কামরুননাহার : ছেলেটা আজ কিছুতেই ঘুমুতে চাইছেনা। মৌমিতার পাঁচটা গল্প বলা হয়ে গিয়েছে। আজ সে বাবা এলে ঘুমোবে। ভীষণ বায়না করছে।
মৌমিতা চায় না রাতে বাবা ছেলের দেখা হোক। রাতের আশফাক এক অচেনা মানুষ।অচেনা বাবার সাথে যাতে ছেলের দেখা না হয়, তাই ঘুম পড়াবার প্রাণান্তকর চেষ্টা।
ঘুমিয়ে গিয়েছে আরাফ।তার ছেলে। ছোট্ট সোনা ছেলে। মাত্র ছয় বছর ওর বয়স। ইংরেজি স্কুলে পড়ছে।লেখা পড়াও করে মন দিয়ে। সকালে ড্রাইভার নিয়ে যায়। গাড়ী থেকে যায় ওর জন্য। আসবার সময় আবার নিয়ে আসে। এটা আরাফেরই গাড়ী। তার আর আসফাকের আলাদা গাড়ী আছে।প্রতিদিন সকালে বাবা ছেলের খুব মিষ্টি আধ ঘন্টার খেলা হয়। খুব উপভোগ করে সে। মনে মনে বলে, আশফাক তুমি সব সময় এমন না কেন?
কোটি পতি নয় আশফাক। কোটি কোটি পতি।বনেদী বড়লোক ওরা। কত রকম ব্যবসা আছে এদের জানেনা মৌমি।শুনছে এবার নাকি ব্যাংক ব্যাবসাও করবে।শ্বশুর শ্বাশুড়ী লন্ডনে আছেন। ওখানকার কাজ শ্বশুর সামলান। ভীষণ স্মার্ট তিনি। আশফাকও যায় প্রায়ই। ছেলের বারো তের বছর বয়স হলে মৌমিও চলে যাবে। ছেলের ভালো পড়াশোনার জন্য।
এ রকম আকাশ পাতাল করা বড় লোকের ঘরে তার আসবার কথা নয়। তবুও রূপের জোরে এসেছে। বিয়ের সময় একহ্রাস অহংকার আর অনেক বন্ধুর হিংসে ছিল সাথে। হয়তো তাতেই বদলে গেছে সব। দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে মৌমি।
নিচে গাড়ীর শব্দ। মনে মনে মৌমি বলে আল্লা ও যেন আজ নিচেই ঘুমায়। মাঝ মাঝে নিচে ও ঘুমায় আশফাক।ওখানেও তার জন্য সব রেডি থাকে সব সময়।
আশফাক উপরেই এলো। খাবেনা সে জানে মৌমি। বুনো হিংস্র পশু শুধু মাংসের লোভে উপরে আসে।আশফাকের চাওয়া গুলো দেখে বোঝে মৌমি, সে মৌমীর শরীরে খুঁজছে অন্য কাউকে।তাই তো তার চাওয়া গুলো রুচিহীন লাগে।অসাড় হয়ে যায় মৌমি তখন।আর আশফাক হয় আরও হিংস্র।
সকালটা খুব ক্লান্ত আর একা থাকে সে। মেলাবার চেষ্টা করে অনেক কিছু, মেলেনা। বিয়ের রাতে আশফাক তাকে বলেছিল তুমি আমার সবচে দামী,স্হায়ী শোপিস্। অবাক মৌমি জিগ্যেস করেছিল কি বললে? আশফাক এতো মিষ্টি করে হেসেছিল,বলেছিল “বললাম তুমি আমার সুন্দরি লক্ষি বউ। আমার ঘরের সৌন্দর্য।সোহাগি হয়েছিল মৌমি।
ছেলে হবার পর আশফাক বদলে যেতে শুরু করে। প্রতি রাতেই বাড়ীতে নিয়ে আসতো দেশী, বিদেশী মেয়ে বন্ধু। আর কত নোংরামো। এখন আর বাড়ীতে কাউকে আনে না। নিজেই যায়। যেদিন উপরে আসে না মৌমি বুঝতে পারে কোথা থেকে সে আজ এল।
এখন আর কিছু বলে না। একদিন বলেছিল আমিও তোমার মত ছেলে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাবো।নির্লিপ্ত আশফাকের উত্তর I don’t have any problem কাটাও। এটা তোমার অধিকার কাটাতেই পারো।তবে তুমি পারবে না। চিৎকার করে উঠেছিল মৌমি, কি মনে কর তুমি আমায়। এখনো আমি হাজারে একজন।পারবো না মানে।আবারো আশফাকের সেই শান্ত মিষ্টি হাসি।হাজারে নয় লক্ষি, তুমি তারচে বেশী। এতো সুন্দর বলেইতো তুমি আমার বউ। তবু তুমি পারবে না।
বোঝেনি মৌমি সেদিন আশফাকের কথা। কখনো কোন পার্টিতে গেলে এত সাজগোজ করতে বলে আশফাক।যেন তাকে দেখে মনে হয় স্বর্গ থেকে নেমে আসা কেউ। এ যেন মানুষ না।
একদিন আশফাকের এক বিদেশী পার্টনার মৌমির কাধে হাত রেখেছিল। ভদ্র ভাবে একঝটকায় সরিয়ে দিয়েছিল সে। সেদিন সে বুঝতে পেরেছিল কেন পারবে না।
মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে সে।সব সময় মা বাবার শাসন আর স্নেহে বড় হওয়া। সাথে ধর্মভীতি।এ বাধন থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়।
তাই বুঝি আশফাকরা খুজে বেড়ায় এ শ্রেণির সুন্দরী মেয়েদের যারা সন্তানের জন্য সংসার ছাড়তে পারেনা।আর মূল্যবোধের জন্য সম্ভ্রম।