেখছে একমনে। বৃষ্টির এই শব্দটি ওর খুউব ভালো লাগে, ভীষন প্রিয় । মাঝে মাঝে দুহাতে কান চেপে অাবার ছেড়ে দিয়ে বৃষ্টির শব্দের ছন্দপতনের খেলাটা অনুভব করে ও। ওর কাছে এই খেলাটা ভারী মজার। হাতের তালু দিয়ে কান চেপে ধরলে মুহুর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ ও অন্য সবকোলাহল।
অানান এ বছর ক্লাস সেভেনে। নামি দামি স্কুলের ভালো ছাত্র সে। বাংলা ছাড়া সব সাবজেক্টেই ভালো । এজন্য মনের ভেতর একটা কষ্ট ওকে সবসময় কুড়ে কুড়ে খায়। বাঙলা ও রপ্ত করতে চায়। কিন্তু ; ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। কাউকে বলতেও পারেনা। এটা যেনো ওর জীবনে একটি ব্যর্থতা মনে হয়। মাঝে মাঝে নানুকে বলে অামায় বাঙলা শিখিয়ে দাও। পড়তে বসলেই বাঁধে যতো বিপত্তি। সংযুক্ত শব্দগুলো উচ্চারণ করকে জিহ্বা অাড়ষ্ট হয়ে যায়। ধুর ছাই কিছুই ভালো লাগেনা, অানানের। ও এই যে কানে হাত দিয়ে বৃষ্টির ঝর ঝর শব্দকে ইচ্ছে মতো অাটকে দিতে পারছে, অথচ বাসায় হরদম চলতে থাকা শব্দকে কেন আটকাতে পারে না ও ? খুব হতাশ লাগে অানানের ,খুউব! তাছাড়া ইচ্ছেমতো বাংলাটাকে কেনো অায়ত্ত্ব করতে পারছেনা ? ওর ভীষণ জিধ চেপে যায় মনে। মানুষের না পারার কী অাছে? একা একা দাঁড়িয়ে নিজের উচ্চতা নিজেই দেখে অার ভাবে, কতো বড়ো হয়েছি অামি ! অথচ, অামার কথা কেনো কেউ শুনতে চায়না ? অাবার নিজে নিজেই বৃষ্টির সাথে বলে, দেখে নিও, অাগামী শ্রাবণে যখন দেখা হবে তোমার সনে সবাই কেমন।অানানের কথার গুরুত্ব দেয়! অামি অাজ থেকে নিজেকে সেভাবেই গড়বো, কথা দিলাম তোমায়। অারো দেখে নিও,অামি।কেমন করে তখন বাংলায় তোমায় নিয়ে লিখি ? জানো অামার নানুও খুউব খুউব খুশি হবেন সেদিন।
মা’এর ডাকে চমক ভাঙে ওর। মা বলেন বারান্দা থেকে ভেতরে এসে জানালা বন্ধ করে পড়তে বস। পাপা কিন্তু আজ বাসায় আছেন। পরার টেবিলে না দেখতে পেলে কথা কিন্তু অামাকেই শুনতে হবে ।
মা’এর চোখের দিকে তাকায় অানান। মায়ের জন্য মায়া হয়। অাসলেই মা যতোই রাগ করুকনা কেনো সেতো ওদের ভবিষ্যতের জন্যই। তারপরেও স্কুলের রেজাল্ট খারাপ করলে মাকেই দোষারোপ করে সবাই। তখন মায়ের মন বিষন্নতায় অাচ্ছন্ন হয়,মুখখানি মলিন হয়ে যায়। অানানের তখন মায়ের জন্য বুকের ভেতর কান্না পায়,কিন্তু কাউকে বলতে পারেনা। তাই মাকে খুশি করতেই অানান রাত জেগে লেখাপড়া করে পরীক্ষায় দারুণ রেজাল্ট করে সবাইকে চমকে দিয়েছে। মায়ের মুখে হাসির ঝিলিক ওর মনে শান্তির ধারা বয়ে যায়। পাপাও খুউব খুশি। সব্বাই খুশি। এমনি খুশি পরিবারের সব্বাইকে দেখতে মন চায় অানানের।