ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বিল গেটসের চোখে বিশ্ব তারকা বাংলাদেশি এই বাবা-মেয়ে

বিল গেটসের চোখে বিশ্ব তারকা বাংলাদেশি এই বাবা-মেয়ে

senjuti-20200116111318

আন্তর্জাতিক ডেক্স : বিল গেটস। বিশ্বের বহু মানুষের কাছে তিনি একজন নায়ক হিসেবে পরিচিত, তাকে দেখে অনেকেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেন। অনেকেই তাকে অনুকরণ কিংবা অনুস্মরণ করেন। কিন্তু সেই নায়কের চোখে বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের বদলে দেয়ার স্বপ্নে যারা কাজ করছেন তারাও একেকজন নায়ক।

ইতিবাচক কাজে সমাজের রূপ বদলে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের নিয়ে নিয়মিত নিজের ব্লগসাইটে ‘বিল গেটস হিরোস ইন দ্য ফিল্ড’ শিরোনামে ব্লগ লেখেন তিনি। মঙ্গলবার বিল গেটস বাংলাদেশি এক বাবা-মেয়েকে বেছে নিয়েছেন তার এবারের নায়ক হিসেবে।

সেখানে বিল গেটস লিখেছেন, সেঁজুতি সাহা বাংলাদেশে ছোট্ট শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় দেখেছেন কীভাবে রাতের খাবারের টেবিলে তাদের পরিবারের মূল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং সংক্রামক ব্যাধি।

খাবারের সময় এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা অনেকের কাছে অদ্ভূত লাগতে পারে। কিন্তু সেঁজুতি সাহার পরিবারে এটা ঘটতো যখন তার বাবা ডা. সমির সাহা নিজের কাজ নিয়ে বাসায় আলোচনা করতেন। মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক সমির সাহা রাতের খাবারের সময় তার বিজ্ঞান বক্তৃতার অনশীলন করতেন অথবা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে যা জানতে পারতেন সেসব নিয়ে কথা বলতেন।

বাংলাদেশি এই বাবা-মেয়ের খাবার টেবিলে না থাকতে পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বিল গেটস। তিনি লিখেছেন, আমার জন্যও যদি ওই টেবিলে একটি চেয়ার থাকত- আমি রোগ সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি!

খাবার টেবিলের এসব আলোচনা সেঁজুতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতো; পরে তিনি নিজেকে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ডা. সেঁজুতি সাহা বর্তমানে তার বাবার সঙ্গে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (সিএইচআরএফ) কাজ করেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে শিশু মৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠছে সমির সাহার সহায়তায়।

এই বাবা এবং মেয়ে বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্যের গতিশীল এক জুটি। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পদশালী দেশের স্বাস্থ্যসেবার পার্থক্য, যেখানে শিশু মৃত্যুর হার বেশি রয়েছে; সেসব কমিয়ে আনতে কাজ করছেন তারা। এক্ষেত্রে তারা উপাত্ত, রোগ নির্ণয়ের সর্বাধুনিক পদ্ধতি এবং সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে টিকাদানকে কাজে লাগাচ্ছেন। তাদের এই গবেষণা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয় বরং একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তাদের কাজ ব্যবহৃত হচ্ছে।

সিএইচআরএফের কাজের বদৌলতে ও শিশুদের জন্য সরকারের গৃহীত টিকাদান কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্যসেবায় জোরালো সহায়তার কারণে বাংলাদেশে পাঁচ বছর বয়সের নিচের শিশু মৃত্যু হার কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিল গেটস। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে এখন টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এসেছে প্রায় ৯৮ শতাংশ।

সেঁজুতির বাবার ব্যাপারে বিল গেটস লিখেছেন, সমির সাহার ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান। শিশুমৃত্যুর বড় দুই ঘাতক ব্যাধি মেনিনজাইটিস ও নিউমোনিয়া রোগের টিকা ব্যবহারে বাংলাদেশকে সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি।

বিল গেটস তার ব্লগ পোস্টে বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি ঘটলেও বাংলাদেশের এখনও অনেক পথ পাড়ি দেয়ার রয়েছে। চলতি বছরে গোলকিপারস ইভেন্টে অংশ নিয়ে সেঁজুতি সাহা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এখনও যে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেসব গল্প তুলে ধরেছেন। শিশুদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকা শিশু হাসপাতালে প্রত্যেক বছর ৬ হাজারের বেশি শিশু ভর্তি না হতে পেরে ফিরে যায়। কারণ হাসপাতালটি ৬৬৫ শয্যার। আর এসব আসন সবসময় পূর্ণ থাকে।

শেষে সমির এবং সেঁজুতির কাজের প্রশংসা করে বিল গেটস লিখেছেন, এই বাবা-মেয়ের কাজের কল্যাণে বাংলাদেশ এমন এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সংক্রামক ব্যাধি খুব কম থাকবে এবং হাসপাতালের শয্যাগুলো ফাঁকা থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!