Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামে নির্মিত হচ্ছে ৭৩টি বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র

চট্টগ্রামে নির্মিত হচ্ছে ৭৩টি বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিউজ ডেক্স : ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের মতো মহাদুর্যোগে জানমাল রক্ষার্থে চট্টগ্রামে নির্মিত হচ্ছে ৭৩টি বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় মাল্টিপারপাস ডিজেস্টার শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ বাঁশখালী, আনোয়ারা, সন্দ্বীপসহ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলাতেই এ ধরণের শেল্টার নির্মাণ করা হবে। এসব শেল্টারে মানুষের পাশাপাশি গৃহপলিত পশুপাখি রাখারও ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি সোলার প্যানেল স্থাপন ও দুর্যোগে সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্মাণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। মূলত দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নির্মিত হলেও এসব আশ্রয়কেন্দ্র স্বাভাবিক সময়ে স্কুলের পাঠদানের জন্য ব্যবহার করা হবে।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক বহুমুখী দুর্যোগের কবল থেকে জানমাল রক্ষা করা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জনজীবন ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৯ জেলায় বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এমডিএসপি প্রকল্পের আওতায় এসব জেলায় ৫৫৬টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, ৪৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার পুনর্বাসন ও মেরামত, দুর্যোগকালীন সময়ে সাইক্লোন শেল্টারে যোগাযোগের জন্য ৫৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং ৫০০ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি শুরু হলেও চট্টগ্রামে এখনও নতুন শেল্টার নির্মাণ করা হয়নি। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় ৭৩টি শেল্টার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। এর জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা। আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে।

নির্মিতব্য সাইক্লোন শেল্টারগুলোর প্রতিটি রুমের আয়তন হবে ২৯০ থেকে ৩৪২ বর্গমিটার পর্যন্ত। প্রতিটি রুমের ধারণক্ষমতা হবে ১ হাজার ৩০০ জন থেকে ১ হাজার ৫০০ জন। নারী ও পুরুষদের জন্য থাকবে আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে গর্ভবতী নারীদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা রুমের ব্যবস্থা। যাতে দুর্যোগকালীন সময়ে তারা স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম দিতে পারেন। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও রাখা যাবে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে।

এ ছাড়া আশ্রয় নেয়া লোকজনের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র রাখার জন্য স্টোর রুমের ব্যবস্থা থাকবে এসব সাইক্লোন শেল্টারে। দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টি মাথায় রেখে বসানো হবে সোলার এনার্জি সিস্টেম। পাশাপাশি আশ্রয় গ্রহণকারীদের সুপেয় পানির জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও তা ফিল্টার করা যায়।

নির্মিতব্য তিনতলা ভবনের নিচ তলা ফাঁকা রাখা হবে। এর দ্বিতীয় তলায় গবাদি পশু এবং তৃতীয় তলায় স্কুল কাম শেল্টার থাকবে। ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ২৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় হওয়ার বিষয় বিবেচনায় রেখে ভবনগুলোর নকশা তৈরি করা হয়েছে।

প্রকল্পের চট্টগ্রামে দায়িত্বরত সিনিয়র কনসালটেন্ট রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মানুষ, গবাদী পশুসহ বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাটের ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুর্যোগকালে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এ জন্য চট্টগ্রামে ৭৩টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি ভবন নির্মাণে ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার যেসব স্কুলের ভবন জরাজীর্ণ সেসব স্কুলকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। নির্মিতব্য ভবনগুলো স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষাদানের জন্য ব্যবহৃত হবে। যে কোনো সময়ে এসব শেল্টার নির্মাণে টেন্ডার আহ্বান করা হতে পারে।

এ ব্যাপারে এলজিইডি চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘দুর্যোগপ্রবণ কোস্টাল এলাকার মানুষের নিরাপত্তা, দুর্যোগে জানমাল রক্ষার পাশাপাশি প্রাইমারি স্কুলগুলোতে পাঠদানের সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছাসে প্রাণ ও সম্পদহানি রোধ করা সম্ভব হবে।’

এদিকে, আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!