Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সাতকানিয়ায় পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ, ইয়াবা দিয়ে পুলিশেই সোপর্দ

সাতকানিয়ায় পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ, ইয়াবা দিয়ে পুলিশেই সোপর্দ

image-12934-1537185429

নিউজ ডেক্স : সাতকানিয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তিন ফল ব্যবসায়ী ও এক কন্যা শিশুকে অপহরণের পর ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে অপহরণকারীরা। পরে পুলিশ প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পেরে অভিযান চালিয়ে এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত অপহরণকারীর নাম ফারুখ আজিজ প্রকাশ ফারুখ খান (৩০)। এসময় অপহৃতদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ার মৃত মোঃ জাফরের পুত্র আলী আকবর, তার ভাতিজি শাহেদা আকতার, আত্মীয় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার মোঃ শিপন, মোঃ ফরিদ সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে সিএনজি চালিত ট্যাক্সি যোগে সুয়ালক যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী ট্যাক্সিটি কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের সাতকানিয়া অংশের মনতলা নামক এলাকায় পৌঁছার পর অপহরণকারীরা সিগন্যাল দিয়ে গতিরোধ করে। অপহরণকারীরা নিজেদেরকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে ট্যাক্সিতে থাকা তিন ফল ব্যবসায়ী ও কন্যা শিশুকে অপহরণ করে জনার কেঁওচিয়া মোনাফ চেয়ারম্যানের বাড়ি ঘাটা এলাকায় নিয়ে এসে একটি ফার্নিচারের দোকানে আটকে রাখে। এসময় তারা অপহৃত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে বাড়িতে ফোন করে খবর দিয়ে আরো ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ আনার জন্য অপহৃতদেরকে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। কিন্তু অপহৃত ব্যবসায়ীরা তাতে রাজি না হওয়ায় ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার হুমকি দেয়। এরই মধ্যে খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন অপহরণকারীরা অপহৃত ব্যবসায়ীদেরকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এসময় পুলিশ ২৮ পিস ইয়াবাসহ তিন ব্যবসায়ী ও কন্যা শিশুকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অপহৃত ব্যবসায়ীরা পুরো ব্যাপারটি খুলে বলেন। তখন পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই দিন রাতেই অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের সদস্য ফারুখ আজিজ প্রকাশ ফারুখ খানকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় অপহৃতদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ফারুখ আজিজ উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া সামিয়ার পাড়ার মোঃ সোলাইমানের পুত্র।

অপহৃত ব্যবসায়ী মোঃ ফরিদ বলেন, আমি আর শিপন চট্টগ্রাম শহরে মৌসুমী ফলের ব্যবসা করি। বান্দরবানের সুয়ালকের আলী আকবর আমাদের আত্মীয়। আলী আকবর কয়েকদিন আগে তার ভাতিজি শাহেদাকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে যান। তখন তিনি জানান, বান্দরবান থেকে ফল এনে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্রি করলে লাভ বেশি হবে। এজন্য আলী আকবর ভাইয়ের সাথে আমি আর শিপন বান্দরবান যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। কেরানীহাটে পৌঁছার পর আমরা সিএনজি ট্যাঙি ভাড়া করি। কিছু দূর যাওয়ার পর কয়েকজন যুবক সিগন্যাল দিলে আমাদের বহনকারী ট্যাঙিটি থামায়। তখন ওই যুবকরা নিজেদেরকে গোয়েন্দা পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। এক পর্যায়ে বলে উঠে আমরা নাকি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। এসব নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা আমাদেরকে জোরপূর্বক অপহরণ করে একটি ফার্নিচারের দোকানে নিয়ে যায়। আমাদেরকে নেয়ার পর ওই ফার্নিচারের দোকানে আরো কয়েকজন যুবক আসে। এরপর মারধর করে আমাদের কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে অপহরণকারীরা আমাদেরকে জানায়, বাড়িতে ফোন করে আরো ৫ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য। না হলে ইয়াবা দিয়ে আমাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেবে। তখন আমরা অপহরণকারীদেরকে জানাই, বাড়িতে ফোন করে টাকা আনতে পারবো না। টাকা দেয়ার মতো আমাদের কেউ নাই। প্রয়োজনে পুলিশের কাছে দিয়ে দেন। এরই মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর আমাদেরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। অপহরণকারীরা আমাদের সাথে ২৮ পিস ইয়াবা দেয়। থানায় নেয়ার পর পুলিশের কাছে আমরা সব কিছু খুলে বললে পুলিশ ব্যাপারটি বুঝতে পারে এবং রাতে এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।

সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ওবায়দুল ইসলাম জানান, ইয়াবাসহ ৩ ব্যবসায়ীকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করার পর বিষয়টি আমাদের নিকট সন্দেহজনক মনে হয়। পরে ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমরা প্রকৃত ঘটনাটি বুঝতে পারি। এরপর ওইদিন রাতে অভিযান চালিয়ে এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার ও অপহৃতদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অপহরণ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে। তিনি জানান, অন্যান্য আসামিদেরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!