ফিরোজা সামাদ : শাহানা বেগম ভাই জলফুকে তাগিদ করতে থাকেন, ঘটকের কাছ থেকে কৌশলে ঠিকানাটা নিয়ে নেয় জলফু। কিন্তু দূর্ভাগ্য যখন কড়া নাড়ে কোনোকিছু করার থাকেনা। হঠাৎ করেই জলফু জ্বর ও সর্দিতে অাক্রান্ত হয়ে শয্যাগত হয়। জ্বর একসময় টাইফয়েডে রূপ নেয়। অনেক চিকিৎসা করানোর পর সুস্হ হলেও উঠে দাড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে জলফু । শাহানা বেগমের দু’চোখ অাঁধারীতে ছেয়ে যায়। জলফুও বড়ো বোন অার ভাগিনীর মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকায় অার সান্ত্বনা দেয়…..
—- চিন্তা করোনা অাপা অামি একটু
হাটতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান
হয়ে যাবে। অামার মা’য়ের মুখে হাসি
অামি ফোটাবোই।
এই বলে শুভ্রতার দিকে হাসি মুখে তাকায় । শুভ্রতাও অনিশ্চয়তার হাসি হাসে মামার মুখের দিকে তাকিয়ে।
এর মধ্যেই শুভ্রতার বিদেশ যাওয়ার পাসপোর্ট ভিসা ও অন্যান্য সব কাগজপত্র অারিফ পাঠিয়ে দেয় শ্বশুর এনামূল হক সাহেবের কাছে। মাঝে একবার টেলিফোন করেছিলো অারিফ। শুভ্রতার সাথেও কথা হয়েছে, এই মিনিট তিনেক। বাবা ভাই সকলেই সামনে ছিলো। শুভ্রতা অাগ বাড়িয়ে কিছুই বলেনি, শুধু শুনেছে অার উত্তর দিয়েছে।
কয়েকদিন অাগে শুভ্রতার বান্ধবী লাবনি এসেছিলো দেখা করতে। ও মারুফের কাছেই শুনেছে শুভ্রতার বিয়ের খবরটা।
শুভ্রতা মারুফ সম্পর্কে কোনো কিছুই জানতে চাইলো না। ওর কেমন যেনো ধীরে ধীরে মারুফের উপর চাপা একটা অভিমান হলো। মারুফকে মেরুদণ্ড বিহীন একটি পুরুষ মনে হতে থাকলো। হয়তো এটাও শুভ্রতার অাত্মপ্রবঞ্চনা । লাবনী প্রথমে অাকারে ইঙ্গিতে এবং পরে সরাসরি বললো…
—- শুভ্রতা তুই কি বিয়েতে সুখি হয়েছিস?
—- কেনো অামাকে দেখে তোর কি অসুখী
মনে হচ্ছে ?
—- না মানে মারুফ ভাই জানতে
চেয়েছিলো।
—- অামি সুখি না হলে মারুফ ভাই কি
অামায় উদ্ধার করে নিয়ে যাবে ?
এ বিষয়ে অামি এখন কোনো কথাই
বলতে চাইনা রে। তুই অামায় ভুল
বুঝিসনা ।
—- জানিস মারুফ ভাই সত্যিই তোকে
ভীষণ ভালোবাসে,রে। খুউব কাঁদছে,
এই একমাসেই শুকিয়ে গেছে। তোকে
একটি চিঠি দিয়েছে, নিবি ?
—- নাহ্ ! একটা চিঠি অামার জীবনে
মুহুর্তের স্বপ্ন হয়ে অাবার ঘূর্ণিঝড় হয়ে
জীবনটাই ওলোট পালোট করে দিলো
তখন তোর মারুফ ভাই কোথায়
ছিলো – রে ? অামি কোনো চিঠি
নিবোনা। তাকে বলিস অামি
কোনোদিনই ক্ষমা করতে পারবো না।
অামার এক সাগর দুঃখ কষ্টের
বিনিময়ে তাকে অভিশাপ দিচ্ছি, সে
যেনো চিরসুখী হয়।
শুভ্রতার দু’চোখে অশ্রুধারা গড়িয়ে পরে । লাবনী ফিরে গিয়ে সব কথাই মারুফকে বলে। মারুফ ঠিক তখনি উপলব্ধি করে সত্যি অামি একজন কাপুরুষ । নাহলে শুভ্রতাকে কেনো সে ছিনিয়ে অানতে পারলোনা ?
যথাসময় শুভ্রতা অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়ালো শুভ্রতা সেই অারব অামিরাতের কোনো এক নামকরা শহরে। সেখানেই ডাঃ অারিফুজ্জামান বড়ো একটি হাসপাতালে
চাকুরি করে। শুভ্রতাকে নিতে অাসতে হয়নি। শুভ্রতাই চলে যাবে অারিফের কাছে, সে রকমই ব্যবস্হা করেছে অারিফ। শুভ্রতাকে বিমানে তুলে দেয়ার জন্য পরিবারের সবাই লঞ্চযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। যাওয়ার অাগে শুভ্রতা মাকে বলে….
—- মা, একটা অনুরোধ করবো রাখবে ?
একথাশুনে মা কেঁদে ফেললেন এবং বললেন….
—- কি যে বলিস মা, তুই এখন যা বলবি
অামি তোর কথা রাখবো।
কিন্তু শুভ্রতা কিছুই বলে না শুধু নিরবে দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ঝরোঝরো ধারায়। মা কি ভেবে উঠে গিয়ে তার ট্রাঙ্কে রাখা নীল খামে ভরা চিঠিটা এনে মেয়ের হাতে দেয়। শুভ্রতা অবাক চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে জোড়ে কাঁদতে থাকে। অাসলে মায়েরা এমনই হয়, মুখ দেখেই মনের কথা বলে দিতে পারে। শুভ্রতা চিঠিটা নিয়ে ওর কক্ষে চলে যায় তারপর চিঠিখানা খুলে দেখে গোলাপটি শুকিয়ে গেছে অার ওর সুরভীও অনেক পরিবর্তন হয়েছে, ঠিক শুভ্রতার মতোই। চিঠিখানা চোখের সামনে মেলে ধরতেই মারুফের মুখটি ভেসে ওঠে সমস্ত চিঠি জুড়েে। সেই শান্ত সৌম্য চেহারা,হাসি হাসি মুখ, চোখের তারায় উপচে পড়া প্রেম ভালোবাসা।যা অার কোনোদিন শুভ্রতা কোথাও খুঁজে পাবেনা, নিশ্চিত! চিঠিটা অার একবার ভালো করে পরম নিশ্চিন্তে পড়ে নেয় শুভ্রতা… অামার শুভ্রতা…….. (চলবে)