Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | শিক্ষার্থীরা এনজিও’র পেছনে : উখিয়ার শিক্ষাঙ্গনের অচলাবস্থা

শিক্ষার্থীরা এনজিও’র পেছনে : উখিয়ার শিক্ষাঙ্গনের অচলাবস্থা

rohinga-620x330

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : মিয়ানমার সেনা নির্যাতনে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১০লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রায় শতাধিক এনজিও বিভিন্ন ক্যাম্পে কাজ করছে। এনজিওরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করার জন্য শিক্ষিত বেকার যুবক/যুবতিদের সাময়িক চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করায় উখিয়া-টেকনাফের স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীরা চাকুরী প্রলোভনে পড়ে এনজিও পেছনে ছুটছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী চাকুরীও পেয়ে গেছে। তবে প্রভাব পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টান গুলোতে। শিক্ষা প্রতিষ্টান সংশ্লিষ্টদের দাবী বর্তমানে তাদের প্রতিষ্টানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার আশংখাজনক ভাবে কমে গেছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকালীণ সময়ে বেতন ভাতার নামে নগদ হাতে পাওয়ার কারনে ওইসব চাকুরীজীবি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন থেকে ছিটকে পড়ার আশংখা রয়েছে বলে শিক্ষানুরাগীদের ব্যক্তিবর্গের অভিমত।

উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, ময়নারঘোনা, জামতলি, শফিউল্লাহ কাটা ও তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে জানা যায়, ব্রাক, মুক্তি,এমএসএফ হল্যান্ড,এসিএফ, অক্সফার্ম, কারিতাস, ইফসা, হেলপ, পাল্স, কোস্টট্রাস্ট, টায়, টিকে, ইসলামিক রিলিভ, ফয়েজজুল্লাহ ফাউন্ডেশন, রেড ক্রিসেন্ট, ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর, ডাব্লিউ এফপি, আইওএম, হেন্ডিক্যাপ, ফ্রেন্ডশীপ, কনসান ওয়াল্ড ওয়াইট, হেলপিস, কোডেক, শেড, পিএইচসি, সিজেডএম, ঘরণি, নোঙ্র, ইসলামিক মিশন, গণস্বাস্থ্য, হোপ ফাউন্ডেশন, জাগরণি ফাউন্ডেশন, সেইভ দ্যা সিলড্রেনসহ প্রায় শতাধিক এনজিও রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গার পরিধি বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব এনজিও গুলো নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করায় স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা চাকুরীর জন্য মরিয়া উঠেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫হাজারের অধিক শিক্ষার্থী চাকুরী নিয়ে ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছে বলে এনজিওদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

শুক্রবার কুতুপালং ক্যাম্প ঘুরে কয়েকজন চাকুরীজীবি শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা হয়। তারা জানান, সাময়িক চুক্তি ভিত্তিক চাকুরী করে কিছু টাকা পেলে ক্ষতি কি? লেখাপড়ারতো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। উখিয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী শাহ আলম জানান, সে মাত্র এসএসসি পাশ করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছে। চাকুরীর কারণে টেস্ট পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে পারেনি। একই কলেজের এইচএসসি ১ বর্ষের ছাত্র শরফুদ্দিন জানান, চাকুরী পেয়ে প্রতিমাসের শেষে বেতন পেলে খুব ভাল লাগে। পড়া লেখার দিকে আর মন এগুয়না। ব্রাকে কর্মরত উখিয়া মহিলা কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী খালেদা বেগমের পিতা মীর আহমদ জানান, তার মেয়েটা পড়ালেখায় খুবই মেধাবী ছিল। ইচ্ছা ছিল তাকে ডাক্তারী পড়াবো। কিন্তু চাকুরীর প্রলোভনে পড়ে সব শেষ হয়ে গেল। চাকুরী শেষে বাড়ীতে এসে বই খাতা মেলতে চায়না। ভোরে উঠে চাকুরীতে যাওয়ার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে উঠে। কুতুপালং ক্যাম্পে অক্সফার্মে চাকুরীরত উখিয়া বিশ^বিদ্যালয় কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রহমত উল্লাহ পিতা নুর আহমদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে কলেজ পড়–য়া ছেলে নিয়ে নিজেকে গর্ববোধ করতো। কারণ তার ছেলে একদিকে যেমন মেধাবী ছিল অন্যদিকে কোন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত ছিলনা। কিন্তু চাকুরী পাওয়ার পর ছেলেটি চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। পড়ালেখাতো দুরের কথা বাড়ীতে কিছুক্ষণের জন্যও থাকতে চায়না। কখন ক্যাম্পে চলে যাবে এনিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এভাবে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সাথে কথা বলে তাদের হা হুতাশ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। অনেকেই বলছেন চুক্তি ভিত্তিক এসব চাকুরী চলে গেলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ন্ত্রণে রাখা অভিভাবকদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। এসব তথ্যের যুক্ত ভিত্তিক সত্যতা স্বীকার করে উখিয়া বঙ্গমাতা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ২১ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত এনজিওদের মাসিক সমন্বয় সভায় দুঃখ করে বলেন, চলমান এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর অধিকাংশ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি। তিনি খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছেন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পে চাকুরী নিয়েছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থায়। সমন্বয় সভায় তিনি তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন এনজিওদের কারনে উখিয়ার শিক্ষাঙ্গনে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। গুটা শিক্ষার পরিবেশ যেভাবে ব্যাহত হয়েছে তা পুর্বের অবস্থায় ফিরে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। এ প্রসংগে এনজিও সংস্থা ব্রাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আলী আজমের কাছে জানতে চাওয়া হলে কলেজ পড়–য়া ছাত্র/ছাত্রীদের কেন চাকুরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ? তদোত্তরে চাকুরীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় কোন প্রার্থী ছাত্র/ছাত্রী বলে স্বীকার করেনি। সবাই বেকার দেখিয়ে অনুনয়, বিনয় করে চাকুরী নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!