নিউজ ডেক্স : ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ শক্তি হারিয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই আসবে, বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী এটা প্রায় নিশ্চিত। লঘুচাপ হিসেবে এটি আগামী ১৪ মে বরিশাল ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে ভারিবৃষ্টি এবং জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
‘অশনি’ এখনো প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ধীরগতিতে (প্রতি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার) পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এটি ভারতের উপকূলের কাছাকাছি গিয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের দিকে বাঁক নিতে পারে।
মঙ্গলবারের (১০ মে) মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। ‘অশনি’র প্রভাবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি আগামী ১৪ মে পর্যন্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের দিকেই মোড় নেবে হয়তো। কিন্তু সমুদ্রের মধ্যেই সে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপের রূপ নেবে। বাংলাদেশের দিকে এলেও ক্ষতি করার মতো কোনো শক্তি তার থাকবে না। মূলত বৃষ্টি ঝরিয়ে এটি বাংলাদেশের স্থলভাগে এসে নিঃশেষ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের স্থলভাগ স্পর্শ না করেই সমুদ্র থেকেই বাংলাদেশের দিকে মোড় নেবে। এটি যেহেতু ভারতের উপকূলের কাছাকাছি যাবে, তাই ভারত হয়তো কিছু ঝোড়ো বাতাস পেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে তাই আমাদের আর ভয়ের কিছু নেই। আমাদের এদিকে হয়তো লঘুচাপ হিসেবে আসতে পারে। আগামী কয়েকদিন এর প্রভাবে বাংলাদেশ বৃষ্টি হবে। আগামী ১৪ মে থেকে আবহাওয়া মোটামুটি ভালো হতে থাকবে।’
সব এখন পর্যন্ত সমুদ্র বন্দরগুলোতে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল রয়েছে জানিয়ে বজলুর রশিদ বলেন, ‘এটি আমাদের উপকূলের কাছাকাছি এলে যদি মেঘ বেড়ে যায় তখন হয়তো ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেওয়া হতে পারে।’
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনবিলিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ‘সবগুলো আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের দিকে আসছে। এটি শক্তি হারিয়ে আগামী ১৪ মে দুপুরের দিকে লঘুচাপ হিসেবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর বাতাস থেকে আমাদের ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম। আমাদের যা ক্ষতি হবে তা বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে হবে।’
ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি এসে আবার ৯০ ডিগ্রি কোণে মোড় নিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসার বিষয়ে এ আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ১১ মে’র দিকে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের কাছে এসে ৯০ ডিগ্রি কোণে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেবে। আগামী দু’দিনের মধ্যে ভারতের মধ্যভাগে জেট স্ট্রিম আসবে। এর তরঙ্গ পাদের কারণে উচ্চচাপের সৃষ্টি হবে, যা ঘূর্ণিঝড়টিকে ঠেলে দেওয়ার কারণে এটি গতিপথ বাংলাদেশের দিকে ঘুরে যাবে।’
ঘূর্ণিঝড়টির দুর্বল হওয়ার বিষয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, সমুদ্রের পানিতে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পটেনশিয়াল (টিসিএইচপি) ৭৫ এর নিচে থাকলে সেখানে কোন খনিজ সক্রিয় থাকতে পারে না। উড়িষ্যা উপকূলের কাছে টিসিএইচপি ৫০-এর নিচে। এছাড়া এখানকার অগভীর পানির তাপমাত্রাও অনেক কম। তাই স্বাভাবিকভাবেই ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে যাবে।’
১৪ মে’র দিকে পূর্ণিমা থাকায় বরিশাল ও নোয়াখালীর দ্বীপাঞ্চলের দিকে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ।
অপরদিকে, বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি মঙ্গলবার (১০ মে) সকাল ৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
‘প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।’
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। -জাগো নিউজ