এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজান ২নং ওয়ার্ডের আলী আহমদ সিকদার পাড়া এলাকায় আলতাফ মিয়া ও সিরাজ খাতুনের পুত্র প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেনের বসতঘর ও বসতঘর সংলগ্ন দোকান আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন। অগ্নিকান্ডে ৫ লক্ষাধিক টাকার দোকান মালামাল ও ২ লক্ষাধিক টাকার বাড়ির মালামাল ও আসবাবপত্র পুড়ে যায় বলে তিনি দাবী করছেন। এ ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী আনোয়ার সমুদয় সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে অনেকটা বাকরূদ্ধ হয়ে যায়।
আনোয়ারের পরিবার স্ত্রী, দুই পুত্র, দুই কন্যা, মাতা-পিতা নিয়ে অনেকটা ভালভাবে চলছিল। প্রতিবন্ধী হলেও সরকারী-বেসরকারী কোন সাহায্য সহযোগিতা না নিয়ে কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে উজ্জীবন (এনজিও)সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তিল তিল করে গড়ে এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বছর বছর বাড়তে থাকে তার দোকানের মালামাল ও পুঁজি। গড়ে উঠে ৭/৮লাখ টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়িক সূবিধার্তে দোকান গৃহের পিছনেই তৈরী করেন আবাসগৃহ। বসবাস করতে থাকেন স্বাভাবিকভাবে। এরই মাঝে গত ৩১ মার্চ গভীর রাতে দোকান সংলগ্ন বাড়িতে বউ বাচ্চা নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আনোয়ার তার দোকানের পশ্চিম দিকের জানালায় আগুনের লেলিহান শিখাতাপে ঘুম ভাঙ্গে তার। দেখতে পায় আচমকা দোকানের জানালঅয় আগুন।এ ঘটনায় ভীতবিহ্বল হয়ে পড়ে আনোয়ার ও তার পরিবার। চিৎকার চেচাঁমেচি করে এদিক ওদিক হাঁকডাক মারলেও গভীর রাতে ঘুমন্ত পাড়ায় সহজে এ ডাক কারও কর্ণকোহরে পৌছেঁনি। শেষে স্ত্রী, চার সন্তানকে পেঁছনের দরজা দিয়ে বের করতে গিয়ে আগুন লেগে সকলে অনেকটা বস্ত্রহীন অবস্থায় গৃহ ত্যাগ করেন। অবশেষে আগুনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়, লেগেযায় বিদ্যূৎ সর্টসার্কিটে আগুন । দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। আগুনের লেলিহান শিখা ও আনোয়ারের পরিবারের আর্তচিৎকারে ঘুমন্ত পাড়া জেগে ওঠে একসময়। এগিয়ে আসে সকলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। বের করা যায়নি দোকানের ৫/৭লাখ টাকার মালামাল। এরিমধ্যে সাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বাড়ির মূল্যবান আসবাবপত্র ছিল উল্লেখযোগ্য।
তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার জানান, তাদের বড় ছেলে মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম পড়ে কলাউজান এয়াকুব বজলুর রহমান সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে, মেয়ে আমেনা খানম রাইছি পড়ে একই বিদ্যালয়ে অস্টম শ্রেণিতে। আরেক কন্যা আয়েশা ছিদ্দিকা রাফি পড়ে নিছতালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে এবং সর্বকনিষ্ঠ ও কোলের সন্তান সাকিবুল ইসলাম(২) কে নিয়ে প্রতিদিনের ন্যায় ঘুমিয়ে ছিলাম। গভীর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার উত্তর-দক্ষিণ দোকান ও দোকান সংলগ্ন বাড়ির পশ্চিম দিকের জানালায় হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখা দেখে আমার স্বামী আনোয়ারের ঘুম ভেঙ্গে যায় সাথে আমারও। তাৎক্ষণিক আগুন লাগার উৎস নির্ণয় করতে না পারলেও জানালায় লাগা আগুন থেকে কিছু বুঝে উঠার আগেই বিদ্যূৎ এর সর্টসার্কিটে আগুন ধরে যায়। কোনভাবেই ঘর হতে বের হতে না পেরে পেঁছনে দরজা কেটে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ঘটনা বর্ণনার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আনোয়ারের স্ত্রী আরো বলেন, এসময় ছাদে আগুন লেগে আগুনের ছালা এসে গায়ে পড়লে অনেকটা বিবস্ত্র হয়ে বেরিয়ে পড়ি আমরা । এখন আমরা সর্বশান্ত ও নিঃস্ব। আমার স্বামী উজ্জীবন ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে লোন নিয়ে একযুগের অধিক সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠান তিল-তিলকরে গড়ে তোলে পরিবারের তিন সন্তানের লেখাপড়া, ভরণপোষণ আনজাম দিয়ে আসছিলেন। তিনি প্রতিবন্ধী হয়েও কখনো কারো দ্বারস্থ হননি। আজ অগ্নিকান্ডে তার ৭/৮ টাকার সম্পদ ভস্মীভূত হয়ে পথে বসেছি আমরা। বাকী জীবন কিভাবে পরিচালনা করবো এনিয়ে ভেবে কুল পাচ্ছি না।
এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি মহোদয়, জনপ্রতিনিধিরা কিংবা সাহায্য সংস্থা তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি এখনো। কেউ তাদের দেখতে আসেনি তারা কেমন আছে। তবে কয়েকজন সংবাদ কর্মী খবর নিলেও উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি। আনোয়ার ও তার পরিবার বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিনযাপন করছেন। তিনি গৃহ নির্মাণ ও পূণবাসনে জন্য বিভিন্ন সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছেন।