Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ শর্তসাপেক্ষ কমবয়সীদের বিয়ের বিধান রেখে বিল পাস

‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ শর্তসাপেক্ষ কমবয়সীদের বিয়ের বিধান রেখে বিল পাস

Biye20170227194023

নিউজ ডেক্স : ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ শর্তসাপেক্ষ কমবয়সী ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বিধান রেখে বহুল আলোচিত বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল জাতীয় সংসদের পাস হয়েছে। তবে এজন্য আদালতের নির্দেশ এবং মাতা-পিতা বা অভিভাবকের সম্মতিক্রমে বিধি মোতাবেক বিয়ের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। আর আইন ভঙ্গ করে বিয়ে দিলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও একলাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদে কন্ঠভোটে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল ২০১৭ পাস হয়। এর আগে বিলের উপর আনীত কমিটি গঠন, জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাবসমুহ কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ সংশোধিত আকারে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন।

বিলে বাল্য বিবাহের অর্থ করা হয়েছে, এইরূপ বিবাহ যার কোন পক্ষ বা উভয়পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থ করা হয়েছে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থ বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ বৎসর পূর্ণ করেন নাই এমন কোন পুরুষ এবং ১৮ বৎসর পূরণ করেন নাই এমন কোন নারী। এছাড়া নতুন প্রণীত এ আইনে প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্য বিবাহ করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এজন্য দুই বছরের কারাদণ্ড বা একলাখ টাকা জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে এক মাসের আটকাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তিযোগ্য হবে।

বিলের ১৯ ধারায় বিশেষ বিধান এনে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং মাতা-পিতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না’।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ নিরোধের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, শিশু অধিকার সনদ সাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং শিশু আইন ২০১৩ তে বর্ণিত শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ রহিত করে যুগোপযোগী বিলটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল হলেও এই আইনের অধীনে চলমান মামলার ক্ষেত্রে তা প্রয়োজ্য হবে না মর্মে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।

বিলে এই আইনের অধীনে কোন অপরাধ সংঘটনের দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ দাখিল করার বিধান রাখা হয়েছে। বাল্যবিবাহ সম্পাদন, পরিচালনা বা বাল্য বিয়েতে বাধ্য করা হলে পিতা-মাতা বা অভিভাবক বা সংশ্লিষ্ট অন্যকোন ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন এবং সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সবোর্চ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।  এছাড়া বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের জন্য নিকাহ রেজিস্টারের লাইসেন্স বাতিলসহ অনরূপ শাস্তি আরোপের বিধান বিলে রাখা হয়েছে। তবে আদালত বাল্যবিবাহ বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার শর্তে ইচ্ছা করলে মুচলেকা নিয়ে  অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপরাধের দায় থেকে খালাস দিতে পারবেন। বিলে বাল্য বিবাহ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও শাস্তি বিধানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি করার বিধান রাখা হয়েছে।

ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়। বিলটিতে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’  বিধানের সুযোগে দেশে বাল্য বিয়ের প্রকোপ বেড়ে যাবে আশঙ্কা করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, বিরোধিতাকারীরা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞান। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচেনায় রেখেই এই আইন করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!