ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে জীববৈচিত্র্য

ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে জীববৈচিত্র্য

DSC_1087-787x525

অধ্যাপক ড. বদরুল আমিন ভূইয়া : আজ বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে দিবসটি ঘোষণা করা হয়। তখন থেকে দিবসটি আর্ন্তজাতিকভাবে পালন করা হয়। এবার ২৫তম দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সেলিব্রেটিং ২৫ ইয়ার্স অব একশন ফর বায়োডাইভার্সিটি’।

আমাদের চর্তুপাশে সকল জীবিত বস্তু আমাদের জীবনের অংশ। যে বাতাস আমরা গ্রহণ করি, যে পানি আমরা পান করি এবং যে খাদ্য আমরা খাই, তার সবই জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের কারণে বর্তমান সময়ে জীববৈচিত্র্য ঝুঁিকতে। – আমরা কি এটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারি?
পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য অন্যতম ভূমিকা পালন করে। পরিবেশের ভারসাম্য না থাকার কারণে জলাবদ্বতা এবং পাহাড় ধ্বসের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় অহরহ ঘটছে। জীববৈচিত্র্য একটি এলাকার, তথা একটি দেশের মূল্যবান সম্পদ। এই সম্পদ হতে আমরা যে সকল সেবা পেয়ে থাকি তাকে ইকোসিস্টেম (বাস্তুতন্ত্র) সার্ভিস বলা হয়। বাস্তুতন্ত্র, খাদ্য চক্রকে টেকসই রাখে, মাংস, দুধ, ডিম হিসাবে আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে, আমাদের মধু, মোম প্রদান করে, প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জীবন রক্ষাকারী ঔষধ ও টিকা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, চিড়িয়াখানায় প্রাণীরা এবং পর্যটন (নির্মল আনন্দ) মানুষকে বিনোদন দেয়, ময়লা পরিষ্কারক হিসেবে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে, ব্যাগ, জুতা, জ্যাকেট ইত্যাদি তৈরিতে বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া ব্যবহৃত হয়, অনুজীব মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীকে পচনের মাধ্যমে পরিবেশকে সুস্থ রাখে, বিশুদ্ধ বাতাস (অক্সিজেন) ও বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, ঔষধ, জৈব জ্বালানি সরবরাহ করে, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং প্রবাল প্রাচীর আমাদের ঝড় এবং সুনামি থেকে রক্ষা করে থাকে, জৈবিক পচনশীল বর্জ্য হতে জৈবিক সার ও বিদ্যুৎ, উর্বর মাটি, আশ্রয়, ঝড় ও বন্যা হতে প্রতিরোধ এবং স্থিতিশীল ঋতু পাই, নাইট্রোজেন সংবন্ধন, কার্বন পৃথকীকরণ, তন্তু- এ সবই আমরা পেয়ে থাকি সুস্থ প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র হতে। প্রকৃতি কখনো স্বার্থপর হয় না, আমরাও যেন স্বার্থপর না হই। একটি গাছের চারা রোপন একটি ভবিষৎ রোপন করার মত। সবাই গাছের শীতল ছায়ায় গাড়ি র্পাক করতে চায়্ কিন্তু কেউ একটি গাছের চারা রোপন করার কথা ভাবে না। বৃক্ষ না থাকলে কোথাও অক্সিজেন থাকতো না। বৃক্ষ বাতাসে সৃষ্ট দূষণ শোষণ করে। ঘণ গাছপালা বাতাসের কার্বণ ডাই অক্সাইড অপসারণে অত্যন্ত কার্যকর। বনের গাছপালা তাদের বীজ বিস্তারের জন্য বৃহৎ বন্যপ্রাণীর এবং পক্ষীকুলের উপর নির্ভরশীল। নিচের পরিসংখ্যান গাছের প্রয়োজনীয়তার একটি ধারণা দিতে পারে। বৃক্ষ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে, একজন মানুষ বছরে শ্বাস-প্রশ্বাসে ৯.৫ টন বায়ু নির্গত করে এবং একটি গাছ বছরে মাত্র ১০ কেজি অক্সিজেন নির্গত করে। একটি পরিষ্কার পাতাওয়ালা গাছ যে পরিমাণ অক্সিজেন নির্গত করে তা এক বছরে ১০ জন মানুষ গ্রহণ করে। একটি পরিপক্ক বৃক্ষ বছরে ৪৮ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং যে পরিমাণ অক্সিজেন ত্যাগ করে তা দিয়ে ২ জন মানুষ সারা বছর ভালভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। একটি মটরগাড়ী ২৬ হাজার কি.মি চলার ফলে যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদিত হয়, তা এক একর গাছ গ্রহণ করে এবং এক একর গাছ যে অক্সিজেন ত্যাগ করে তা দিয়ে ১৮ জন মানুষ সারা বছর শ্বাস প্রশ্বাস চালাতে পারে। দুইটি পরিপক্ক গাছ থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন নির্গত হয় তা দিয়ে চার সদস্যের একটি পরিবারের সারা বছরে অক্সিজেন চাহিদা মেটে। অনেক নতুন নতুন ঔষধও প্রকৃতি থেকেই পাওয়া যায়। মৌমাছি এবং প্রজাপতি যদি গাছের ফুলে পরাগায়ন না করতো তবে আমরা কোন ফল পেতাম না। পরাগায়নকারীরা এ পৃথিবীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফুলের পরাগায়ন করে পরাগায়নকারীরা ফল উৎপাদনে সাহায্য করে। তিন চর্তুথাংশ ফসলই পরাগায়নের উপর নির্ভরশীল। মাত্র এক চামচপূর্ণ মাটিতে ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার অনুজীব থাকে – যা আমাদের ৯০ ভাগ খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। পৃথিবীতে জীববৈচিত্র আমাদের এর চেয়েও বেশি কিছু দিয়ে থাকে। পৃথিবীর অগণিত উদ্ভিদকূল, প্রাণীকূল এবং অনুজীবসমূহ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একত্রিত হয়ে পরিবেশকে মানুষসহ সকল জীবের বাসযোগ্য করে তোলে। কিন্তু জীববৈচিত্র্যকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে আমরা নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!