Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সিদ্ধান্তহীনতায় থমকে আছে বে টার্মিনাল, সবার দৃষ্টি প্রধানমন্ত্রীর দিকে

সিদ্ধান্তহীনতায় থমকে আছে বে টার্মিনাল, সবার দৃষ্টি প্রধানমন্ত্রীর দিকে

নিউজ ডেক্স : থমকে আছে দেশের আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে যাওয়া বে টার্মিনাল প্রকল্প। প্রকল্পটি কারা বাস্তবায়ন করবে সেই সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। হয়নি কোন প্রক্রিয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে সেই সিদ্ধান্তও। প্রকল্পের জায়গা হুকুম দখলের প্রক্রিয়াও থেমে আছে। তবে প্রকল্প এলাকায় একটি ডেলিভারি ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। বে- টার্মিনালের জায়গায় ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তোলা হলেও কার্যত তা চট্টগ্রাম বন্দরের কাজেই ব্যবহৃত হবে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের ভবিষ্যৎ আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বে টার্মিনাল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হালিশহর উপকূলে আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে নতুন এই বন্দর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর। হালিশহর সমুদ্র উপকূলের ৯৩৯ একর ভূমিসহ সাগর ভরাট করে প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে বে টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। উপকূলে চর জেগে উঠে কৃত্রিমভাবে তৈরি হওয়া একটি চ্যানেলকে কেন্দ্র করে এই বন্দরের স্বপ্ন দেখা হয়। এই বন্দর দিয়েই দেশের আগামী একশ’ বছরের আমদানি রপ্তানির চাহিদা মেটানো সম্ভব বলেও ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। কৃত্রিম চ্যানেলটির গভীরতা বাড়াতে ড্রেজিং এবং সাগরে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করে বন্দরটি গড়ে তুলতে হবে।

বে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য শুরুতে ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি হুকুমদখল করা হয়েছে। এর সাথে ৮৭১ একর সরকারি খাস জায়গাও কিনে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতোমধ্যে এই ভূমির ব্যাপারে সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বে টার্মিনালের জন্য ৬৮ একর ভূমিই বুঝে পেয়েছে। এর বাইরে সাগর ভরাট করে আরো অন্তত ৫শ’ একর ভূমি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে মোট ১৬শ’ একর ভূমি সাগর ভরাট তুলে আনা হবে। সিঙ্গাপুরের আদলে সাগর ভরাট করে উদ্ধার করা ভূমিতেই নির্মিত হবে বে টার্মিনালের অবকাঠামো। এটিই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রিক্লেইমের ঘটনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বে টার্মিনালের এলাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে আড়াই হাজার একরে। বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলে সাড়ে চারশ’ একর ভূমিতে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি বিস্তৃত এলাকায় বে টার্মিনালের কার্যক্রম চলবে উল্লেখ করে সূত্র বলছে, বিদ্যমান বন্দরের চেয়ে বহু বড়ই কেবল নয়; একই সাথে অনেক বড় বড় জাহাজও বে টার্মিনালে অনায়াসে নোঙর ফেলবে। এই টার্মিনালে ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে ভেড়ানো যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর আগে এই বন্দরটি কারা করবে বা কিভাবে করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত বহুদিন ধরে ঝুলে আছে।

বন্দরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই নিবীড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। এই টার্মিনালটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ভিত্তিতে করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশের আলোকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিশ্বের আগ্রহী বন্দরগুলোর কাছে বে টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে প্রস্তাব চায়। এরই ধারাবাহিকতায় চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, দুবাই এবং সিঙ্গাপুরসহ ৮টি দেশের বিভিন্ন বন্দর নিজেদের প্রস্তাবনা দাখিল করে। এরমধ্যে বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশে টার্মিনাল অপারেট করা খ্যাতনামা সংস্থা সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি (পিএসএ), আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে বন্দর নির্মাণ করে টার্মিনাল হ্যান্ডলিংকারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড (ডিপি ওয়ার্ল্ড), আফ্রিকা অঞ্চলের কয়েকটি দেশে বন্দর তৈরি ও পরিচালনাকারী সৌদি রাজপরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রেড সী গেটওয়ে টার্মিনাল, চীনের অত্যন্ত ব্যস্ততম শহর সাংহাইসহ পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় কন্টেনার হ্যান্ডলিংকারী সাংহাই পোর্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মার্চেন্টস স্পোর্ট হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ বে টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এবং জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। এই নির্দেশনার আলোকে বে টার্মিনালের উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে একটি প্রকল্প সারপত্র অনুমোদনের জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে কেবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার (সিসিইএ) কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। বে টার্মিনালের ব্যাপারে এই কমিটির অনুমোদন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দ্যা পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ) এবং সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের (আরএসজিটি) ব্যাপারে কিছুটা গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা, অর্থনৈতিক অবস্থা, কাজের অভিজ্ঞতা, কূটনৈতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে।

সূত্র বলেছে, বে টার্মিনাল নির্মাণ কিভাবে হবে বা কারা করবে সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পুরো ব্যাপারটি ঝুলে পড়েছে। বে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম কবে নাগাদ গতিশীলতা তৈরি হবে তাও অনিশ্চিত। তবে বে টার্মিনালের জায়গায় অন্তত একশ’ একর ভূমিতে ট্রাক টার্মিনাল এবং ডেলিভারি ইয়ার্ড তৈরির কাজ শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এই ট্রাক টার্মিনাল এবং ডেলিভারি ইয়ার্ড বে টার্মিনালের অংশ হিসেবে করা হচ্ছে না। বিদ্যমান বন্দরের অভ্যন্তর থেকে ডেলিভারি পয়েন্ট বের করে দেয়ার পাশাপাশি বন্দর এলাকায় যানজট নিরসনে বিশেষ এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাগর থেকে ড্রেজিং করে মাটি উত্তোলন করে ট্রাক টার্মিনাল এবং ডেলিভারি ইয়ার্ডের জায়গা ভরাট করা হচ্ছে।

বন্দরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বে টার্মিনাল নির্মাণে যত বিলম্ব হচ্ছে ততই সমস্যা হবে। এতে শুধু ব্যয়ই বৃদ্ধি পাবে না, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ভবিষ্যতও সংকটে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!