Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে

21314801_487092538318724_5170251988592743844_n

নিউজ ডেক্স : তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া পাশবিকতার কথা শুনেছি। তাদের (রোহিঙ্গাদের) ওপর ঘটে যাওয়া নিপীড়ন বড়ই অমানবিক, বর্বর। নিজ দেশে এভাবে পাশবিকতার শিকার হওয়া কখনো কাম্য নয়। এটি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে তুলে ধরা হবে।

বিপদাপন্ন রোহিঙ্গাদের জীবনমান বিবেকসম্পন্ন যে কাউকে আপ্লুত করবে। অমানবিকতায় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করলেও মানবিকতায় প্রতিবেশী বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করে আসছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত ক্যাম্প ও অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনটো মারসুদি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একে ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল, উখিয়ার ইউএনও মো. মাঈন উদ্দিন, ইউএনএইচসিআর ও আইওএম বাংলাদেশ প্রধানসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

মিয়ানমারে অব্যাহত নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছান তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনটো মারসুদি।

এরপর তারা বেলা দেড়টার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ে পৌঁছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত ক্যাম্পে যান। সেখানের এক অফিস কক্ষে আগে থেকে উপস্থিত রাখা হয় মিয়ানমার সেনাদের গুলি ও জখমে আহত ১২ রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষকে। ফার্স্ট লেডি প্রথমে সেখানে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আহত ও গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গারা তাদের ওপর ঘটে যাওয়া পাশবিকতার বর্ণনা দেন। তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর ঘটে যাওয়া বর্বরতা ও পাড়া প্রতিবেশীদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কথা বলতে গিয়ে আহতরা কেঁদে ফেলেন। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন এমিন এরদোগানও। তিনি নীরবে চোখ মুছছিলেন। আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে কথা বলা ১২ জনের হাতে ত্রাণের বক্স তুলে দেন তিনি।

এরপর কাদামাটিতে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা হেঁটে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় চলার পথে দু’ধারে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান। তিনি হাত তুলে দুপাশে দাঁড়ানো রোহিঙ্গাদের সালাম দেন এবং ক্ষণে ক্ষণে দাঁড়িয়ে সন্তানসহ মা, বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলেন।

রোহিঙ্গারা তাদের দেশত্যাগের কারণ, দুর্ভোগ, নির্যাতনের বর্ণনা এমিন এরদোগানের কাছে নিজেদের ভাষায় বয়ান করে কান্না করেন।

টানা ঘণ্টা দেড়েক ক্যাম্পের বিভিন্ন অলিগলি হেঁটে নতুন তৈরি করা ঝুপড়িগুলো পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

এই মানবিক বিপর্যয় থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে তুরস্ক বরাবর বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে, ভবিষ্যতেও রাখবে। আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া পাশবিকতার কথা জেনেছি। এটি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে তা তুলে ধরা হবে।

রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান গণহত্যা ও নৈরাজ্য বন্ধের দাবি মিয়ানমারের কাছে জানানো হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এমিন এরদোগান বলেন, আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এটি বার বার এড়িয়ে গেছে।

এসময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনটো মারসুদি বলেন, রোহিঙ্গারা খুবই অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে সেজন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। তুরস্ক রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ভবিষ্যতেও এ সমর্থন অব্যাহত রাখা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প সম্পর্কে তুরস্কের ফার্স্ট লেডিকে অবহিত করা হয়েছে। পূর্ব থেকে বৃত্ত আকারের প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকা রোহিঙ্গারা ক্যাম্প আকারে দখল করে নিয়েছে। চলমান সহিংসতার পর এ পর্যন্ত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে কুতুপালংয়ের আশপাশ এলাকা ও বালুখালী ক্যাম্প ছাড়াও পাশের বিভিন্ন পাহাড়ে অবস্থান নেয়ার কথা তুলে ধরেছি। তিনি তার দেখে যাওয়া বিষয়টি নিজ দেশে সবাইকে এবং সরকারের মাধ্যমে জাতিসংঘে তুলে ধরবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন শেষে এমিন এরদোগানের সফর সঙ্গীরা ইনানীস্থ তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপ সি-পার্লে যান। সেখানে দুপুরের খাবার শেষে বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারে আসা বিশেষ বিমানে ঢাকায় ফিরে যান।

উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত গভীর রাতে তারা নিজস্ব বিমানে ঢাকায় পৌঁছান। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে তারা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এদিন দুপুর ১২টার দিকে তারা কক্সবাজার পৌঁছান। সেখান তাদের স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। এরপর তারা কুতুপালং ক্যাম্পের দিকে রওনা দেন। পরে বেলা দেড়টার দিকে ক্যাম্প পরিদর্শন শুরু করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অপরদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে গত শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তিনি একে ’গণহত্যা’ বলেও উল্লেখ করেন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকে ফোন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তার অঙ্গীকার করেন। এর এক সপ্তাহের মাথায় ফার্স্ট লেডি, সরকারের মন্ত্রী ও পদস্থ কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে বাংলাদেশ পাঠালেন এরদোগান। তারা সঙ্গে কিছু ত্রাণও নিয়ে এসেছেন।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি চাল, ডাল ও তেলসহ নানা ভোগ্যপণ্য মিলিয়ে প্রায় একশ টন ত্রাণ এনেছেন। তা বিতরণের জন্য রেড ক্রিসেন্ট’র সঙ্গে একটি চুক্তি হচ্ছে। তবে এসব ত্রাণ সম্পর্কে প্রশাসনের পূর্বানুমতি না নেয়ায় ত্রাণগুলো গ্রহণে আমাদের বিলম্ব হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির বাহিনী দমনপীড়ন ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় গত দুই সপ্তাহে রাখাইন থেকে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের মাঝে ৫ শতাধিক হিন্দু থাকলেও বাকি সবাই মুসলিম। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মতে এ সংখ্যা ৯০ হাজার। তবে, স্থানীয়দের মতে দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাবে নতুন আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা। -জাগোনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!