ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সরকারকে ‍অবিলম্বে ৫০ লাখ টন ধান কেনার সুপারিশ

সরকারকে ‍অবিলম্বে ৫০ লাখ টন ধান কেনার সুপারিশ

dhan-03-20190528191544

নিউজ ডেক্স : বর্তমান বাজারদরে প্রতি মণ ধানে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লোকসান করছে কৃষক। কৃষকের ক্ষতি পোষাতে সরকারকে ৫০ লাখ টন ধান কেনার পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অ্যাকশন এইড-এর সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ধানসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে এসব দাবি করেন বক্তারা।

‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ ও ‘পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কৃষির যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে স্থায়ী মূল্য কমিশন গঠন করা দরকার। আরও দরকার শক্তিশালী কৃষক সংগঠন।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, উন্নত দেশগুলোতেও সরকার খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভর্তুকি দেয়। আমাদের সরকারও এক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে থাকে, কিন্তু এর সুফল আমাদের কৃষকরা সেভাবে পান না মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। এর একটা বড় কারণ হলো কৃষকরা এ দেশে অসংগঠিত।

আনোয়ার ফারুক বলেন, আমাদের কৃষিপণ্য পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দাবি করি। কৃষিক্ষেত্রে যা-ই ঘটুক, আমাদের প্রেক্ষাপটে ধান চাষ অব্যাহত থাকবেই। বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা কৃষককে সংকটে ফেলে দিয়েছে। এ মুহূর্তে কৃষককে তিন-চার মাসের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের স্থানভেদে বিকল্প কৃষি উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা অনেক সুপারিশ করে, কিন্তু কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে তা-ই গুরুত্বপূর্ণ। ধান ও চালের বাজারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, বিশেষত ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যায়। কৃষকদের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরের অভাব রয়েছে দেশে। সাম্প্রতিক সংকট সমাধানে সরকারকে সংবেদনশীল মনে হয়নি। সরকার মাঠ থেকে দ্রুত প্রকৃত তথ্য নেয়ার চেষ্টা করতে পারত। সরকারের সামর্থ্য না থাকলে গৃহস্থের ঘরেই ধান মজুত রাখার উদ্যোগ নিতে পারত সরকার।

সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মূল্য কমিশনের বেঁধে দেয়া সুনির্দিষ্ট মূল্যে সরকারিভাবে প্রচুর পরিমাণ ধান ক্রয় করা হয়। আমাদের দেশেও এ কমিশন গঠন করে সুফল পেতে পারি। ধান আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো-বাড়ানোর তাৎক্ষণিক সুফল কৃষকরা পান না। এক্ষেত্রে গবেষণা ও মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সাহানোয়ার সাঈদ শাহীন দেশের বর্তমান কৃষি খাতের চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, দেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কৃষককে বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারা আমাদের একটি বড় ব্যর্থতা। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়েই চলছে। উৎপাদিত ধানের মাত্র ৬ শতাংশ মজুতের ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও উপকরণ ব্যবহারে অদক্ষতা এবং প্রতারণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। এছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি ব্যবহারেও ভারসাম্যহীনতা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সুপারিশে তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারি শস্য মজুতের পরিমাণ আগামী দুই বছরের মধ্যে ৬০ লাখ টনে উন্নীতের পাশাপাশি কমিউনিটিভিত্তিক শস্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। কৃষিবান্ধব যৌক্তিক আমদানিনীতি গ্রহণ করতে হবে। কৃষিনীতির যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার। সর্বোপরি সরকার যদি তার নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত কৃষি বিষয়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয় তাহলেই এক্ষেত্রে অগ্রগতি সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!