নিউজ ডেক্স : জেলাভিত্তিক কর্মী রপ্তানির হিসাবে চট্টগ্রাম জেলা তৃতীয় স্থান থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। বরাবরের মতো শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে কুমিল্লা জেলা। আর তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল—চার মাসে জনশক্তি রপ্তানির হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বিগত ২০১৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা কর্মী রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে ছিল। তা কমতে কমতে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম জেলাভিত্তিক তালিকার তৃতীয় স্থানে নেমে যায়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বাড়ি চট্টগ্রামে। তদুপরি চট্টগ্রাম কর্মসংস্থান অফিস থেকেও সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। তার পরও এই অবনতি ঘটে। অবশ্য চলতি ২০১৮ সালের শুরু থেকেই ধকল সামলে ওঠার চেষ্টা চলে। এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে চট্টগ্রাম। তবে চট্টগ্রামের সঙ্গে তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্যবধান সামান্য।
চট্টগ্রাম জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম জেলা থেকে কর্মী রপ্তানি বেড়েছে। মূলত চট্টগ্রামের তুলনায় অন্য জেলাগুলো কর্মী রপ্তানিতে এগিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম তালিকা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল।
জহিরুল আলম মনে করেন, চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী গেলেও মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে নারী কর্মী যাওয়ার হারও আগের চেয়ে কমেছে। একই সঙ্গে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নারী কর্মী বেশি যাচ্ছে। আবার সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমান ও কাতারে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে অনেক বেশিসংখ্যক কর্মী যাচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম একটু পিছিয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সেখানে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় চট্টগ্রাম আবারও শীর্ষে উঠে আসবে প্রত্যাশা করা যায়।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে, দেশের ৬৪ জেলাভিত্তিক কর্মী রপ্তানিতে ২০১০ সালেও চট্টগ্রাম জেলা ছিল শীর্ষে; কর্মীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪৮ হাজার। ২০১১ সালে তা বেড়ে ৭৩ হাজার পাঁচ শতে উন্নীত হয়। ২০১২ সালে তা একটু কমে ৭০ হাজার পাঁচ শতে নামে। ২০১৩ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে হোঁচট খায় চট্টগ্রাম। সে সময় চট্টগ্রাম থেকে কর্মী রপ্তানি প্রায় ৩৫ হাজার জনে নেমে আসে, যা এর আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক। একই সঙ্গে তালিকার শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে পড়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে চট্টগ্রাম। ২০১৩ সালে ৪৫ হাজার পাঁচ শ কর্মী রপ্তানি করে শীর্ষস্থান দখল করে কুমিল্লা জেলা।
চট্টগ্রাম দ্বিতীয় স্থানে থাকতেই ২০১৪ সালে কর্মী রপ্তানি আরো কমে ২৮ হাজারে নেমে আসে। ২০১৫ সালেও ৩২ হাজার পাঁচ শ জন কর্মী রপ্তানি করে দ্বিতীয় স্থানে থাকে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম ২০১৬ সালে ৪৫ হাজার ৭৮০ কর্মী রপ্তানি করে দ্বিতীয় স্থানে ছিল এবং সব শেষ ২০১৭ সালে ৫৮ হাজার ৭৫ জন কর্মী রপ্তানি করেও তৃতীয় স্থানে নেমে যায়।
ব্যুরোর হিসাব মতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা থেকে বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছে ২২ হাজার ৪২৫ ও চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৪ হাজার ৩৭৩ জন। চট্টগ্রাম জেলার সঙ্গে কুমিল্লার ব্যবধান বিশাল। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে গেছে ১৪ হাজার ২৬৭ জন।
জানতে চাইলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য এমদাদ উল্লাহ বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশেই চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী যায়। আমিরাতে কর্মী রপ্তানি অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে পড়েছিল। দুবাইয়ে কর্মী রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় চট্টগ্রামের কর্মীরা আবারও বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুযোগটা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে চট্টগ্রাম আগের শীর্ষস্থানে উঠে যেতে পারবে।
সূত্র : কালের কন্ঠ