Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা

নিউজ ডেক্স : মালান ও বাটলারকে পরপর দুই বলে হারিয়ে নুইয়ে পড়া ইংল্যান্ডকে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিল না বাংলাদেশ। আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করা দল শেষ ম্যাচে ১৬ রানের জয়ে হোয়াইটওয়াশ করেই ছাড়ল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।

ক্রিকেটের প্রথাগত কোনো বড় দলকে এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এর আগে এমন সাফল্য ছিল জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে।

যে সংস্করণে বাংলাদেশ নড়বড়ে, যে সংস্করণে পথ খুঁজে ফিরছে তারা অনেক দিন ধরেই, সেই ২০ ওভারের ক্রিকেটেই প্রবল প্রতাপশালী ইংলিশদের বিপক্ষে এই জয় অভাবনীয় তো বটেই, অবিস্মরণীয়ও।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৫৮ রান। গোটা সিরিজে নিষ্প্রভ থাকা লিটন কুমার দাস খেলেন ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস।

তবে স্রেফ ২ উইকেট হারিয়ে পুঁজি ১৬০ রানের নিচে থাকা চোখে পড়ার মতোই। এক পর্যায়ে রান আরও বেশি হবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে রান ওঠে মাত্র ২৭, বাউন্ডারি আসে স্রেফ একটি।

রান তাড়ায় ইংল্যান্ড এক পর্যায়ে জিতে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। শতরান ছুঁয়ে ফেলে তারা কেবল ১ উইকেট হারিয়ে। তবে এরপরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের সাফল্যে নিজেদের রাঙায় বাংলাদেশ।

উইকেট স্রেফ একটি পেলেও অনেক দিন পর মুস্তাফিজ ছিলেন দলের সেরা বোলার, তাসকিন আহমেদ বরাবরের মতোই ক্ষুরধার। টসের সময় হাসি ছিল জস বাটলারের মুখে। সব সংস্করণ মিলিয়ে এই বছরে প্রথমবার টস জিততে পারে ইংল্যান্ড।

ম্যাচের দ্বিতীয় বলে স্যাম কারানের বলে কবজির মোচড়ে রনি তালুকদারের দুর্দান্ত শটের বাউন্ডারি শুরু হয় ম্যাচ। পরের ওভারে লিটন-রনি, দুজনের ব্যাট থেকেই আসে বাউন্ডারি।

দু-একটি বলে অস্বস্তিতে পড়লেও তা সামলে ভালো জুটি গড়েন দুজন। সিরিজে প্রথমবার পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। রান আসে ৪৬। এর মধ্য অবশ্য জীবনও পেয়ে যান রনি। জফ্রা আর্চারের বাউন্সারে শর্ট থার্ডম্যানে সহজ এক ক্যাচ ছাড়েন রেহান আহমেদ।

১৭ রানে জীবন পেয়ে রনি বিদায় নেন ২৪ রানে (২২ বলে)। রিভার্স সুইপের চেষ্টায় ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি আদিল রশিদকে। জুটি থামে ৪৫ বলে ৫৫ রানে। বাংলাদেশের ইনিংস আরও গতিময় হয়ে ওঠে পরের জুটিতে। নাজমুল হোসেন শান্ত উইকেটে গিয়েই দারুণ আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন। স্লগ সুইপে বিশাল দুটি ছক্কা মারেন তিনি মইন আলি ও আদিল রশিদকে।

শুরুর জড়তা ঝেড়ে ফেলে লিটনও জ্বলে ওঠেন। ৭ ওভার শেষে তার রান ছিল ২৫ বলে ২৫। এরপরই তিনি মেলে ধরেন নান্দনিক সব শটের পসরা। ৪১ বলে পা রাখেন তিনি ফিফটিতে। টি-টোয়েন্টিতে তার নবম ফিফটি।

ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই সিরিজে ওয়ানডে-টি-টোয়েনিট মিলিয়ে সীমিত ওভারের ৯ ম্যাচে তার প্রথম ফিফটি এটি। পঞ্চাশের পরপরই জীবন পান লিটন। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ ছাড়েন বেন ডাকেট। দুর্ভাগা বোলার এবারও আর্চার।

৯ থেকে ১৫, এই ৬ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৮৫ রান। হাতছানি তখন ১৮০ রানের আশেপাশে কোনো পুঁজির। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন। কারান-আর্চার-জর্ডানদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বড় শট খেলতে পারেনি লিটন-শান্ত ও পরে সাকিব।

জর্ডানের বলে লিটন ফেরেন সপ্তদশ ওভারের শেষ বলে। পরের তিন ওভারেও আসেনি প্রত্যাশিত রান। ৩৬ বলে ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন শান্ত, ৬ বলে ৪ রানে সাকিব। এই দুজনের জুটিতে ১৮ বলে আসে কেবল ১৯ রান।

ইংল্যান্ডের রান তাড়া শুরু হয় বাউন্ডারিতে। অভিষিক্তি তানভির ইসলাম ইসলাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বলটি করে ফুলটস, দারুণ টাইমিংয়ে তা বাউন্ডারিতে পাঠান দাভিদ মালান। তবে সাফল্যের স্বাদ পেতেও খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি বাঁহাতি এই স্পিনারকে। তৃতীয় বলেই তার টার্ন ও বাউন্সে পরাস্ত ফিল সল্ট, চোখের পলকে বেল তুলে নেন লিটন দাস।

পরের ওভারে তাসকিন আহমেদের দারুণ এক সুইঙ্গিং ডেলিভারি ছোবল দেয় দাভিদ মালানের প্যাডে। আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউয়ে টিকে যান বাঁহইত ব্যাটসম্যান। দীর্ঘসময় ধরে বারবার রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার রায় দেন, আলতো করে ব্যাটে ছুঁয়েছে বল। যদিও নিশ্চিত হওয়া ছিল খুবই কঠিন।

শুরুর সেই জড়তা পরে কাটিয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। মালান এগোতে থাকেন তার মতো করেই। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনে নেমে জস বাটলারও ছিলেন সাবলিল। ৩৮ বলে আসে জুটির পঞ্চাশ।

সেখানেই না থেমে এই জুটিতেই ইংল্যান্ডের রান স্পর্শ করে একশ। এরপরই বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। মুস্তাফিজুর রহমানের শততম টি-টোয়েন্টি উইকেট আসে দলের দারুণ প্রয়োজনের সময়। শর্ট বলে পুল করার চেষ্টায় মালান আউট হন ৪৭ বলে ৫৩ রান করে। দু’জনের জুটি থামে ৭৬ বলে ৯৫ রানে।

পরের বলেই মিরাজের সেই জাদুকরি মুহূর্ত। অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট বাটলার। উজ্জীবিত বাংলাদেশ এরপর ইংল্যান্ড মাথা তুলতে দেয়নি। গ্যালারিভরা দর্শকের গগণবিদারী চিৎকার আর সমর্থনের জোয়ারে স্মরণীয় সিরিজ জয়ের শেষটাও হয় স্বপ্নের মতো।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৮/২ (লিটন ৭৩, রনি ২৪, শান্ত ৪৭*, সাকিব ৪*; কারান ৪-০-২৮-০, ওকস ১-০-১২-০, রশিদ ৪-০-২৩-১, আর্চার ৪-০-৩৩-০, রেহান ৩-০-২৬-০, মইন ১-০-১২-০, জর্ডান ৩-০-২১-০)।

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৪২/৬ (মালান ৫৩, সল্ট ০, বাটলার ৪০, ডাকেট ১১, মইন ৯, কারান ৪, ওকস ১৩*, জর্ডান ২*; তানভির ২-০-১৭-১, তাসকিন ৪-০-২৬-২, সাকিব ৪-০-৩০-১, হাসান ৪-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৪-০-১৪-১, মিরাজ ২-০-১৮-০)।

ফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অভ দা ম্যাচ: লিটন কুমার দাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!