Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে মাতোয়ারা কক্সবাজার

থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে মাতোয়ারা কক্সবাজার

8adc1d43-54b5-47c9-ab19-dd7ccf9d5238_14696

নিউজ ডেক্স : “থার্টি ফার্স্ট নাইট” উদযাপনের জন্য কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়। বিকেল ৫টা ২৫মিনিট। শীতের এ সন্ধ্যার আকাশ কালের গহ্বরে নামবে ২০১৬ সালের শেষ সূর্য। রোববার ভোরের সূর্য উদয় ঘটাবে ২০১৭ সালের। বর্ষের বিদায় ও বরণ নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে ১ জানুয়ারি প্রথম প্রহর পর্যন্ত ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নিয়ে মাতোয়ারা কক্সবাজার।

পর্যটকদের জন্য ৩০ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সৈকতের লাবণী পয়েন্টে তিন দিনব্যাপী ‘বিচ কার্নিভাল’ চলার কথা উল্লে­খ করে কিছু প্লে-বোর্ড টাঙানো হয়েছে শহরের মোড়ে মোড়ে। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন আয়োজিত ধাঁধাঁময় এ কার্নিভালে লাইভ কনসার্টের পাশাপাশি ফুড ফেস্টিভাল, ট্যুরিজম ফায়ার, কিডস এন্টারটেইনমেন্ট, লেজার শো, ফায়ারওয়ার্ক, ফানুস ও ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব আয়োজনের কথা বোর্ডে উল্লেখ রয়েছে।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের অপারেশন ইনচার্জ সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হায়াত খান জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। তবে এবার শুধু অভ্যন্তরীণ অতিথিদের জন্যই অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ ছাড়ে খাবারের কুপনের সঙ্গে বলরুমে কিংবা হোটেলের ছাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন অতিথিরা। অতীত অভিজ্ঞতায় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাইরের কাউকে এবার অনুষ্ঠান দেখার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী পরিচয়ে পূর্বের অনুষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় এবার থার্টি ফার্স্ট নাইটে হোটেলে কোনো ধরনের আয়োজন থাকছে না বলে উল্লেখ করেন কক্সবাজারের আরেক তারকা হোটেল দ্য কক্স-টু-ডে’র রুম ডিভিশন ম্যানেজার অং ছা চিং চাক।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে হোটেলে অবস্থান করা অতিথিদের ফ্রি বিচের আয়োজন উপভোগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একদিকে চলমান বাণিজ্য মেলা, অপরদিকে বিচ কার্নিভাল ও বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভ শো এবং অন্যদিকে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান না করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা- সব মিলিয়ে তারকা হোটেল লং বিচও এবার কোনো আয়োজন রাখেনি বলে জানিয়েছেন সেলস অ্যান্ড রিজার্ভেশন কর্মকর্তা সরোয়ার হাসান।

তবে গণপূর্তমন্ত্রী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন হোটেল সায়মন বিচ রিসোটেও ইনহাউস গেস্টদের জন্য থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে বলে জানিয়েছেন এফ এন্ড বি ম্যানেজার ইমরান হোসাইন। স্বল্প মূল্যের বুফে ম্যানুর সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যুক্ত করা হয়েছে।

সাগর তীর লাগোয়া সি গাল, প্রাসাদ প্যারাডাইস, সি প্যালেসসহ অন্য হোটেলগুলোও অতীতের মতো বড় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও প্রায় সব হোটেল পর্যটকে ভর্তি থাকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) নির্বাহী সদস্য ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, বিদ্যালয় ছুটি থাকায় পরিবার, বন্ধু ও স্বজনদের নিয়ে বর্ষবরণ ও বিদায় উৎসব পালন করতে কক্সবাজার এসেছেন অনেকে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের শুরু থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ জুড়ে লাখো পর্যটকের উপস্থিতি রয়েছে কক্সবাজারে।

হোটেল-মোটেলের মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শহরের ৪৫০টির বেশি হোটেল, মোটেল ও কটেজের প্রায় সব কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, বড় দিনের ছুটির আগে দুই দিন সপ্তাহিক ছুটিকে মিলিয়ে ২৩ ডিসেম্বর থেকে বাড়তি পর্যটকের আগমন শুরু হয় কক্সবাজারে। বর্ষবরণ-বিদায় উৎসবে যোগ দিতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। বছরের শেষ ১০ দিনে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সৈকত তীরের ১৬টি তারকা হোটেলের সংগঠন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে প্রায় প্রতিটি হোটেলই অতিথিতে পূর্ণ ছিল। কক্ষ না পেয়ে ফিরে গেছেন অনেক পর্যটক। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব হোটেলের সব কটি কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে।

হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির অর্থ-সম্পাদক শফিকুর রহমান বলেন, শহরের ৪৫৩টি হোটেল-মোটেল কটেজে দৈনিক থাকতে পারেন প্রায় লাখো পর্যটক। এর অতিরিক্ত হলে হোটেলে ঠাঁই দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।

কক্সবাজার কটেজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহম্মেদ নোবেল বলেন, ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সৈকতের আশপাশের ২২০টি কটেজ’র কোনোটির রুম খালি নেই। এসব কটেজগুলোতে প্রায় ১০-১৫ হাজার পর্যটক অবস্থান করতে পারেন।

সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হওয়া পর্যটকদের উদ্ধারে কাজ করা রবি লাইফ গার্ডের ইনচার্জ ছৈয়দ নূর বলেন, বছরের এই শেষ দিনগুলোতে প্রায় ১০ কিলোমিটার সৈকতে প্রতিদিন কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। বিপুল সংখ্যক পর্যটককে সামাল দিতে সল্প সংখ্যক উদ্ধারকর্মীকে হিমশিম খেতে হয়। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ চাপ লেগে থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার শীত মৌসুম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কেউ সাগরে ভেসে যায়নি।

বড় দিনের ছুটি থেকে প্রতিদিন প্রায় লাখো পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসছেন জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে ১৫০ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ দিন রাত পালা করে শ্রম দিচ্ছে।

অগণিত লোকের ভিড়ে সৈকতে হারিয়ে যাওয়া ১৬ শিশুকে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করে স্বজনদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। পর্যটক সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে রাব্বি।

পর্যটন বিকাশে এতো মানুষের শ্রম ও সফলতার মাঝে কালিমা লেপন করছেন কিছু অতিলোভী হোটেল-মোটেল-কটেজ ও গেস্ট হাউস মালিক এবং পরিচালকরা। বছরের ছয় মাস মন্দা যাবার কথা মাথায় রেখে, বাড়তি পর্যটক আগমনকে উপলক্ষ্য করে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন তারা।

২০০-২৫০ স্কয়ার ফিট একটি কক্ষের ভাড়া প্রতি রাতে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় হাজার হওয়ার কথা থাকলেও আদায় করা হয় দুই থেকে ৫ হাজার টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে তা আরো বেশি। এতে রাজি না হলে সোজা উত্তর রুম খালি নেই। ভাড়া নির্ধারণে প্রশাসনিক নির্দেশনা না থাকায় এ পরিস্থিতি বলে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী সিলেট হবিগঞ্জ এলাকার কলেজ শিক্ষক কাজি ফরহাদের।

এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, হোটেল-মোটেলে কোনো পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেলে হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে কেউ অভিযোগ দেন না বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবস্থান করানোর পরও কোনো কাজ হয় না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)’র চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে পর্যটন একটি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্প। কক্সবাজার সৈকতকে ঘিরে এটির বিকাশ ক্রমেই অব্যাহত রয়েছে। এখন একসঙ্গে লাখো পর্যটকের আবাসন নিশ্চিত হচ্ছে ভবিষ্যতে পরিকল্পিতভাবে আরো বাড়বে আবাসন সংখ্যা। আমরা এখানে পুরো বছরই স্বাচ্ছন্দ্য ভরে পর্যটন সেবা নিশ্চিত করতে চাই। ক্রমে এটি প্রতিষ্ঠা পাবে, আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!