এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া থানার বিদায়ী অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি আবেগঘন স্ট্যাটার্স দিয়েছেন। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) রাতে লোহাগাড়ার প্রিয় মানুষদের উদ্দেশ্যে এ স্ট্যাটার্স দেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
বিদায় লোহাগাড়া। প্রিয় লোহাগাড়াবাসী আসসালামু আলাইকুম। আমার আঠার বছরের চাকুরী জীবনে লোহাগাড়া থানায় একবার পরিদর্শক তদন্ত এবং একবার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকুরী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লোহাগাড়াতে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ আমি অফিসার ইনচার্জ হিসেবে লোহাগাড়ায় যোগদান করে ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত কর্মরত ছিলাম। থানায় যোগদানের পর আমি লোহাগাড়া থানাকে দালালমুক্ত করা, সাধারণ জনগনকে হয়রানি না করা এবং সকল ধরনের পুলিশিসেবা নিশ্চিত করার যে অংগীকার করেছিলাম তা পালনে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। থানা পুলিশের সবাইকে নিয়ম শৃংখলার মধ্যে রেখে তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চটুকু আদায়ের চেষ্টা করেছি। আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা। অনেক প্রতিকূলতা এবং বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বোঝা নিয়ে আমার টিম লোহাগাড়ার অদম্য সাহসী অফিসার ফোর্সের প্রচেষ্টায় বড় ধরণের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এই জন্য থানার সকল সদস্যকে ৬ মাস পূর্বে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। পরবর্তীতে ৩১ মার্চ ২০১৯ এর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও সবার সার্বিক সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এই দুইটি নির্বাচনে পুলিশ বা সাধারণ জনগনের কোন ক্ষতি না হয় সেই দিকে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। কক্সবাজার সীমান্তবর্তী হওয়ায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। কোন মাদক কারবারী বা পরোয়ানাভূক্ত আসামীর সাথে আপোষ করিনি। আমার প্রায় ২২ মাসের কর্মকালে ডাকাতির কোন ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি। ক্লুলেস হত্যা মামলাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা এ সময়ে নিস্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলসহ সর্ব ক্ষেত্রে লোহাগাড়া থানা পুলিশ জেলায় নৈপুন্যের স্বাক্ষর রেখেছে। তা সম্ভব হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব নুরেআলম মিনা বিপিএম বার, পিপিএম মহোদয়ের অনুপ্রেরণা আর সার্বিক সহযোগিতায়। আমার কর্মকালে যারা আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তাদের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত সামরিক সচিব জনাব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম পিএসসি, সংসদ সদস্য জনাব প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী মহোদয়সহ অনেকে রয়েছেন। যারা আমাকে সহযোগিতা এবং পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন আমি তাদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমি চেষ্টা করেছিলাম লোহাগাড়া থানাকে একটি জনবান্ধব পুলিশ ইউনিট ও সাধারণ মেহনতী মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। আমার একটু কঠিন অবস্থানের কারণে কিছু কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি নাখোশ হতে পারেন। আমার কার্যক্রম মূল্যায়নের ভার এবং সফলতা লোহাগাড়া থানার প্রিয় সহকর্মী ও আপনাদের আর সকল ব্যর্থতার দায় শুধুই আমার। লোহাগাডার সবাইকে অনেক মিস করছি। চাকুরীর এই সময়টা কখনো ভুলার নয়। বদলী হয়ে আসার সময় অনেককে বলে আসা সম্ভব হয়নি, সে জন্য এবং আমার যে কোন ভুলের জন্য সবার কাছে করজোরে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি গত ৪ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় যোগদান করেছি। বিলম্বে হলেও লোহাগাড়ার প্রিয় মানুষদের কাছে বিদায় বার্তাটা দিলাম। আল্লাহ সবার সহায় হোন।