নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ছাত্রলীগ কর্মী অনিক (২১) হত্যার প্রধান আসামী যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন তুষারকে (৩০) এক সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনাদু ইন্ডিয়া ডটকম জানিয়েছে, গত ২২ জুন (শুক্রবার) রাতে খাস কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এলাকায় আত্মগোপন থাকা অবস্থায় এসটিএফ সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করে। মহিউদ্দিন তুষার মাত্র ৫ দিন আগে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রামে খুন করে এদেশে আত্মগোপন করতে চেয়েছিল দুই অপরাধী। নাম মহম্মদ মহিনুদ্দিন এবং মহম্মদ আলকাসুর রহমান। চার-পাঁচদিন আগে সীমান্ত পার হয়ে ওই দু’জন ঢুকে পড়ে এদেশে। তারপর সোজা কলকাতায়। এরা যে এদেশে ঢুকেছে তার প্রমাণ ছিল বাংলাদেশের কাছে। দু’দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু তার সফল প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই হত না। কিন্তু এবার বাংলাদেশ প্রশাসনের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে নড়ে বসে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। সূত্রে মারফত খবর পাওয়া যায় ওই দু’জন আত্মগোপন করেছে খাস কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এলাকায়। এই এলাকা বাংলাদেশিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বছরভর বাংলাদেশের নাগরিকরা এদেশে এসে এই এলাকাতেই থাকে। শুক্রবার এখান থেকে STF গ্রেপ্তার করে ওই দুই দুষ্কৃতীকে। তারপর প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সেরে আজ (রোববার) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম যখন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা গ্রেফতারের খবর ফলাও করে প্রচার করছে, তখন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ। মুখ খুলছেন না সিএমপির কোনো কর্মকর্তা।
এদিকে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আসামিদের না ধরতে পরোক্ষভাবে পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা। তার সেল্টারে খুনি মহিউদ্দিনসহ অনিক হত্যার অধিকাংশ আসামী চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
চকবাজার থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, ‘আসামি গ্রেফতারের কোনো খবর নেই। তবে আসামি মিন্টু দাশ ও রকি দাশের দুই স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় রাখা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে অনিক হত্যা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দিয়ে দেব।’
থানা সূত্র জানায়, গত ২০ জুন রাতে চকরিয়া থেকে দুই সহোদর মিন্টু দাশ ও রকি দাশের দুই স্বজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন ভগ্নিপতি স্কুল শিক্ষক প্রণব দে ও বিশ্বজিৎ দে। অনিক হত্যাকাণ্ডের পর রাতেই দুই সহোদর চকরিয়ায় ভগ্নিপতি প্রণব দে’র বাড়িতে আশ্রয় নেন। ঘটনার পর প্রণবের সঙ্গে ১৮ মিনিট ও বিশ্বজিতের সঙ্গে ১৩ মিনিট মোবাইল ফোনে কথা বলেন মিন্টু ও রকি । আটকের পর গত ২১ জুন প্রণব ও বিশ্বজিৎ পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন অনিকের বাবা মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। প্রধান আসামি করা হয় যুবলীগ নেতা তুষারকে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মিন্টু (৩২), ইমরান শাওন (২৬), ইমন (১৬), শোভন (২৪), রকি (২২), অপরাজিত (২২), অভি (২১), বাচা (২২), এখলাস (২২), দুর্জয় (২১) এবং অজয় (২১)। তবে মামলায় ভারতে তুষারের সঙ্গে গ্রেফতার আলকাসুর রহমানের নাম নেই।
উল্লেখ্য মোটর সাইকেলে হর্ণ বাজানোকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন রাতে দামপাড়া চট্টেশ্বরী মোড়ে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন তুষারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগ কর্মী এম আর অনিককে তার বাবা যুবলীগ নেতা মো. নাসিরের সামনেই ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।