Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ অস্ত্রসহ আটক

যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ অস্ত্রসহ আটক

jubolegue-leader-20190918195101

নিউজ ডেক্স : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করেছে র‍্যাব। বুধবার রাত ৮টা ২৫ মিনিটে তাকে তার গুলশানের বাসা থেকে আটক করা হয়।

এর আগে সন্ধ্যায় খালেদের গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় শুরু হয় এ অভিযান। সাড়ে ৪ ঘণ্টার তল্লাশি অভিযান শেষে খালেদকে একটি সিলভার মাইক্রোবাসে করে র‍্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় যুবলীগের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর থেকেই খালেদের বাড়িটি ঘিরে রাখেন র‍্যাবের শতাধিক সদস্য।

একই সময় তার ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবে ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‍্যাব। ওই ক্যাসিনোর ভেতর থেকে ১৪২ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। ২০ লক্ষাধিক টাকা ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। ফকিরাপুলে অভিযান শেষ করার পরই খালেদের বাড়িতে ঢুকে র‍্যাব। র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

র‍্যাব লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং জানায়, আটকের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও মাদক (ইয়াবা) উদ্ধার করা হয়েছে। লাইসেন্স এর শর্ত ভঙ্গের কারণে আরো দুটি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এসময় মোট তিনটি অস্ত্র জব্দ করা হয়।

যা বলছেন ভবনের ম্যানেজার : গুলশান- ২ এর ৫৯নং রোডের প্লট- ৪, বক্ল- এনডব্লিউ (ই) ‘প্রাইম রোজ গার্ডেন’ নামের ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলায় স্ত্রী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ৩১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি চার বছর আগে কেনেন তিনি।

‘প্রাইম রোজ গার্ডেন’ ভবনের ম্যানেজার আরিফ হোসেন বলেন, বুধবার দুপুর ৩টার সময় ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকে ৬/৭ জন ভবনে প্রবেশ করেন। তারা খালিদের বাসায় যাবেন বলে এ-৩ (চারতলা) ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। এরপর তারা সেখানে কী করেন তা বলতে পারব না। এক ঘণ্টা অবস্থানের পর তারা ভবন ছেড়ে চলে যান।

তিনি আরও বলেন, র্যাবের পোশাক পরিহিত অসংখ্য ফোর্স ৪টার দিকে আসেন। তারা এসেই ভবনটি ঘিরে ফেলেন। এরপর তারা চতুর্থ তলায় চলে যান। সাড়ে ৪টার দিকে কয়েকজন র্যাব সদস্য নিচে নেমে আসেন।

তিনি জানান, র্যাব সদস্যরা এসে বলেন, বাসা তল্লাশি হবে। আমাদের সঙ্গে আপনারা (ম্যানেজার ও দারোয়ান) থাকবেন।

তল্লাশিকালে খালেদ মাহমুদের কাছ থেকে লাইসেন্সবিহীন একটা পিস্তল জব্দ করা হয়। ওয়াল শোকেজ থেকে দুটি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে ২০০টি করে মোট ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়। এছাড়া লোহার লকার থেকে ১০০০, ৫০০ ও ৫০ টাকার বেশ কয়েকটি বান্ডেল উদ্ধার করা হয়। সেগুলো গোনার পর টাকার অংক দাঁড়ায় ১০ লাখ ৩৪ হাজার। এছাড়া ডলারেরও বান্ডেল পাওয়া যায়। টাকায় তা ৫/৬ লাখ টাকা হবে বলে র্যাব জানায়।

খালেদ মাহমুদের বাসা থেকে ত্রুটিযুক্ত দুটি অস্ত্রও (শটগান ও পিস্তল) জব্দ করা হয়।

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ এ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও।

রিয়াজ মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ২০১২ সালের পর মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় ঢাকার এক অংশের নিয়ন্ত্রণ আসে খালেদের হাতে। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি।

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ : রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।

খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন তিনি। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।

৭ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ : জানা যায়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ এ নেতার হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন এ নেতা। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। -জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!