Home | অন্যান্য সংবাদ | কীভাবে বুঝবেন গুজব?

কীভাবে বুঝবেন গুজব?

maxresdefault

নিউজ ডেক্স : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ভুয়া তথ্য প্রচারকে কেন্দ্র করে নানাসময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় বিতর্কের। এসব গুজব যে কোনও মুহূর্তে সমাজের পরিসি’তি আরও সংকটের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এ থেকে প্রতিকার পেতে তথ্য প্রকাশ বা ঘটনার ছবি ও ভিডিও শেয়ারে সবার সতর্ক থাকাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনও তথ্য শেয়ার করা বা প্রকাশ করার সময় খুবই সতর্ক থাকা উচিত। তথ্য প্রকাশ করার আগে বারবার বিভিন্নদিক থেকে সেটা ক্রসচেক করে নেওয়া উচিত। খবর বাংলাট্রিবিউনের।

গুজব ছড়ানোর ইতিহাস বাংলাদেশে নতুন নয়। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট রোববার রাজধানীর সায়ন্স ল্যাবরেটরি থেকে জিগাতলা এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ করেই কেউ সেখানে এসে জানায়, ‘ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় চার জন ছাত্রকে মেরে ফেলা হয়েছে, একজনের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, চার ছাত্রীকে সেখানে ধর্ষণ করা হচ্ছে।’ এ তথ্য মুহূর্তেই সেখানে থাকা কয়কশ’ শিক্ষার্থীকে উত্তেজিত করে তোলে। তারা দলবেঁধে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রথমে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ অফিসে ঢিল ছুড়লে দলটির বিভিন্ন পর্যায়র নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ঘটে। এদিকে, এ তথ্য পেয়েই কোনও রকম বাদ-বিচার না করেই তা ফেসবুকে ভিডিও আকারে শেয়ার করেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। মুহূর্তের মধ্যে ওই ভিডিও ভাইরাল হয় সারাদেশে তোলপাড়ের সৃষ্টি করে। একইভাবে এই তথ্য দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ভিডিও ও স্ট্যাটাস শেয়ার করে অসংখ্য মানুষ। যদিও কয়েক ঘণ্টা পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঘটনাস’ল আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘুরে এসে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, সেখানে এমন কিছুই ঘটেনি।

এর আগে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু থামাতে ‘সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে’ এমন গুজব ছড়িয় বলা হয় ‘যারা এ কথা বিশ্বাস করবে না তাদের ঈমান নষ্ট হয় যাবে।’ এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে সাতকানিয়া, গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৬ ব্যক্তি নিহত ও শতাধিক আহত হন।

ওই বছরের ৫ মে ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে রাজধানীর শাপলা চত্বরে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ ও অবস’ান কর্মসূচি শুরু করলে রাতে তাদের হটিয়ে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সে রাতে হেফাজতের হাজারখানেক নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার গুজব রটলেও পরে এর কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি সংগঠনটি। এই ইস্যুতে তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ৬১ জন নিহত হওয়ার দাবি করলেও তথ্য প্রমাণ দিতে না পারায় অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গুজব ছড়িয়ে সমাজ জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির এমন অপচেষ্টা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই নানা সময় করে আসছে সুবিধাবাদী মহল। তাই কোনটি গুজব আর কোনটি সঠিক সংবাদ তা সবার আগে যাচাই করার কৌশল সম্পর্কে সবার সাধারণ ধারণা থাকা উচিত।

জানা যায়, অনলাইনে প্রকাশিত কোন ছবি, কোনও খবর বা কোন তথ্যের সঠিক সোর্স কী তা যাচাই করতে সহযোগিতা করে গুগলসহ অন্যান্য বেশ কিছু সার্চ ইঞ্জিন। বেশ কিছু সফটওয়ার ব্যবহার করেও তথ্য যাচাই বাছাই করা সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন দেশের বেসরকারি বেশ কিছু সংস’াও প্রকাশিত সংবাদ যাচাই বাছাইয়র কাজটি করে থাকে।

জানতে চাইলে তথ্য প্রযুক্তির রিসার্চ অর্গানাইজেশন প্রেনিউর ল্যাবের সিইও ও ফেসবুক ডেভেলপার গ্রুপের সাবেক ম্যানেজার আরিফ নিজামী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা যে কোনও ছবি বা তথ্য সঠিক নাকি গুজব তা বোঝার কয়কটি উপায়ের কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও ছবি, ভিডিও বা তথ্য শেয়ার করতে গেলে অবশ্যই খুবই সতর্ক থাকা উচিত। আর সেই সতর্কের অংশ হিসেবেই বেশ কিছু বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে। আর বিষয়টা গুজব কিনা তা বোঝার বেশ কিছু উপায়ও রয়েছে।‘

‘কোনও তথ্য, ছবি বা ভিডিও সঠিক কী না সেটা বুঝতে হলে যিনি শেয়ার করেন তিনি বিশ্বস্ত কেউ কিনা হতে পারেন বন্ধু, হতে পারেন কোনও সেলিব্রেটি, অথবা বিশ্বস্ত কোনও পত্রিকা তা প্রথমেই খেয়াল করা উচিত। এছাড়া, যে বা যারা ওই তথ্যগুলো প্রকাশ করেন তারা নিজে সেটা দেখেছে, নাকি অন্য কারও কাছ থেকে জেনেছে সেটা জানা খুবই জরুরি। যখন কোনও মুভমেন্ট বা আন্দোলন হয় অথবা কোনও একটি সংকট পরিসি’তি চলমান থাকে তখন কোনও তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে হলে বারবার চেক করা উচিত। তারপরও যদি মনে হয়, সেই তথ্য শেয়ার করলে পরিসি’তি আরও সংকটপূর্ণ হতে পারে, সেক্ষেত্রে এমন তথ্য না ছড়ানোই উত্তম। এছাড়া যদি তথ্য শেয়ার করতেই হয় তাহলে একটু সময় নিয়ে, হতে পারে এক থেকে চারঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর তা শেয়ার করা উচিত। এতে করে এই সময়ের মধ্যে ওই তথ্য সঠিক নাকি গুজব তার একটি প্রতিফলন দেখা যায়’, জানান তিনি।

গুগলে ইমেজ সার্চ করেও ছবি সঠিক নাকি মিথ্যা তাও জানা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গুগলে ইমেজ সার্চ নামে একটি অপশন রয়েছে। সেখানে যে সোর্স থেকে ইমেজগুলো এসেছে সেই সোর্সের লিংক অথবা ছবি গুগল ইমেজে ইনপুট দিলে ওই ছবির রিলেটেড ছবিগুলো দেখা যায়। তখন প্রকৃত ছবি কবে কোন সাইটে বা কোন ফেসবুক আইডিতে আপলোড করা হয় তা জানা যায়। ছবি বা তথ্যটি পুরোনো কিনা তা যাচাই করতে তা প্রকাশের তারিখের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। সর্বশেষ যে পদ্ধতি তা হলো সাধারণ জ্ঞান। খুব স্বাভাবিকভাবেই কোনও তথ্য শেয়ার করতে গেলে একটু সতর্ক থাকতে হবে। যেটা শেয়ার করবেন বলে ভাবছেন সেটা অন্য কোনও অথেনটিক নিউজ পেপার বা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত বা প্রচারিত কিনা অথবা সোর্স বিশ্বস্ত কিনা সেটা বুঝে তারপর শেয়ার করা উচিত।’

এদিকে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে তথ্য যাচাইয় ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ’ নামে এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় গত বছর। গত ৫ জুন এই কার্যক্রমের ওয়ব সাইট উদ্বোধন করা হয়। এই টিমের সদস্যরাও প্রকাশিত কোনও তথ্য সত্য নাকি মিথ্যা তা যাচাই বাছাই করে।

ইউল্যাবের শিক্ষক অধ্যাপক সুমন রহমান জানিয়েছেন, ‘ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এমনকি মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত কোনও খবর বা তথ্যের সত্যতা যাচাই বাছাই করে ফ্যাক্ট-ওয়াচ টিম। এই খবর যাচাই বাচাই করার জন্য প্রাথমিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গুগল সার্চ ইঞ্জিন এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কোনও গবেষণাগারেরও সহযোগিতা নেওয়া হয়।’ যে কোনও ব্যক্তি নিজের জানার আগ্রহ থেকে যে কোনও তথ্য বা সংবাদ যাচাই বাছাইয়ের জন্যও এই টিমের সহযোগিতা নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!